সারা দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আরও আটজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কুমিল্লা, গাইবান্ধা, কুষ্টিয়া ও ঠাকুরগাঁও, রংপুর, জামালপুর ও লালমনিরহাটে পৃথক এই বন্দুকযুদ্ধ হয়।
এ নিয়ে বিভিন্ন জেলায় গত নয় দিনে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেন ৪৭ জন।
র্যাব ও পুলিশ জানায়, প্রতিটি ঘটনাস্থল থেকেই ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য, পিস্তলসহ দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।
কুমিল্লা: মাদকবিরোধী অভিযানে মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে কুমিল্লায় নুরুল ইসলাম ওরফে ইছা(৩৫) নামের আরও এক ব্যক্তি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় কুমিল্লার গোমতী নদীর টিক্কারসেতু এলাকার বাঁধের ওপরে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, নুরুল ইসলাম জেলার অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের একজন। তাঁর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে।
এ নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে কুমিল্লায় তিনজন নিহত হলেন। গত সোমবার রাতে একই উপজেলার অরণ্যপুর গ্রামে বন্দুকযুদ্ধে পেয়ার মিয়া ও শরীফ নামের দুই মাদক মামলার আসামি একই কায়দায় নিহত হন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে। পুলিশ নিশ্চিত না হয়ে কোনো মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে না।
রংপুর: পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শাহীন মিয়া (৪৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রাত আড়াইটার দিকে নগরের হাজিরহাট এলাকায় জাফরগঞ্জ সেতুর কাছে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহীন রংপুর সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মনোহর শুকানচৌকি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। থানায় একাধিক মামলায় তিনি ‘শাহীন ডাকাত’ নামে পরিচিত ছিলেন।
রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সাইফুর রহমান বলেন, শাহীনের নামে গঙ্গাচড়া ও কোতোয়ালি থানায় মাদক ও সড়ক ডাকাতির ১১টি মামলা রয়েছে।
গাইবান্ধা: র্যাব-১৩, গাইবান্ধার ক্যাম্প সূত্র জানায়, পলাশবাড়ী উপজেলার বিশ্রামগাতি এলাকায় মাদক কেনাবেচার হচ্ছে—এমন তথ্য জানতে পেয়ে র্যাবের একটি দল গতকাল রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে অভিযানে যায়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ী রাজু মিয়া ও তাঁর সহযোগীরা র্যাবের ওপর গুলি চালায়। র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলিতে রাজু মিয়া ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত হয় র্যাবের দুই সদস্য।
পলাশবাড়ী থানার ওসি মাহমুদুল আলম কেবিডিনিউজকে বলেন, নিহত রাজুর বিরুদ্ধে পলাশবাড়ী থানায় প্রায় ৩০টি মাদকদ্রব্য আইনে মামলা রয়েছে।
কুষ্টিয়া: কুমারখালী ও ভেড়ামারা উপজেলায় মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন নিহত হন। নিহত দুজন হলেন কুমারখালী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলঙ্গীপাড়ার ফটিক ওরফে গাফ্ফার (৩৮) ও ভেড়ামারা পৌরসভার নওদাপাড়ার এলাকার লিটন হোসেন (৪২)। লাশ দুটি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল খালেক ও ভেড়ামারা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, নিহত দুজনই মাদক ব্যবসায়ী। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও: গতকাল রাতে বনবাড়ি এলাকায় ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ সড়কে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আকতাবুল (৩৮) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। তাঁর বাড়ি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পারুয়া গ্রামে। পুলিশের ভাষ্য, গত সোমবার রাতে পারুয়া গ্রাম থেকে আকতাবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে তাঁর সহযোগীরা গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই আকতাবুল নিহত হন। এ ঘটনায় বালিয়াডাঙ্গীর থানার ওসি এ বি এম সাজেদুল ইসলাম ও এসআই মো. খায়রুজ্জামান আহত হন।
পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ জানান, আকতাবুল চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর নামে পুলিশের ওপর হামলা, গরু চুরি ও মাদকের ১৯টি মামলা রয়েছে।
জামালপুর: সদর উপজেলার পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মোশারফ হোসেন (৪১) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে এই উপজেলার ছোনকান্দা বালুরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে জামালপুর সদর থানায় ১৬টি মামলা রয়েছে।
লালমনিরহাট: সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের চর শিবেরকুটি ঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আন্তজেলা মাদক ব্যবসায়ী নূর আলম ওরফে এশার আলী (৩৫) নিহত হয়েছেন। এ সময় লালমনিরহাট সদর থানার এসআই আসাদুল হক ও কনস্টেবল আবুল কালাম আজাদ আহত হয়েছেন।