ধর্ষণের পর নির্মম হত্যার শিকার ৮ বছরের ফুটফুটে শরিফা

ধর্ষণের পর নির্মম হত্যার শিকার

নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইলের কালিয়া উপজেলার খাসিয়াল ইউনিয়নের শুড়িগাতি গ্রামের শিশু শরিফার মৃত্যুরহস্য ধামাচাপা দিতে অপরাধীর পক্ষ থেকে ২০ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন শরিফার মামা খসরুল ফকির।
তিনি জানান, শরিফার মৃত্যুর পর সরকারি ঐ কর্তকর্তা তাকে এবং শরিফার মাকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘তোমরা শরিফার মৃত্যু নিয়ে কোনো কিছু করো না। তোমরা যদি চাকরি চাও .

তাহলে তা দেয়া হবে। অথবা ২০ লাখ টাকা দেয়া হবে।’ খসরুল ফকির বলেন, ‘আমার ভাগি্ন শরিফার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে চাই। আমার ভাগি্নকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে একাধিকবার শরিফা তার মাকে মোবাইল ফোনে বলেছিল- মা আমি এখানে (সাজ্জাদ হোসেনের বাসায়) থাকতে পারছি না। আমার সমস্যা হচ্ছে। বাড়ি এসে তোমাকে সমস্যার কথা বলব।’

প্রাপ্ত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী থানার শুড়িগাতি গ্রামের টকু মোল্যার ৮ বছরের মেয়ে শরিফা ঢাকায় এক সরকারি কর্মকর্তার বাসায় কাজ করতো। সেখানে তাকে ধর্ষণ ও নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। এখন মৃত্যুরহস্য ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা ২০ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নড়াইল সদর হাসপাতালে শরিফার ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। এর আগে গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শরিফার মৃত্যু হয়। ঐদিন সোমবার রাত ২টার দিকে শরিফার লাশ নড়াগাতির শুড়িগাতি গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নড়াগাতির বড় মাদরাসা মাঠে শরিফার জানাজা শেষে তাকে কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে নড়াগাতি থানা পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে শিশু শরিফার নিম্নাঙ্গে কালো রক্ত জমাটবাঁধা দাগের চিহ্ন এবং পায়ুপথের অস্বাভিবকতা দেখা গেছে। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বেলায়েত হোসেন বলেন, লাশের সুরতহাল করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত তথ্য জানা সম্ভব হবে। শরিফার গোপনস্থান দিয়ে রক্তক্ষরণের জমাটবাঁধা দাগ দেখে কেউ সহ্য করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন তার মামা খসরুল ফকির। শরিফার মা নারগিস বেগম বিলাপ করে বলেন, আমি এ ঘটনার প্রকৃত বিচার চাই। সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলে যেন আমাদের প্রতি অবিচার না হয়। নড়াইল সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সজল কুমার বকসি জানান, শরিফা ঢাকায় যেখানে চিকিৎসাধীন ছিল, সেখান থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র আসার পর বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেয়া হবে। এক্ষেত্রে দু’একদিন সময় লাগতে পারে। এ ব্যাপারে নড়াগাতি থানার ওসি বেলায়েত হোসেন জানান, শরিফার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। আর শিশু শরিফার পায়ুপথে কালো জমাটবাঁধা রক্তের দাগ দেখা গেছে।

জানা গেছে, নড়াইলের নড়াগাতি থানার শুড়িগাতি গ্রামের মৃত টুকু মোল্যার বিধবা স্ত্রীর শিশু কন্যা দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ৮ বছর বসয়ী শরিফাকে পড়ালেখা শেখানো, ভালো থাকাসহ বিভিন্ন প্রলোভনের কথা বলে গত ৭-৮ মাস পূর্বে ঢাকার কচুক্ষেত এলাকায় সাজ্জাদ গাজীর বাসায় নিয়ে যায়। খসরুল ফকির জানান, গত ৩০ মার্চ সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী, শরিফার মাকে ফোন দিয়ে জানায় শরিফা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ খবর শুনে শরিফার মা নারগিস বেগম শনিবার সকালে ঢাকায় যায়। গত রোববার বিকেলে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পায় তার সন্তান মুমূর্ষু জ্ঞানহীন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। চিকিৎসক-নার্স কেউ মুখ খুলে রোগ সম্পর্কে কিছুই বলছে না। এরপর সোমবার সকাল ১০টার দিকে নার্গিসকে নার্সরা শিশু শরিফার কফিন ভর্তি লাশ দেখালে তিনি নির্বাক হয়ে যান। ঐদিন রাতে কফিন ভর্তি শিশু শরিফার লাশ শুড়িগাতি গ্রামে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। চারিদিকে সোরগোল পড়ে যায়। খবর পেয়ে নড়াগাতি থানা পুলিশ গত মঙ্গলবার সকালে লাশ থানায় নিয়ে সুরতহাল করেন। এ সময় নিম্নাঙ্গে কালো রক্ত জমাটবাঁধা দাগের চিহ্ন পাওয়া যায়। পায়ুপথের অস্বাভিবকতা দেখা যায় বলে পুলিশ জানিয়েছেন।

খসরুল ফকির জানান, শরিফার মৃত্যুর পর সরকারি ঐ কর্তকর্তা তাকে এবং শরিফার মাকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘তোমরা শরিফার মৃত্যু নিয়ে কোনো কিছু করো না। তোমরা যা চাও তাই দেয়া হবে। যদি চাকরি চাও তাহলে তাও দেয়া হবে অথবা ২০ লাখ টাকা দেয়া হবে।’

খসরুল বলেন, ‘আমার ভাগি্ন শরিফার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে চাই। আমার ভাগি্নকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে একাধিকবার শরিফা তার মাকে মোবাইল ফোনে বলেছিলো, আমি এখানে (সাজ্জাদ হোসেনের বাসায়) থাকতে পারছি না। আমার সমস্যা হচ্ছে। বাড়ি এসে তোমাকে সমস্যার কথা বলব।’

এদিকে, শরিফার মৃত্যুর কারণ হিসাবে অভিযুক্ত ঐ কর্মকর্তা একেক সময় একেক ধরনের কথা বলেছেন বলে জানান খসরুল ফকির। অভিযুক্ত সাজ্জাদ হোসেন কখনো জানিয়েছেন, শরিফার পাতলা পায়খানা ও জ্বর হয়েছে, কখনো বলেছেন ক্যান্সার হয়েছে। শরিফার মা জানায়, প্রায় দুই বছর আগে ওর (শরিফা) বাবা স্ট্রোক করে মারা যান। সংসারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম স্বামীকে (ভ্যানচালক) হারিয়ে আমার ৩টি শিশু সন্তান শরিফা, সাগর ও আকাশকে নিয়ে কোনোভাবে জীবনযাপন করছি। দরিদ্রতার কারণে আমার ছেলে সাগর (সপ্তম শ্রেণী) ও আকাশ (পঞ্চম শ্রেণী) খুলনায় ওদের মামাবাড়ি থেকে পড়ালেখা করছে। মা নার্গিস বেগম আবেগতাড়িত কণ্ঠে অভিযোগ করে বলেন, ‘ধর্ষণের কারণে আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আমি হাসপাতালে বার বার আমার মেয়ের কি হয়েছে জানতে চাইলেও এসব সম্পর্কে আমাকে কিছুই বলেননি। কি রোগ হয়েছে আমার মেয়ের তাও বলতে চায়নি সেখানকার ডাক্তারা। আমরা গরিব মানুষ। তাই সঠিক বিচার পাব না।’

নিহতের মামা খসরুল ফকির বলেন, ‘প্রকৃত সত্য আড়াল করতে সাজ্জাদ গাজী আমাদের টাকা-পয়সার প্রলোভন দেখিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন।’

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাজ্জাদ গাজী মুঠোফোনে বলেন, ‘গত কয়েক দিন আগে শিশুটি হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়। সিএমএইচে ভর্তি করানোর পর রক্ত পরীক্ষায় তার বস্নাডে ইনফেকশন ধরা পড়ে। এতে ধারণা করা হয়, রক্তে ক্যান্সারের জীবাণু বহন করছে। মুত্যুর সনদ তাদের নিকট দেয়া হয়েছে। ভিলেজ পলিটিঙ্রে শিকার হয়ে তারা এখন লাশের ময়না তদন্ত করছেন। আমার কাছে তারা টাকা-পয়সা চাচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। শিশুটির স্বাভাবিক মৃত্যুর সকল তথ্য প্রমাণ আমার কাছে আছে।’

Post a Comment

Previous Post Next Post