বেপরোয়া চালক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর রক্তে রঞ্জিত হল রাজপথ

বেপরোয়া চালক,

বিশেষ প্রতিনিধি :    চলমান ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ’-এর মধ্যে জেব্রা ক্রসিংয়েই বাসের চাপায় ঘটনাস্থালেই ঝরে গেলো আবরার আহমেদ চৌধুরী নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর প্রাণ। রাজধানীর রাজপথ রঞ্জিত হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সম্ভাবনাময় তরুণ শিক্ষার্থীর রক্তে। প্রতিদিন রাজপথে ঝরছে অসংখ্য আদম সন্তানের রক্ত। ইতিপূর্বে এ ধরনের ঘটনায় বড় ধরনের ছাত্র আন্দোলন হলেও সমস্যা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। যদিও আবরার নিয়ম মেনেই পথচারী পারাপারের জন্য নির্ধারিত স্থান জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন কিন্তু বেপরোয়া বাসচালক তাকে জেব্রা ক্রসিংয়ের উপরেই চাপা দেয়। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সকাল ৭টায় রাজধানী ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্ক সংলগ্ন প্রগতি সরণিতে। নিহত আবরার আহমেদ চৌধুরী বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আবরারের বন্ধুরা জানিয়েছেন, অন্য একটি বাসের সাথে প্রতিযোগিতা করতে গিয়েই বাসটি আবরারকে ধাক্কা দেয়। তিনি দুটি বাসের মাঝখানে পড়ে যান। পরে সুপ্রভাত বাসের নিচে চাপা পড়েন।

আবরার নিয়ম মেনে নির্ধারিত জায়গা দিয়ে রাস্তা পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলেন।

ঘটনার পর একজন পথচারী বলেন, ছেলেটি নিয়ম মেনেই রাস্তা পার হচ্ছিল। কিন্তু সুপ্রভাত বাসের চালক অন্য একটি বাসের সাথে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপাররত আবরারকে প্রথমে ধাক্কা ও পরে চাপা দেয়। ঐ প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বাসটি আবরারকে খানিকটা টেনেও নিয়ে যায়।

আবরার নিহত হওয়ার ঘটনায় একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কুড়িল থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত ৬টি জায়গায় অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তাদের সাথে বেসরকারি নর্থ সাউথ ও ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় সাধারণ মানুষ সড়কে অবস্থান নেয়। সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় ঐ এলাকায় যান চলাচল।

এদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধ তুলে নেয়ার অনুরোধ জানালেও তাতে সাড়া দেননি অবরোধকারীরা।

মেয়র আতিকুল বলেন, দেশের প্রচলিত আইনে বাসচালকের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা হবে। সুপ্রভাত পরিবহণের কোনো বাস ঐ রুটে চলতে দেয়া হবে না। নিহত আবরারের নামে সেখানে তিন-চার মাসের মধ্যে রাস্তা পারাপারের জন্য একটি পদচারী-সেতু নির্মাণ করে দেয়া হবে।

মেয়র আরও বলেন, খুব শিগগির ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাজধানীর বাস চলাচল একটি পদ্ধতির আওতায় আনা হবে। অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সব ব্যবস্থা নেব। আপনারা অবরোধ তুলে নেন।’ তবে অবরোধকারীরা মেয়রের আহ্বানে সাড়া দেননি। তারা প্রশ্ন রাখেন, জাবালে নূর পরিবহণ এখনো চলছে। এখনো প্রতিদিন সড়কে প্রাণহানি ঘটছে। অবরোধকারীদের এমন মন্তব্যের পর মেয়র ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।

ছাত্ররা আরো বলেন, এসব আশ্বাসে তারা বিশ্বাস করেন না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে গণপরিবহণের চালকরা। দুর্ঘটনার পর সহজেই ছাড় পেয়ে যাওয়ায় সড়কে নির্মমভাবে প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আর একের পর এক হাত-পা বিচ্ছিন্নসহ মারাত্মক আহতের ঘটনা এখন নিত্যদিনেই ঘটছে। দুই বাসের পাল্লাপালি্লতে হাত হারিয়ে মারা যাওয়া রাজীবের মৃত্যুশোক কাটতে না কাটতেই এবার রাজধানীতে বাসের চাপায় পা বিচ্ছিন্ন হয় রোজিনা নামে এক তরুণীর। এমন ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে।

গত ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন বাংলাদেশে কার্যকর সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট ২০১৮ পর্যন্ত সংঘটিত ছাত্র আন্দোলন রূপ নেয় গণবিক্ষোভে। ঐ সময় সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন না হওয়ায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালকেরা অদক্ষ, মাদকাসক্ত ও বেপরোয়া। আর বাস-মিনিবাসের বেশির ভাগই চলাচলের উপযোগিতাহীন (ফিটনেসবিহীন)। এরপরও রাজধানীতে গণপরিবহণ ব্যবস্থায় চলছে চরম অসুস্থ প্রতিযোগিতা। সড়কে চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলে। এজন্য ট্টাফিক পুলিশকে বিষয়টি মনিটরিং করে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post