খুলনা ব্যুরো : খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় মৌসুমের শেষ দিকে বাগদা চিংড়িতে ব্যাপকহারে ভাইরাস লেগেছে। চিড়িং ‘গ্রেড’ হওয়ার পর হঠাৎ করে এ ধরনের ভাইরাসে মাছ মরে যাওয়ায় চাষিদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। যদিও মৎস্য কর্মকর্তারা ব্যাপক হারে ভাইরাসে আক্রমণের কথা স্বীকার করছেন না। খুলনার পাইকগাছার বেতবুনিয়া গ্রামের আবুল বাশার বাবুল সরদার বলেন, বাগদা চিংড়িতে ভয়াবহ ভাইরাসের কারণে আমি সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছি। এক হাজার বিঘা ঘেরে এরই মধ্যে ৫০/৬০ ভাগ বাগদা চিংড়িতে ভাইরাস লেগেছে। খরচের টাকাও উঠবে না। আল্লাহর কাছে এখন কান্নাকাটি করছি যেন হারির টাকাটা পরিশোধ করতে পারি।
তিনি জানান, তার মতো অনেকের ঘেরে ভাইরাসের কারণে অধিকাংশ বাগদা চিংড়ি মরে গেছে। এ অবস্থায় এ খাতে ধার-দেনা করে তাদের বিনিয়োগের মোটা অংকের টাকা কিভাবে উঠাবেন তা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। জি এম রাসেল নামের এক ব্যক্তি জানান, কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলাকুওশাডাঙ্গা গ্রামের ৯টি হ্যাচারির মধ্যে ৮টিতেই এই বছরে দুইবার করে মাছ ছাড়ার পরও ভাইরাসজনিত কারণে মারা যাচ্ছে। কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, লাভের আশায় প্রতি বছরের মতো পুঁজি বিনিয়োগ করে চিংড়ি চাষ করার পর ভয়াবহ ভাইরাসের কারণে কয়রায় চাষিরা দিশাহারা। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। বাগেরহাট জেলার মংলার চিলা ইউনিয়নের সুন্দরতলা গ্রামের ঘের মালিক বিজন বৈদ্য বলেন, বিগত কয়েক বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য এবার অনেকেই বেশি করে বাগদার চাষ শুরু করেন। অনেকে বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবার কেউ মহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে ঘের করে বাগদার চাষ করেন। কোন কোন ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী অন্যের জমি লিজ নিয়েও বাগদা চাষ করেছেন। হঠাৎ করে মৌসুমের শেষে মংলা ও রামপালে ১০০ বাগদা চিংড়ি ঘেরের মধ্যে ৯৫টিতে ভাইরাস আক্রমণে লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে চিড়িং। এতে চাষিরা সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তিনি জানান, তার ২৫০ বিঘা ও ৩০০ বিঘার দু’টি ঘেরেই ভাইরাস লেগেছে। এর ফলে পোনা কেনার টাকা না ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। যে কোম্পানির বাগদার পোনা কিনেছিলেন তাতেই ভাইরাস ছিলো বলে সন্দেহ করছেন এ চাষি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি চাষের জন্য দেশের মধ্যে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার অবস্থান অন্যতম। ৮০’র দশক থেকে কৃষি অধ্যুষিত এ তিন জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয় লবণ পানির চিংড়ি চাষ। শুরুতেই উৎপাদন ও দাম ভাল পাওয়ায় মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এর চাষাবাদ। সোনার ধান, সোনালী আঁশ, সবুজ সবজি আর শস্যের পরিবর্তে দিগন্ত জোড়া মাঠ পরিণত হয় লবণ পানির বাগদার ঘেরে। চিংড়ির বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহতের পাশাপাশি আশঙ্কা দেখা দেয় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু ছাইদ বলেন, জেলায় ৩৬ হাজার ১শ’৫৯ হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ৩৬৩ টি বাগদা চিংড়ি ঘের রয়েছে।
খুলনা জেলা মৎস্য অফিসের জরিপ কর্মকর্তা বিধান চন্দ্র ম-ল বলেন, তাপামাত্রা কম বেশি হওয়া, পানির স্বল্পতা, ঘের তৈরির সময় সঠিক নিয়ম না মানার কারণে মাছে ভাইরাস লেগে থাকে। এ বছর ৫ ভাগ জমিতে ভাইরাস লেগেছে বলে দাবি তার।