বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: আসন্ন কোরবানীতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের চামড়া বাজারের নিয়ন্ত্রন নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সীমান্তের অবৈধ ঘাটগুলো ব্যবহারের জন্য বিশেষ চক্রের সাথে চলছে দেন দরবার। প্রতি বছর এ মৌসুমে চামড়া পাচারে সক্রিয় হয়ে ওঠে মৌসুমী চক্রটি। তবে চামড়া পাচার রোধে ব্যবস’া নেবে বিজিবি ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। ব্যাংক ঋণের অপ্রতুলতা, পুজি সংকট, ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রির টাকা সময় মত না পাওয়া, রাজনৈতিক অসি’রতাসহ নানা কারণে প্রতিবছর চামড়া পাচারে সুযোগটি কাজে লাগায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
সূত্রমতে, ভারতীয় কতিপয় অসাধু পুজিপতিরা হুন্ডির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা খুলনাঞ্চলে বিনিয়োগ করছে। এ কারনে এবারের কোরবানির চামড়া খুলনাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও টেনারি মালিকদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভারতীয় ফড়িয়াদের চক্রান্ত এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্নসহ নানা কারণে খুলনাঞ্চলের অর্ধশতাধিক চামড়া প্রতিষ্ঠান এখন মাত্র ৮টিতে নেমে এসেছে। সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে সীমান্তে নজরদারি ও গোয়েন্দা সংস’ার মাধ্যমে কালোবাজরিদের চিহ্নিত করে ব্যবস’া নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে লবনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
এদিকে, কোরবানী আসন্ন। কিন’ মুখে হাসি নেই এ অঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীদের। তারা বাকিতে কেনাবেচা করেন। আর এ বাকি টাকা মহাজনদের কাছ থেকে আদায় করতে হিমশিম খেতে হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা ইনকিলাবকে জানান, বিগত রোজার ঈদের পর থেকে চামড়ার দাম ওঠা নামা করছে। ঈদের জন্য এখনও চামড়ার প্রতি ফুট মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। জনৈক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো: সেলিম ইনকিলাবকে বলেন, গত ঈদে তিনি ঢাকার এক ব্যবসায়ীকে প্রায় দেড় লাখ টাকার চামড়া সরবরাহ করেছিলেন। মহাজন তাকে মাত্র ৮১ হাজার টাকা দিয়েছেন। একইভাবে জুলফিকার আলী, আব্দুস সালাম, আমিরুল ইসলাম, ইমদাদ হোসেনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের চিত্র একই রকম। উপরন’ মাহজনরা জোরপূর্বক এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে রেখেছেন যাতে তারা কোনো আইনগত সাহায্য নিতে না পারেন। খুলনার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতি বছর কোরবানীর ঈদের সময় পশুর চামড়া কেনার জন্য কোন ঋনের সুবিধা পায় না। প্রতি বছরই পুজি সংকট দেখা দেয়। এবার এ সংকট তীব্র আকারে ধারন করেছে। আর এ সুযোগে পুজি বিনিয়োগ করে ফেলেছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। কারন ভারতের বাজারে প্রায় দ্বিগুন দামে বাংলাদেশের চামড়া বিক্রি হয়। তাই ভারতীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি চোরাকারবারীরাও চামড়া ব্যবসায় পুজি বিনিয়োগ করেন দ্বিগুন লাভের আশায়। সীমান্ত এলাকাগুলোর চামড়া ক্রয়ের জন্য ভারতীয় টাকায় সয়লাব হয়ে গেছে সমগ্র খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট। উদ্দেশ্য চামড়া ভারতে নেয়া। আর এ জন্য প্রান্তিক অবস’া থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ীরাও অগ্রিম টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে কোরবানির চামড়ার বাজার খুলনাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও টেনারি মালিকদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্রমতে, ভারতীয় ফড়িয়া ও দালালরা বৈধ অবৈধ পথে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে আসতে শুরু করেছে। এ দেশীয় কালোবাজারী ও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা তাদেরকে শেল্টার দিচ্ছে। খুলনা বড়বাজার কেন্দ্রীক হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ভারতীয় ফড়িয়াদের সকল প্রকার সহযোগীতা করে থাকে। দেশে- বিদেশে চামড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অমিত সম্ভাবনা রয়েছে শিল্পটির। চামড়া শিল্পেরসাথে জড়িত লাখ লাখ পরিবার। পরিকল্পিতভাবে চামড়া ক্রয় বিপনন প্রক্রিয়াজাতকরন ও রপ্তানির প্রতি বিশেষ নজর দেয়ার অভিমত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের। ঈদুল আযাহ উপলক্ষেই প্রতি বছর চামড়ার সবচেয়ে বড় যোগান সৃষ্টি হয়। এই মহেন্দ্রক্ষনকে সামনে রেখেই প্রতি বছর কালোবাজারীরা তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থের ফাঁদ পাতে। আর সেই ফাদেই পা দিয়ে থাকেন প্রান্তিক চামড়া ব্যবসায়ীরা। দেশীয় এই সম্পদকে দেশের কাজে লাগানোর জন্য সুশীল সমাজ দাবি জানিয়েছেন।
দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ আবুল হোসেন বলেন, সরকারকে পাচাররোধে বিশেষ অধ্যাদেশ জারি ও বর্তমানে যে আইন রয়েছে তার সঠিক প্রয়োগ এখন সময়ের দাবিতে পরিনত হয়েছে। অন্যথায় চামড়া সম্পদ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিশিষ্ট আইনজীবী এ্যাড: সাইদুর রহমান মোল্লা বলেন, সীমান্ত এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ন মোকামে টাস্কফোর্সের অভিযানের মাধ্যমে ব্যবস’া নিতে হবে। গোয়েন্দা সংস’ার মাধ্যমে ভারতীয় ফড়িয়াদের চিহ্নিত করে তাদের এবং দেশের হুন্ডি ব্যবসায়ী ও দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস’া নিতে হবে।