চীনে বাড়ছে করোনা,

 


রয়টার্স

 চীনে  বাড়ছে কোভিড-১৯। ফলে চীনের হাসপাতাল ও শবাগারগুলোকে এখন ব্যাপক চাপ সামলাতে হচ্ছে। যদিও দেশটির সরকার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে তথ্য দিচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা অনেক দেশ এরই মধ্যে চীন থেকে যাওয়াদের জন্য নতুন নিয়মও চালু করেছে। এদিকে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে চীন থেকে আগতদের করোনা পরীক্ষা করার ঘোষণা দিয়েছে জাপান।তিন বছর ‘শূন্য কোভিড’ নীতিতে অবিচল থাকা চীন এ মাসে হুট করেই লকডাউন, নিয়মিত শনাক্তকরণ পরীক্ষায় অংশ নেওয়াসহ কঠোর সব বিধিনিষেধ তুলতে শুরু করে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আগামী বছরের মধ্যে যাবতীয় সব বিধিনিষেধ তোলার পথেই রয়েছে তারা। তবে জনঅসন্তোষ ও বিক্ষোভের মুখে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই চীন জুড়ে করোনাভাইরাসের থাবা বিস্তৃত হতে শুরু করেছে। দেশটিতে এখন প্রতিদিন ১০ লাখের বেশি মানুষ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে স্বাস্থ্যবিষয়ক একাধিক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ অনুমান করছেন। বিপুলসংখ্যক এই রোগী দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চরম চাপ সৃষ্টি করেছে। মঙ্গলবার চীনে কোভিডজনিত কারণে তিন জনের মৃত্যু হয় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে; সোমবার এই সংখ্যা ছিল ১ জন। সরকারি এই হিসাবের সঙ্গে দেশটির শবাগারগুলো থেকে পাওয়া খবর এবং তুলনামূলক কম জনবহুল দেশে কোভিড বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পরের অভিজ্ঞতার মিল নেই বলে সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।চীনের দক্ষিণপশ্চিমের শহর চেংডুর অন্যতম বড় হাসপাতাল হুয়াশির কর্মীরা জানান, তারা এখন কোভিড রোগীদের নিয়ে ‘তুমুল ব্যস্ত’। হাসপাতালের বাইরে নাম প্রকাশে রাজি না হওয়া এক অ্যাম্বুলেন্সচালক বলেন, ‘আমি ৩০ বছর ধরে কাজ করছি, এমন ব্যস্ততা আগে কখনোই দেখিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ ও এর সংশ্লিষ্ট জ্বরের ক্লিনিকের ভেতরে-বাইরে মানুষজনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। অ্যাম্বুলেন্সে আনা বেশিরভাগ মানুষকে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে দিতে হয় অক্সিজেন।  জরুরি বিভাগের ফার্মেসির এক নারীকর্মী বলেন, প্রায় সব রোগীরই কোভিড। হাসপাতালে কোভিডের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ মজুত নেই, কেবল কাশির মতো উপসর্গের ওষুধ আছে।’

চেংডুর অন্যতম বৃহৎ শবাগার ডংজিয়াওয়ের আশপাশের পার্কিংগুলোও ছিল গাড়িতে ভর্তি। একের পর এক শেষকৃত্য আর মরদেহ পোড়ানোর চুল্লি থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। শবাগারের এক কর্মী বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ২০০টি শবদেহ পোড়াতে হচ্ছে। আমরা এতটাই ব্যস্ত যে, খাওয়ার সময়ও পাচ্ছি না। বিধিনিষেধ তোলার পর থেকেই এই পরিস্থিতি। এর আগে দিনে ৩০-৫০টি পোড়াতে হতো।’ অনেকেই কোভিডে মারা যাচ্ছেন বলে জানান আরেক কর্মী। চাপে হিমশিম খেতে দেখা গেছে চেংডুর আরেকটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন শবাগার নানলিংয়ের কর্মীদেরও। কোভিডে এখন অনেক মৃত্যু হচ্ছে। শেষকৃত্যের স্লট সব বুক হয়ে গেছে। নতুন বছরের আগে আর কাউকে জায়গা দেওয়া যাবে না, বলেন সেখানকার এক কর্মী।চীন সম্প্রতি তাদের কোভিডে মৃত্যুর সংজ্ঞাতে বদল এনে বলেছে, কেবল কোভিডজনিত নিউমোনিয়া ও শ্বাসযন্ত্র অকার্যকর হয়ে মৃত্যুকেই তারা এখন থেকে কোভিডে মৃত্যুর তালিকায় স্থান দেবে। বেইজিংয়ের ছায়োইয়াং হাসপাতালের কর্মকর্তা ঝ্যাং ইউহুয়া রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এখন যে রোগীরা আসছে, তাদের বেশিরভাগই বয়স্ক, অন্যান্য রোগে গুরুতর অসুস্থ। এখন প্রতদিন ৪০০-৫০০ রোগীকে জরুরি সেবা দেওয়া লাগছে, আগে এই সংখ্যা ছিল ১০০-এর মতো, বলেন তিনি। বেইজিংয়ের চীন-জাপান মৈত্রী হাসপাতালের জ্বরের ক্লিনিকও বয়স্ক রোগীদের দিয়ে ভর্তি বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। রোগীর চাপ সামলাতে গ্রামাঞ্চলের অনেক চিকিৎসাকেন্দ্রে অবসরে যাওয়া কর্মীদের পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, অসুস্থ হলেও নার্স ও চিকিৎসকদের কাজে যোগ দিতে বলা হচ্ছে। অনেক শহরে ওষুধের ঘাটতিও প্রবল হয়ে উঠেছে।এদিকে চীনে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশটি থেকে আগতদের করোনা পরীক্ষার নিয়ম করেছে জাপান। মঙ্গলবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এ ঘোষণা দিয়ে বলেন, চীনে কোভিডের দ্রুত বিস্তারের ফলে দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে আগত ভ্রমণকারীদের জাপানে কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে। তিনি বলেন, পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ এলে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাত দিনের জন্য আইসোলেশনে থাকতে হবে। চীনের জন্য নতুন এই ব্যবস্থা আগামী ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে কার্যকর হবে। চীনে ফ্লাইট বাড়ানোর জন্য বিমান সংস্থাগুলোর আবেদনও সীমিত করা হবে।

উল্লেখ্য, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কঠোর কোভিডবিধির পর গত অক্টোবরে পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয় জাপান। তবে ভ্রমণকারীদের করোনা টিকা নেওয়া থাকবে হবে কিংবা যাত্রার আগে কোভিড নেগেটিভ থাকার প্রমাণ হাজির করতে হবে।

 

 

Post a Comment

Previous Post Next Post