Kbdnews : নিরবে-নিভৃতে মেহেরপুরের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে চাষ হচ্ছে ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের। শহর ও গ্রাম-গঞ্জের অসহায় ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ একদিকে মিটাচ্ছে দেশের পুষ্টির চাহিদা আর অন্যদিকে আমাদের অর্থনীতির চালিকা শক্তিকে গতিশীল করছে। বর্তমানে মেহেরপুরের প্রায় এক লাখ পরিবারে প্রায় ২ লাখ বস্নাক বেঙ্গল ছাগলের চাষ হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, তাদের হিসেব মতে মেহেরপুরে এক লাখ ৬ হাজার পরিবারে এক লাখ ৭৮ হাজার ৫৮৮ টি ছাগল পালন হচ্ছে। যার সবগুলো বস্নাক বেঙ্গল ছাগল। তবে তারা আরো বললেন এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
মেহেরপুরের শহর ও গ্রাম-গঞ্জে প্রচুর পরিমানে বস্নাক বেঙ্গল ছাগল দেখা যায়। এমন কম বাড়ি দেখা যায় যে বাড়িতে ছাগল নেই। এসব ছাগল পালনকারীরা নিজেরাই জানেন না। তারা যে ছাগল পালন করছেন তা বিশ্বের প্রথম শ্রেণির ছাগল এবং এর মাংশ অন্যান্য ছাগলের মাংশের চেয়ে পুষ্টিকর ও সুস্বাধু। এছাড়া এর চামড়া বিশ্বমানের ও কুষ্টিয়া গ্রেড হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলের ছাগলের চাহিদা থাকায় প্রতি সপ্তাহে মেহেরপুর জেলার পশু হাট থেকে ট্রাক ভর্তি করে ছাগল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের উত্তরপূর্ব জেলাগুলোতে নেয়া হয়।
বিভিন্ন সংস’া ও প্রাণি সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ছাগল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪র্থ স’ানটি দখল করে রেখেছে। আর এদেশে উৎপন্ন শতকরা ৯৫ ভাগ ছাগলই বিশ্বের উন্নত জাত বস্নাক বেঙ্গল ছাগল। মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরসহ দেশের দড়্গিন-পশ্চিম অঞ্চলের কয়েকটি জেলায় এ ছাগল চাষ বেশি বেশি লড়্গ্য করা যায়। মেহেরপুর জেলার প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে ২ টি থেকে ৫ টি ছাগল রয়েছে। কোন কোন বাড়িতে এর বেশিও রয়েছে। এরকম দেশের দড়্গিণ-পশ্চিশ অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি জেলার প্রতিটি বাড়িতে এধরণের দু’পাঁচটি করে ছাগল পালন করতে দেখা যায়। এসব ছাগলগুলো সতন্ত্র জাতের। ঘরে ঘরে পালন হয় বিধায় এসব ছাগল এখনও সংকরায়ণ হয়নি। এ জাতটি টিকিয়ে রেখেছেন গ্রাম-গঞ্জের মানুষ গুলো।
আশি’র দশকে বি.আর.ডি.বি’র সহযোগিতায় মেহেরপুরে উন্নত ছাগলের সংকরজাত ছাগল উৎপাদনের জন্য জাপানীরা শহরের পুলিশ লাইন এলাকায় একটি ছাগল ফার্ম করেন। কিন’ এ জেলার মানুষ সংকরজাত ছাগল উৎপাদনে আগ্রহী না থাকায় তা অল্প দিনে মুখ থুবড়ে পড়ে। সেখানে আজও ফার্মের অসিত্মত্ব থাকলেও নেই কোন দেশি-বিদেশী ছাগল।
মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের শোলমারী গ্রামের বাঙালপাড়ার গৃহবধূ বিলকিস বাড়িতে ছাগল পুষেছেন। ২ টি ছাগল থেকে তার পালে ৬২টি ছাগল হয়েছিল। তিনি গত ঈদুল আযহায় বেশ কয়েকটি ছাগল বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে তার ছাগল বিক্রির অর্থ দিয়ে বাড়ি করার জমি কিনে পাঁকা বাড়িও করেছেন তিনি। বর্তমানেও তার পালে আরো অনেকগুলো ছাগল রয়েছে। এদিকে সংসারে আর্থিক সহযোগিতা করতে গ্রাম্য বধূরা দু’চারটি করে ছাগল পালন করে থাকেন। এমন অনেক পরিবার মেহেরপুরের গ্রাম-গঞ্জে রয়েছে যেখানে ৮ টি থেকে ১৫ টি বা তার বেশি ছাগলও রয়েছে।
মেহেরপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড কাজি অফিসপাড়ার তৌহিদা খাতুনের রয়েছে ৯ টি ছাগল। তার একটি ছাগল বছরে ২ বার কমপড়্গে ৪ টি করে ৮ টি বাচ্চা দেয়। এর আগেও কয়েকবার ওই ছাগলটি ৫টি করে বাচ্চা দিয়েছে বলে তিনি জানান। ৩ মাসের ওই বাচ্চা প্রতিটি ৩ হাজার টাকা করে বিক্রি হয়। এভাবে তিনি স্বামীর সংসারে আর্থিক সহযোগিতা করে চলেছেন।
একই পাড়ায় মমে বেওয়া ৪ ছেলের কারো সংসারে না থেকে একাই খাওয়া-দাওয়া করেন। তার রয়েছে ৭টি ছাগল। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে তার পালে উৎপন্ন ছাগল বিক্রি করে তিনি একার সংসার খেয়ে-পরে ভাল আছেন। মাঝে মাঝে তিনি তার নাতি-পুতিদেরও কাগজ-কলম কেনার টাকা দেন।
তৌহিদা খাতুন ও মমে বেওয়া আরো জানালেন, শহরের বাস করলেও ছাগল পালন করতে ঘাস বা খড়কুটো এমন কিনতে হয়না। নিজেদের বাড়ির ও প্রতিবেশিদের বাড়ির ফ্যান-পানি আর খুটনাতেই যতেষ্ঠ। এছাড়া ছাগলগুলো চরে খায়। মাঝে মাঝে যখন কিছুই পাওয়া যায়না তখন অল্প কিছু ঘাস-পাতা কিনলেই চলে যায়।
মেহেরপুর সদর উপজেলার শোলমারী গ্রামের বাঙালপাড়ার গৃহবধূ বিলকিসসহ গ্রাম অঞ্চলের অনেক গৃহবধূ, স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা নারী জানালেন, তারা ছাগল পোষেন। তবে খাবার কেনা লাগেনা। তারা মাঠঘাটে ছাগল চরিয়ে খাওয়ান। তবে ছাগলের চিকিৎসার জন্য তারা পশু হাসপাতাল বা গ্রামের পশু চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হন।
মেহেরপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শশাঙ্ক কুমার মন্ডল জানান, মেহেরপুর ছাগল উৎপাদন ও পালন করার মত একটি উন্নত জেলা। এ জেলায় পর্যাপ্ত পরিমানে বস্নাক বেঙ্গল ছাগল উৎপন্ন হচ্ছে। খামারীদের পাশা-পাশি বাড়িতে বাড়িতে এ ছাগল চাষ চলছে। মেহেরপুর প্রাণি সম্পদ বিভাগ ছাগল পালনকারীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন।