স্টাফ রিপোর্টার : রমজানের সপ্তাহখানেক বাকি থাকতেই বেশি মুনাফার লোভে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে চলমান লকডাউনের প্রভাবে ভোক্তার পকেটে ফাঁকা থাকলেও মুনাফাখোররা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েই চলেছে। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়ার পরও বেড়ে চলছে ভোগ্যপণ্যের দাম। ইতিমধ্যে ৩০ টাকায় নেমে আসা পেঁয়াজের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। আর রমজানে এই পেঁয়াজের চাহিদা আরো বাড়বে। ফলে দাম বাড়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। কিন্তু কারসাজি করে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ভোগ্যপণ্য বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভোগ্যপণ্যের দেশের বড় পাইকারী বাজারগুলোর মধ্যে ঢাকার মৌলভী বাজার, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এবং নারায়ণগঞ্জ বন্দরে কারসাজি করে দ্রব্যমূল্য বাড়াতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র রয়েছে। তাছাড়া ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক পর্যায়েও বড় ধরনের কারসাজির
কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। যদিও ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ গঠন এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকেও এবার বাজার মনিটরিংয়ে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি সংগঠনটির পক্ষ থেকে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বরং মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে কারসাজি করে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
সূত্র জানায়, রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে ভর্তুকি মূল্যে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টিসিবি প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বিক্রি করবে। আর চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আবারো শুরু করা হচ্ছে খোলা বাজারে ওএমএস কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে ১০ কেজি চাল বিক্রি কার্যক্রম। চুরি ঠেকাতে এবার শুধু কার্ডধারীদের মধ্যে ওসব চাল বিতরণ করা হবে। তাছাড়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর মাধ্যমেও ১০ টাকার চাল বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি নিয়মিত বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার, ভেজাল খাবার বিক্রি বন্ধে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর মাঠে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা প্রমাণ হলে গ্রেফতার ও জেল জরিমানা করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত বাজার তদারকি করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। কারসাজি করে দাম বাড়ানোর কৌশল নেয়া হলে অপরাধী ব্যবসায়ীকে এবার শাস্তি পেতে হবে। রোজা সামনে রেখে আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্য সঠিক সময়ে দেশে নিয়ে আসতে ইইতিমধ্যে ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র (এলসি) খুলছে। সামনে আরো এলসি খোলা হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সব সময় ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারকরা বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে। তারপরও যদি কোনো অসাধু চক্র কারসাজি করে অধিক মুনাফার লোভে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় তাহলে তাকে রেহাই দেয়া হবে না। এবার কঠিন শাস্তি পেতেই হবে। রমজান মাস সামনে রেখে ৬টি পণ্যের আমদানি বাড়ানো হয়েছে। রোজায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় এমন ৬টি পণ্য হচ্ছে- ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুর। রমজানে যাতে এ ধরনের পণ্যসামগ্রীর কোনো সঙ্কট তৈরি না হয় ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীদের আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনের তথ্য মতে, রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ২.৫ থেকে ৩ লাখ টন, চিনি ৩ লাখ টন, ছোলা ৮০-৯০ হাজার টন, খেজুর ১৮ হাজার টন এবং পেঁয়াজ ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টন। তাছাড়া ৫০-৬০ হাজার টন মসুর ডালের চাহিদা তৈরি হয়। করোনা ভাইরাসের কারণে ইতিমধ্যে ওসব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তাছাড়া বাজারে বর্তমান প্রতিকেজি মোটা চাল ৪৫-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে সরু নাজির ও মিনিকেট খ্যাত চাল ৬০-৬৮ এবং মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৫২-৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতি কেজি পেঁয়াজ জাত ও মানভেদে ৫০-৬০, চিনি ৬৫-৭০, ভোজ্যতেল প্রতি লিটার ৯৩-৯৫, ছোলা ৭৫-৮৫, মসুর ডাল ৯০-১৩০ ও খেজুর ৩৫০-২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শুধু ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। তাছাড়া মাছ ও মাংসের দামও চড়া। সবজির দাম না বাড়লেও আর কমছে না।
অন্যদিকে রমজান ঘিরে ভোগ্যপণ্যের বাজার প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব মোঃ জাফর উদ্দীন জানান, রোজায় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। এখন পর্যন্ত রোজায় ব্যবহার হয় এমন সব পণ্যের কোনো সঙ্কট দেশে নেই। তাছাড়া ওই সময়ের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে আমদানি বাড়ানোসহ যা করণীয় সরকারের পক্ষ থেকে সব করা হবে। পাশাপাশি এবার সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা টিসিবির কার্যক্রম আরো বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাজারের ওপর নজর রাখবেন। যে কোন প্রকার পণ্যে মূল্যের কারসাজি অথবা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ভাবছে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল। ইতিমধ্যে রমজানে চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে পণ্যের আমদানি ও মজুদের মধ্যে সমন্বয় রাখতে ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানান, রমজানের চাহিদা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য টিসিবি সারাবছর প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বিক্রি করবে। ফলে বাজারে কোনো পণ্যের সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা নেই।