কালবৈশাখীর তান্ডবে সারাদেশে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৯ জন।

KBDNEWS রিপোর্ট : টানা প্রায় এক মাস তাপদাহের পর বৈশাখের অষ্টাদশ দিনে কালবৈশাখীর তান্ডবে সারাদেশে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৯ জন। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩, কুমিল্লার বুড়িচংয়ে ১, নাটোরে ১, নরসিংদীতে ১, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ২ ও চুয়াডাঙ্গায় ১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রাজধানীতে নিহত হওয়ার খবর না পাওয়া গেলেও ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফসলি জমি, ঘড়বাড়ি, গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আমাদের সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজদিখান উপজেলায় গত রোববার সন্ধ্যায় বৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে

২ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বিদ্যুতের খুটি ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। জানা যায়, নাটেশ্বর গ্রামের নূর হোসেনের ছেলে মো. শহিদ (৪৫) জমি থেকে ঝড়াতঙ্কে দৌড়ে বাড়ি এসে স্ট্রোক করে নিহত হয় ও বালুচর ডিসি প্রজেক্ট এলাকায় দেয়াল ধসে নারায়ণগঞ্জ জেলার কানাই নগরের আব্দুল্লাহর ছেলে ইলেকট্রিশিয়ান রিঙ্কু (৩২) ঘটনাস্থলে নিহত হয়। সিরাজদিখানের বালুচর দিয়ে নারায়ণগঞ্জে তাদের নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে দেয়াল চাপা পড়ে গুরুতর আহত হয়ে মিটফোর্ডে ভর্তি হয় নারায়ণগঞ্জের কানাই নগরের মেজবাহ উদ্দিন বারির ছেলে জহির উদ্দিন রতন বারি (৩১), ফতুল্লা থানার ডিগ্রিচর গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে বাতেন (৩০) ও ডিগ্রিরচরের জয়নালের ছেলে হুমায়ুন (৩৩)।

কুমিল্লা ব্যুরো জানায়, ঝড়ে সড়কের ওপর গাছ পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে যান চলাচল বিঘি্নত হওয়ার ১২ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত সুপার এনামুল হক জানান।

গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় গাছ চাপায় বুড়িচংয়ে এক বৃদ্ধ নিহত হন।

এএসপি এনামুল হক বলেন, ঝড়ের পর থেকে পুলিশ মহাসড়কে পড়ে থাকা গাছপালা সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি তফাজ্জল হোসেন জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় কালবৈশাখী ঝড়ে গাছের নিচে চাপা পড়ে আনোয়ার (১০) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। গত রোববার দিনগত রাত পৌনে ৮টার দিকে উপজেলার কাইয়ূমপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আনোয়ার নোয়াগাঁও গ্রামের গোলাম রাব্বানীর ছেলে এবং স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র।

এদিকে, গতকাল সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের আতুকুড়া গ্রামের হাজী শাহেদ মিয়ার ছেলে নুরুদ্দিন (২২) নামে এক কৃষক বাড়ির পাশে জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অপরদিকে, চাতলপাড় ইউনিয়নের ঘুজিয়াখাইল গ্রামের নুর হোসেনের ছেলে মো. রতন মিয়া (৩০) আয়নার গোপ মাঠে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মারা যায়।

নরসিংদী প্রতিনিধি কামরুল ইসলাম কামাল জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে মোবাইল ফোন টেলিটকের একটি বিলবোর্ড ভেঙে পড়ে আওলাদ হোসেন (২৫) নামে এক পরিবহণ শ্রমিক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে। নরসিংদী নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রোববার রাত ৯টায় এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নাটোর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম জানান, নাটোরের বাগাতিপাড়ার ছোট পাঁকায় বজ্রপাতে আশিকুর রহমান নামে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকেলে কালবৈশাখী ঝড়ের আগে বাড়ির পাশের খেতে সেচ দিতে যায়। এসময় তার খুব কাছেই বজ্রপাত হলে সে ঝলসে যায়। এসময় তাকে দ্রুত বাগাতিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আশিকুর রহমান স্থানীয় এনামুল হকের ছেলে এবং সে এবারে পাঁকা হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গায় কালবৈশাখী ঝড়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন একজন। শিলাবৃষ্টিতে আমসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দীর্ঘ ২৫ দিনের তীব্র দাবদাহের পর গত রোববার বিকেলে জেলার ওপর দিয়ে শিলা বৃষ্টিসহ দুই দফা ঝড় বয়ে যায়। দামুড়হুদা উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের মৃত আইজউদ্দিন শেখের দুই ছেলে বদর উদ্দিন (৫০) ও দাউদ হোসেন (৪৮) বাড়ির উঠানে ধান গোছানোর সময় ঝড়ে একটি আমগাছ ভেঙে পড়ে। এতে দুই ভাই আহত হন। তাদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে দাউদ হোসেন মারা যান। বদর উদ্দিন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফেরেন।

মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি মো. নাজিম উদ্দিন জানান, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় রোববার সন্ধ্যায় আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড় সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেয়।

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীর ভূঁইয়ার ঘাট এলাকায় ৪টি মালবোঝাই ট্রলার ডুবে গেছে। গত রোববার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। গতকাল সোমবার সকাল থেকে মালামালসহ ডুবে যাওয়া ট্রলার উদ্ধারের চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান।

Post a Comment

Previous Post Next Post