কূটনৈতিক রিপোর্টার ও কক্সবাজার প্রতিনিধি : রোহিঙ্গা মুসলিমরা কি ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা স্বচক্ষে দেখলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি মিশনপ্রধানরা। সীমান্ত পরিদর্শনের পর কূটনীতিকরা একবাক্যে বললেন, মানবতার এ সঙ্কট চলতে পারে না।
গতকাল বুধবার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রতিনিধিদের বহনকারী বিমানটি রওনা দেয়। বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিমানটি কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছে।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন ৪৩ দেশের রাষ্ট্রদূত এবং ৪টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান। তারা সেখানে প্রত্যক্ষ করেন, মায়ানমারের রাখাইনে চলমান সহিসংতায় পালিয়ে আসা ৩ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা কিভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো কিভাবে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। নো ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত হাজার হাজার রোহিঙ্গা কিভাবে বাংলাদেশে ঢোকার প্রাণপণ চেষ্টা করছে সেটাও দেখেছেন তারা। সীমান্ত এলাকায় মায়ানমার সেনাবাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে রোহিঙ্গারা কিভাবে আক্রান্ত হচ্ছে সেটাও তাদের সামনে তুলে ধরা হয়। এসময় কূটনীতিকদের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উইংয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রীলঙ্কা, লিবিয়া আর উত্তর কোরিয়া ছাড়া বাংলাদেশের সমস্ত কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরা রোহিঙ্গা পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখতে উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনীতিকদের উদ্দেশে বলেন, এবার আপনারা স্বচক্ষে দেখলেন। এতদিন মিডিয়ায় দেখেছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবসময়ই আমাদের পাশে ছিল। আমাদের প্রত্যাশা স্বচক্ষে দেখার পর আন্তর্জাতিক মহল আমাদের পাশে আরও জোরালোভাবে থাকবে।
ঢাকাস্থ ডাচ রাষ্ট্রদূত এই পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে বলেন, মানবতার এ সঙ্কট চলতে পারে না। এর রাজনৈতিক সমাধান জরুরি। বৃটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বলেন, আমি দেখেছি মানবতা এখানে কিভাবে সঙ্কটে আছে। আমরা চাই এই সঙ্কটের সমাধান হোক। চীন রাষ্ট্রদূত মা মিন চিয়াং বলেন, সমাধান হতে হবে, সমাধান সামনে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স, জোয়েল রিফম্যানও এ সঙ্কটের সমাধান চেয়েছেন। ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের অন্যান্য রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে অভিন্ন সুরেই তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মায়ানমারে ফেরত নেয়া এই সঙ্কটের একমাত্র সমাধান। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
কূটনীতিকদের শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন ও রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, মায়ানমার এই সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। তাই সঙ্কট সমাধান করতে হবে তাদেরকেই। বাংলাদেশ চায় পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান। মায়ানমারের এই আচরণে মানবতার যে ক্ষতি হচ্ছে, তারা (কূটনীতিকরা) সেটা স্বচক্ষে দেখছেন। এর পাশাপাশি তারা আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন, তারা তাদের সদর দফতরে বার্তাগুলো আশা করি পৌঁছাবেন যে, তাদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে নিতেই হবে। এটাই একমাত্র সমাধান, বলেন শাহরিয়ার আলম।
পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিদেশি প্রতিনিধিরাও। এসময় তারা বলেন, মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের জীবন অনিশ্চিত এবং অমানবিক। এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মায়ানমারে ফিরিয়ে নিতে নিজ নিজ দেশে গিয়ে আলোচনা করবো। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার ডাকে এগিয়ে আসায় বাংলাদেশের প্রতি ধন্যবাদ জানান তারা। এসময় তারা বাংলাদেশের প্রশংসাও করেন।