অর্থনৈতিক রিপোর্টার: বাজারে সরবরাহ বাড়লেও চালের দাম কমেনি। বরং সপ্তাহের ব্যবধানে মাঝারি মানের চাল কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। মোটা ও সরু চাল গত সপ্তাহের একই সময়ের তুলনায় বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কুরবানির ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে বাজারে মসলাও বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাড্ডা, মেরুল, রামপুরা কাঁচাবাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্য মূল্য তালিকায় দেখা গেছে, প্রতি কেজি মাঝারি মানের চাল গত সপ্তাহের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি তেজপাতার দাম ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, জিরা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, আমদানি করা আদা ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, আমদানি করা রসুন ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। কেজিতে ছোট এলাচ ৫০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি হলুদ ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ ও ধনে ২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। জানতে চাইলে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, উৎসবে বিক্রেতারা সুযোগ খোঁজেন। ভোক্তাকে জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। সে জন্য বাজার তদারকি সংস্থাগুলোকে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। যাতে বিক্রেতারা বাড়তি মুনাফা করে ভোক্তাকে ঠকাতে না পারেন। কারণ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের আয় কমেছে। সব শ্রেণীর ভোক্তা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজারের কামরুল রাইস এজেন্সির মালিক বলেন, সর্বশেষ গত দুই সপ্তাহ আগে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। তবে গত সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা ও সরু চালের দাম নতুন করে না বাড়লেও মাঝারি মানের চালের দাম নতুন করে বেড়েছে। তবে মোটা ও সরু চাল গত ২ সপ্তাহ ধরে বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, মাঝারি মানের চালের মধ্যে প্রতি কেজি পাইজাম চাল বুধবার বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৭ টাকা। যা গত বুধবারের হিসাবে ৭ দিন আগে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেক্ষেত্রে সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে এই চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। এছাড়া মিনিকেট প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা ও মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। তিনি জানান, মিল পর্যায় থেকে চালের দাম কমানো হচ্ছে না। যে কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কমছে না।
অন্যদিকে এদিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি তেজপাতার দাম ৩০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি জিরার দাম ২০ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ৪২০ টাকা, আমদানি করা আদা ২০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায়, ছোট এলাচের দাম ৫০ টাকা বেড়ে ২২০০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকা হয়েছে। মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি হলুদ ৮০ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা ও ধনে ১০ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর বনশ্রীর বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, বাড়িতে আমার মা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েসহ ৫ জন। বেতন ঠিকমতো হচ্ছে না। এর মধ্যে চালসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের সরবরাহ থাকলেও বিক্রেতারা বাড়তি দরে বিক্রি করছেন। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় অধিদফতরের পক্ষ থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বাজার তদারকি করা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। আশা করি দাম ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে।