মেহেরপুরের গৃহবধূ বিলকিস ছাগল পালনে সংসারের স্বচ্ছলতা এনেছেন

 

ছাগল পালনে সাবলম্বি

মেহেরপুর: মাঠে চরছে বিলকিস খাতুনের ছাগলের পাল।
কেবিডিনিউ :  প্রত্যেক স্ত্রী তার স্বামীর অর্ধাঙ্গনী। তাই শুধু চাকরী করে নয়। ইচ্ছা থাকলে সংসারের উন্নতিতে নানাভাবে স্বামীকে সহযোগিতা করা যায়। মেহেরপুরের পল্লীর এক গৃহবধূ বিলকিস খাতুন। তিনি বিশ্বাস করেন যে কোনভাবে স্বামীর সংসারে সহযোগিতা করা যায়। ছাগল পালন করে তিনি স্বামী-সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়েছেন। জায়গা কিনে পাকা ঘর করেছেন। সন্তানদের লেখাপাড়া করাচ্ছেন। এখন আর অভাবের সাথে তার স্বামী আবুল বাশারকে সংগ্রাম করতে হয়না। গৃহবধূ বিলকিস এখন ওই অঞ্চলের অসহায় স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা মেয়েদের বাঁচার প্রেরণনা।

ছাগল পালনে সাবলম্বি

মেহেরপুর জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম শোলমারী বাঙালপাড়া। ওই গ্রামের মেয়ে বিলকিস খাতুন (৩০)। তার পিতার নাম গরীববুল্লাহ ওরফে গবরা। ২ ভাই আর ২ বোনের মধ্যে মেঝ (২য়) বিলকিস খাতুন। ১৫/১৬ বছর আগে বাবা-মা তার বিয়ে দেন সদর উপজেলার হিতিমপাড়া গ্রামের আবুল বাশারের সাথে। আবুল বাশার পেশায় একজন রাজ মিস্ত্রি। সংসারে অনেক ভাই-বোন। কিন’ পিতার ভিটা-বাড়ি খুবই সীমিত। তাই সেখানে বাস করা খুবই কষ্টকর ছিল। শেষে স্বামী-স্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন অন্যত্র বসবাস করে জমি কিনে নিজেদের বাড়ি-ঘর করার। অনেক ভেবে বিলকিস স্বামীকে নিয়ে যান বাবার বাড়ি শোলমারী বাঙালপাড়ায়। সেখানে বাবার সম্পত্তিতে কুড়ে ঘর করে থাকেন তারা। ইতি মধ্যে তাদের সংসারে আসে দুই কন্যা সন্তান। অভাবের সংসার তাদের। স্বামীর একার আয়ে ৪টি মানুষের মুখে খাবার যোগানো কষ্টকর। তার উপর জমি কিনে ঘর করা স্বামীর একার পক্ষে অসম্ভব।
বিলবিস সিদ্ধান্ত নেন কিভাবে স্বামীকে সহযোগিতা করা যায়। তিনি তার মায়ের দেয়া একটি ছাগল নিয়ে পালতে শুরু করেন। ওই ছাগল তার জীবনে আশির্বাদ হয়ে দেখা দেয়। একটা থেকে দু’টি, দু’টি থেকে চারটি। এভাবে এখন তার ৬২ টি ছাগল। এর আগেও তিনি প্রয়োজনের তাগিদে কয়েকবার ছাগল বিক্রি করে টাকা সংসারে দিয়েছেন। সামনে ঈদে তিনি তার খামার থেকে কমপক্ষে আরো ২ লাখ টাকার ছাগল বিক্রি করবেন।

ছাগল পালনে সাবলম্বি

শোলমারী গ্রামের বাঙালপাড়া মাঠে ছাগল চরানোর সময় কথা হয় বিলকিস খাতুনের সাথে। তিনি জানান, হাই স্কুলে পড়তে পড়তে বিয়ে হয়ে যায় তার। লেখা পড়া শিখে চাকরি করতে পারেনি তাই কি হয়েছে? ছাগল পালনের মাধ্যমে স্বামীর একার আয়ের সংসারে সহযোগিতা করতে পেরে তিনি খুবই খুশি। এতগুলো ছাগল দেখাশুনা, খাবার দেওযা ও চিকিৎসার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, সমস্যা হয়না। ২মেয়ে টগর (১৩) আর সাগরিকা (১০) স্কুলে আর স্বামী আবুল বাশার অন্যের কাজে (লেবার খাটতে) যাবার পর সংসারের কাজ সেরে বেলা ১০ টার পর ছাগলগুলো নিয়ে যান পাড়ার মাঠে। ফাঁকা যায়গায় ছাগল চরিয়ে বিকেলে বাড়ি নিয়ে আসেন। এ কাজে তার চাচাত ভাই খাইরুল ইসলামও তাকে সাহায্য করেন। এতে ছাগলের জন্য বাড়তি খাবার কিনতে হয়না। এছাড়া গ্রামের পশু ডাক্তার বাবু তার ছাগলের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
স্বামী আবুল বাশার বলেন, বিয়ের পর নিজের গ্রামে ঘর-বাড়ির সমস্যার কারণে শ্বশুর বাড়ি কুড়ে ঘর করে থাকি। বর্তমানে শোলমারী গ্রামের বাঙালপাড়ায় ৪ কাঠা জমি কিনে পাকা ঘর তুলেছি। এ কাজে স্ত্রী বিলকিস খাতুন তাকে বড় ধরনের সহযোগিতা করেছে।
গ্রামের বাবু ডাক্তার বলেন, বিলকিস খাতুনের এ উদ্যোগ এলাকার জন্য অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং তার দেখাদেখি এলাকার অনেকে ছাগল পালন করতে শুরু করেছে।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post