টোকাইয়ের শতকোটি টাকা

দেশ নানা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সর্বনাশের সব আয়োজন সম্পন্ন হচ্ছে। দেশের যুবক, তরুণ এমনকি কিশোররা পর্যন্ত নেশাগ্রস্ত হয়ে নেতিয়ে পড়ছে।

মারাও যাচ্ছে। ভয়ংকর নেশা ইয়াবা রাজধানীর অভিজাত এলাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত আসছে সেসব খবর। রাজশাহীর পবা-গোদাগাড়ীসহ অনেক জায়গায় মাদকের হাট বসার খবর বেরিয়েছে। মাদকের কারবার যেন অবাধ ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। আর হবে না-ই বা কেন? প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ১০ বছর আগেও যে রাস্তায় বোতল কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করত সেই টোকাই ইশতিয়াক এখন শতকোটি টাকার মালিক। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ১০টি বাড়ি এবং ঢাকা ও সাভারের বিভিন্ন এলাকায় শত বিঘা জমি রয়েছে। তার সহযোগীদের অনেকেই এখন কোটিপতি। দামি গাড়ি হাঁকিয়ে চলাচল করে। হত্যাসহ ১৫টি মামলার আসামি হয়েও দিব্যি ঘুরে বেড়ায়, পুলিশ তাকে ধরতে পারে না। আর ধরলেই বা কি? র?্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ২০০ সদস্য মিলে অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে ইশতিয়াকের প্রধান সহযোগী নাদিম ওরফে ‘পঁচিশ’কে ধরেছিল। মাত্র ১২ দিনের মাথায় জামিনে বেরিয়ে আসে নাদিম। আরো জোরেশোরে শুরু করে পুরনো কারবার। জানা যায়, শুধু জেনেভা ক্যাম্পকে কেন্দ্র করেই মাদক কারবারিদের ১০টি সিন্ডিকেট রয়েছে, রয়েছে প্রায় ৪০০ কারবারি। ভাবা যায়, তাদের শত শত কোটি টাকা আয়ের বিনিময়ে কত হাজার হাজার তরুণপ্রাণ ধ্বংস হয়েছে বা হচ্ছে!

মাদক যখন সহজলভ্য হয়ে যায় তখন মাদক সেবনের হারও বেড়ে যায়। উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা নানাভাবে নেশার খপ্পরে পড়ে। কিন্তু মাদকের বিস্তার রোধে নিয়োজিত বাহিনীগুলো কী করছে? ইয়াবা আসে মূলত মিয়ানমার থেকে। সীমান্তে সেই চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে আমাদের ব্যর্থতা রয়েছে। সেখান থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো পরিবহণ ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের বিক্রিও রোধ করা যাচ্ছে না। যেসব বাহিনী এসব নিয়ন্ত্রণ করবে তাদের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধেই উঠছে নানা অভিযোগ। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি অধিদপ্তর থাকলেও তার কোনো ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। আবার যে দু-একজন ধরা পড়ে তারাও জামিনে বেরিয়ে একই কাজ করে। কিন্তু মাদক তো মাদকেই সীমিত থাকছে না, আরো অনেক অপরাধেরই জন্ম দিচ্ছে। দেশ কি এভাবে ক্রমে রসাতলেই যেতে থাকবে?

মাদক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংস্কার করতে হবে। অপরাধগুলো জামিন অযোগ্য করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর জবাবদিহি বাড়াতে হবে। যেভাবেই হোক, দেশের সব সম্ভাবনা ধ্বংসের এই পাঁয়তারা বন্ধ করতেই হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post