`৩৭১ কোটি টাকা ব্যয়ের পর বন্ধ হল পাইপ লাইনে গ্যাস প্রকল্প

খুলনা থেকে বি এম রাকিব হাসান : অবশেষে বন্ধ হয়েই গেল খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সঞ্চালন প্রকল্প। শুরুর ১১ বছরে চার দফা সময় বৃদ্ধি করেও আলোর মুখ দেখলো না প্রকল্পটি। অথচ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পাইপ, যন্ত্রপাতি কেনা ও আনুষঙ্গিক কাজে ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে ৩৭১ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় এগারো বছর পর প্রকল্পটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। উন্নয়নকর্মী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রকল্পটি বন্ধের ফলে ফিকে হয়ে গেল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল অথনৈতিক সম্ভাবনা ও বিনিয়োগ। আর প্রকল্পটি চালুর ব্যাপারে পুনঃবিবেচনার দাবি নাগরিক নেতাদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন স্থাপন প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০০৬ সালে। গত এগারো বছরে অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে সম্পন্ন হয় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে খুলনার আড়ংঘাটা এলাকা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপ লাইন বসানোর কাজ। অপেক্ষা ছিল গ্যাস সংযোগ দেবার মাত্র। এরই মধ্যে সমপ্রতি মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেবার। অথচ, গত এগারো বছরে কয়েক দফা দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ৩৭১ কোটি টাকার পাইপ ও যন্ত্রাংশ কিনেছে পেট্রোবাংলার আওতাধীন সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। যার মধ্যে, বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ২৪২ কোটি টাকার। কিন্তু খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৮৪৫ কিলোমিটার গ্যাস বিতরণ পাইপ লাইন স্থাপনের কাজই শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে প্রকল্পের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ সমাপ্তের নিদেশ দেয় মন্ত্রণালয়।

সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক এসএম রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি বন্ধ করেছে মন্ত্রণালয়। এর বাইরে আর কিছুই বলার নেই। পুরোটাই নির্ভর করছে সরকারের নীতিমালার ওপর। আর এর জন্য সময়ের প্রয়োজন।

সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খালেকুজ্জামান রতন বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ক্রয়কৃত পাইপ ও যন্ত্রাংশ সরকারি অন্যান্য কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করে দিতে। এতোমধ্যে কিছু যন্ত্রাংশ বিক্রিও করা হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ফিরোজ আহমেদ মনে করেন, প্রকল্পটি বন্ধের সিদ্ধান্ত পদ্মার এপাড়ের অথনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার পর এ অঞ্চলে কলকারখানা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল তা তিমিরেই রয়ে যাবে।

এদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পাইপ লাইনে গ্যাস সঞ্চালন প্রকল্পটি বন্ধের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসছে খুলনার সর্বস্তরের মানুষ। বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে পুনঃবিবেচনায় প্রকল্পটি চালু ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্নের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় দুর্বার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

খুলনা নাগরিক সমাজ : খুলনা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা এড. আ ফ ম মহসীন ও সদস্য সচিব এড. মো. বাবুল হাওলাদার যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, সর্বদা অবহেলিত-বঞ্চিত খুলনায় পুনরায় বঞ্চনার মাইলফলক তৈরি হলো। দীর্ঘ আন্দোলন এবং সরকারের সদিচ্ছায় ২০০৬ সালে খুলনায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সঞ্চালন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এ অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে, চালু হবে বন্ধ সকল কলকারখানা। এ অঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। কিন্তু প্রকল্পটি বাতিলের খবর খুলনাবাসীকে হতাশ করেছে। বার বার শুধু অবহেলা-বঞ্চনার পুনরাবৃত্তি। বিবৃতিদাতারা বলেন, ইতোপূর্বে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ। প্রকল্পটি বন্ধ করে এদেশের জনগণের উপর ঋণের বোঝা চাপানো হলো। অথচ ফলাফল শূন্য। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, উদাসীনতা, নাকি যড়যন্ত্র- তা খুলনাবাসীর বোধগম্য নয়। পদ্মা সেতু, নতুন রেল নেটওয়ার্কের পরিকল্পনা, খুলনাকে বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের বিবেচনায় নেয়া সার্বিক বিবেচনায় খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন সময়ের দাবি। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়ে এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানান।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন আন্দোলন : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পাইপ লাইনে গ্যাস প্রকল্প বন্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। প্রকল্পটি পুনরায় চালু ও দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্নের দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যত্থায় খুলনাবাসীকে নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন নেতৃবৃন্দ।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post