খুলনাঞ্চলে চিংড়ি রপ্তানি কমেছে

খুলনাঞ্চলে চিংড়ি রপ্তানি কমেছেখুলনাঞ্চলে চিংড়ি রপ্তানি কমেছে

বি এম রাকিব হাসান: খুলনাঞ্চলে চিংড়ি ও হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমেছে। এর মধ্যে গলদা চিংড়ির উৎপাদন ও রপ্তানি কমেছে সবচেয়ে বেশি। তবে একই সময় মাছের অপ্রচলিত খাত কাঁকড়া ও চিংড়ির খোসা রপ্তানি বেড়েছে।
খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) খুলনাঞ্চল থেকে গলদা চিংড়ি রপ্তানি হয় ১৩৩১.০৭ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ছিল ১৩৯ কোটি টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে একই সময় গলদা রপ্তানি হয়েছে ১১২৩ মেট্রিক টন। যা আগের অর্থবছরের থেকে ২০৮ মেট্রিক টন কম। এদিকে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে ৪১৬.২০ মেট্রিক টন।

খুলনাঞ্চলে চিংড়ি রপ্তানি কমেছে

 

যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৪ কোটি টাকা। চিংড়ির খোসা রপ্তানি হয়েছে ৩০৬ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। রপ্তানিকারকরা বলছেন, মাছের অপ্রচলিত খাতে ক্রমেই সম্ভাবনা বাড়ছে।
জানা যায়, দেশের উপকূলীয় জেলার প্রায় দুই লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতিবছর চিংড়ি চাষ হয়। চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। পরপর কয়েক বছর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম না পাওয়া ও গলদা চাষে লোকসানের কারণে চাষিরা আগ্রহ হারিয়েছে। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে অনেক চাষি এ বছর গলদার বদলে সাদা মাছ চাষ করেছে।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) মতে, চাহিদা অনুযায়ী বর্তমানে চিংড়ি রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। একদিকে চাষিদের অনাগ্রহে উৎপাদন কমে গেছে, ব্যবস’াপনা ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া ও বিদেশে ভেনামি চিংড়ির বাজার দখলের কারণে রপ্তানি কমছে। জানা যায়, চিংড়ির অভাবে কোম্পানিগুলো তাদের সামর্থের ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারে না। ফলে বৈদ্যুতিক ব্যয়, ব্যাংক সুদ ও কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে তারা হিমশিম খাচ্ছে।

খুলনাঞ্চলে চিংড়ি রপ্তানি কমেছে

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর এলাকার চাষি জিতেন্দ্রনাথ মৈত্র জানান, ‘গত বছর মৌসুমের শুরুতে চিংড়ি ঘেরে রেণু পোনা ছেড়ে ভাইরাসের কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এছাড়া বিক্রির সময় এলেই বাজার পড়ে যায়। গলদা চাষে খাবার বেশি লাগে, তাই খরচও বেশি। কিন’ বিক্রি করে উৎপাদন খরচ না পাওয়ায় অনেকে গলদা চাষ থেকে সরে এসেছে।’
এদিকে চিংড়ি রপ্তানিকারকদের মতে, বিদেশে চিংড়ির বাজার দখল করে আছে ভেনামি জাতের হাইব্রিড চিংড়ি। ততটা সুস্বাদু না হলেও পর্যাপ্ত উৎপাদন ও সরবরাহের কারণে সহজেই তা বাজার দখল করেছে।
বিএফএফইএ’র পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে আমাদের দেশে প্রতি হেক্টর জমিতে বাগদা ৩৫০-৪৫০ কেজি ও গলদা ৪৫০-৫০০ কেজির মতো উৎপাদন হয়। সেখানে ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে ভেনামি চিংড়ি চাষে গড়ে চাষে ১১০০-১২০০ কেজি উৎপাদন করছে।

খুলনাঞ্চলে চিংড়ি রপ্তানি কমেছে

চিংড়ির বাজার ব্যবস’াপনাবিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’র কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাধা ঘেরের অবকাঠামো সঙ্কট। অনেক ঘেরেই পর্যাপ্ত পানি থাকে না। চিংড়ি পোনার গুণগত মানও একটা বড় সমস্যা। এছাড়া ব্যবস’াপনা ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে বাইরের দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে চিংড়ি রপ্তানি কমছে।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post