Kbdnews ডেস্ক :টাকার বিপরীতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মার্কিন মুদ্রা ডলার। বিশ্বব্যাপী ডলারের দাম পড়তির দিকে হলেও বাংলাদেশ বিপরীত অবস্থা। কোনোভাবেই তা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপেও পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে না। বরং কম রফতানি এবং আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ডলারের চাহিদা বাড়ছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দামও। রোজা ও ঈদের সময় মানুষের বিদেশ যাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। সেজন্যও ডলারের চাহিদা বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, ডলার সঙ্কটের কারণে ব্যাংকগুলোর এলসি খুলতেও সমস্যা হচ্ছে। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে ডলার সঙ্কট এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকই এখন আমদানির জন্য বড় কোনো এলসি (ঋণপত্র) খুলে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। পাশাপাশি পুরনো এলসিগুলোর দায় পরিশোধের ক্ষেত্রেও অনেক ব্যাংক এখনো হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত কয়েক মাসে বাজারে প্রচুর ডলার ছেড়ে দাম ঠিক রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু গত ২/৩ মাসে ডলারের দাম ব্যাপক হারে বাড়ছে। এক বছর আগের চেয়ে এখন বেড়েছে প্রায় ৪ টাকা। আর গত এক মাসে বেড়েছে প্রায় এক টাকা। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার এখন ৮৩ টাকা ৭০ পয়সা বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের জানুয়ারিতে যা ছিল ৭৮ টাকা ৭০ পয়সা। তবে ব্যাংকগুলো ঘোষিত বিনিময় হার মানছে না। ফলে ব্যাংক থেকেই ডলার কিনতে গ্রাহকদের সাড়ে ৮৫ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। আর কার্ব মার্কেটে (খোলা বাজারে) ডলারের দাম আরো বেশি। সূত্র জানায়, ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক এডি (অথরাইজড ডিলার) ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গতবছরের শেষের দিকে ঘোষিত বিনিময় হার মেনে না চলায় ২৬ ব্যাংককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। বাজার নিয়ন্ত্রণের রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিনই ডলার ছাড়ছে। তবে তাতে খুব বেশি ফলাফল আসছে না। কারণ রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের আমদানি বেড়েছে। তাতে আমদানি ব্যয়ও বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে ডলারের বাজারে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, কয়েকটি ব্যাংক পরিকল্পিতভাবে ডলারের বাজার অস্থির করে রেখেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একটি অসাধু চক্র। যারা বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রফতানির আড়ালে ডলার পাচার করছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠী হুন্ডির মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের অর্থ পাচার করায় স্থানীয় বাজারে ডলারের সঙ্কট চলছে। ফলে টাকার বিপরীতে হু হু করে ডলারের দাম বেড়ে চলেছে। সূত্র আরো জানায়, ধীরগতিতে এগোচ্ছে দেশের রফতানি। তাছাড়া তার চেয়েও প্রবাসী আয়ে আরো খারাপ অবস্থা যাচ্ছিল। তবে গত কয়েক মাসে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরেছে। কিন্তু বাড়ছে আমদানি আয়। দেশে চালের সঙ্কট থাকায় আমদানি ব্যয় বেশি বেড়েছে। এর পাশাপাশি ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিও ব্যয় বাড়াচ্ছে। এমন অবস্থার কারণে মূলত ডলারের চাহিদা বাড়ছে। তবে দেশে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, এখন প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে বাড়তি অর্থ পাচ্ছে রফতানিকারকরা। তাতে তারা লাভবান হচ্ছেন। তবে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ তাদেরকে পণ্য বা যন্ত্রপাতির আমদানিতে বেশি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিস এ খান জানান, অনেক দিন থেকেই বাজারে ডলারের সঙ্কট চলছে। বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বাড়ছে। ফলে অনেক ব্যাংকই দেখে-শুনে এলসি খুলছে।