ক্লিনিক ও হাসপাতাল গুলোতে চলছে নৈরাজ্য-৪ চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আইসিইউ আতঙ্কে

 

হাবিবুর রহমান : দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতা?লের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) এখন আর মুমূর্ষু রোগীর সুচিকিৎসার জন্য ব্যবহার হচ্ছে না। বেসরকারি কিছু হাসপাতাল একে অবৈধ বাণিজ্যের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীরা এখন আইসিইউ আতঙ্কে ভুগছেন।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, কি কারণে রোগীকে আইসিইউতে নেয়া হলো চিকিৎসকরা তা কখনই স্পষ্ট করেন না। রোগীর সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ, কি অবস্থায় কেমন আছেন, তাও জানানো হয় না। কিন্তু হাসপাতাল ছাড়ার সময় তাদের মোটা অঙ্কের বিল ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিলের টাকা না দিলে তারা রোগীকে আটকে রাখেন। কোনো কোনো হাসপাতালে লাশও আটকে রাখার ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সুবিধা অপর্যাপ্ত। অনেক সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ ঠিকমতো কাজও করে না। এর মধ্যে ঢাকার পঙ্গু ও পুনর্বাসন হাসপাতাল (নিটোর) অন্যতম। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু বেসরকারি হাসপাতাল আইসিইউ বাণিজ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। হাসপাতাল মালিক-চিকিৎসকদের নিয়ে গড়ে ওঠা একটি বড় সিন্ডিকেট এই বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। বেসরকারি হাসপাতালের দালালরা ঘুরে বেড়ায় সরকারি হাসপাতালে। ঐসব দালালের মাধ্যমে রোগী এনে চিকিৎসার নামে জিম্মি করা হয়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সুবিধার জন্য যে পরিমাণ বাজেট দরকার, তার আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকগুলোর আইসিইউ খুবই নিম্নমানের। যেখানে সাধারণদের ভুল-ভাল বুঝিয়ে ভর্তি করা হয় এবং তাদের ঠকিয়ে নেয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। এসব প্রতিরোধে সরকারের একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করা দরকার। একই সঙ্গে পেশাজীবীদেরও সোচ্চার হতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ডা. ফেরদৌসী হক বলেন, আইসিইউ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যত দ্রুত সম্ভব কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। একই সঙ্গে সরকারি হাসপাতালগুলোতেও আইসিইউ সুবিধা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

লাশ আটকে রেখে টাকা আদায়ের ঘটনা ঘটেছে গত সপ্তাহে রাজধানীতেই। ৩ দিন আগে মারা গেলেও শুধু টাকার লোভে এক স্কুলছাত্রী আইভীর লাশ আটকে রেখে চিকিৎসা করানোর অভিযোগ উঠে মহাখালীর মেট্রোপলিটন মেডিকেল সেন্টার নামে একটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। স্বজনদের অভিযোগ, আইসিইউতে রেখে মেয়ে বেঁচে আছে দাবি করে স্বজনদের কাছ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কয়েকজন চিকিৎসক।

আইভীর মা মোসা. হাসি বলেন, ১৮ মার্চ সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পাওয়ার পর আইভীকে ভর্তি করা হয় মহাখালীর মেট্রোপলিটন মেডিকেল সেন্টারে। সেখানে আইসিইউতে রেখে ১৫ দিন চিকিৎসা দেয়ার পরও অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় গত রোববার রাতে আইভীকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। তখনই মেট্রোপলিটন হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে অন্য চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে স্বজনরা দাবি করেন, আইভী ৩ দিন আগেই মারা গিয়েছিল।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post