খুন হওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে ব্যাংক থেকে ২৯ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা সজল নন্দী। সেই খবর জানতে পারে তাঁর নবম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলের এক সহপাঠী। বয়স ১৫ বছর। ছেলের সেই বন্ধুর পরিকল্পনায় এক কিশোরসহ তিনজন মিলে ওই টাকার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তার বাসায় যায়। কিন্তু টাকা না পাওয়ার একপর্যায়ে তারা গলা কেটে হত্যা করে সজলকে।
বুধবার রাতে নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশে থানা-পুলিশের পাশাপাশি ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। চার দিনের মাথায় তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে সূত্রহীন (ক্লুলেস) এই মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছে পিবিআই। বৃহস্পতিবার বিকেলে পিবিআই আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানায়।
গ্রেপ্তার তিন কিশোরের মধ্যে একজনের বয়স ১৫ বছর। সে নগরের একটি স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্র। বাকি দুজন হলো ১৭ ও ১৯ বছর বয়সী। একজন এবার এসএসসি পাস করেছে। আরেকজন নগরের একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
গত রোববার সকাল সাড়ে নয়টায় নগরের বন্দর থানার দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর এলাকায় ব্যাংক কর্মকর্তা সজল নন্দীর (৪৮) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি রূপালী ব্যাংক সল্টগোলা ক্রসিং করপোরেট শাখার ক্যাশিয়ার ছিলেন। খুনের ঘটনায় তাঁর ভাই স্বপন নন্দী বাদী হয়ে বন্দর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন। নিহত ব্যক্তির একমাত্র ছেলে সৈকত নন্দী। সে নগরের একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু মা-বাবার সঙ্গে থাকত না। নগরের হামজারবাগ এলাকায় মামার বাসায় থেকে পড়াশোনা করত।
পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সদীপ কুমার দাশ কেবিডিনিউজকে বলেন, গ্রেপ্তার তিন কিশোর স্বীকার করেছে, ব্যাংক কর্মকর্তার ছেলে সৈকত নন্দীর বন্ধুসহ তারা তিনজন ঘটনার দিন বাসায় যান। তারা দরজায় ধাক্কা দেওয়ার পর ব্যাংক কর্মকর্তা দরজা খুলে দেন। প্রথমে তারা নিহত ব্যক্তির ছেলের সাইকেল কেনার কথা বলেন। একপর্যায়ে তারা বাসার ভেতর ২৯ লাখ টাকা খুঁজতে শুরু করে। এতে বাধা দেওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া ১৯ বছর বয়সী কিশোর ব্যাংক কর্মকর্তার মাথায় তালা দিয়ে আঘাত করেন। চিৎকার দিলে ছেলের বন্ধু সজল মুখ চেপে ধরে। বাকি দুজন গামছা দিয়ে পা বেঁধে ফেলে। পরে তারা পুরো বাসা তছনছ করে ২৯ লাখ টাকা খুঁজতে থাকে। কিন্তু টাকা না পেয়ে তারা ক্ষুব্ধ হয়। পরে ব্যাংক কর্মকর্তাকে রান্না ঘরে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরিটি পুকুরে ফেলে দেয়। সেটি জব্দ করা হয়েছে।