নামধারী সিসিআইসি সংস্কার সিও দাবি কুষ্টিয়ার খোকসায় জমকালো আয়োজনে করে কোটি টাকা নিয়ে উধাও হেলিকপ্টার রুবেল

qqq

ছবি :শরিফ মাহমুদ  কুষ্টিয়া : প্রতারক চক্রের মূলহোতা রুবেল
কুষ্টিয়া থেকে শরিফ মাহমুদ:   যাতায়াত করত হেলিকপ্টারে, চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে দামি প্রাইভেট কারে ঘুরতেন এলাকায়, দিনে দুইজন ও রাতে দুইজন গ্রাম পুলিশের পাহাড়ায় থাকত ইউনিয়ন পরিষদ ভবণের বিট পুলিশিং কার্যালয়ে। পরিষদ ভবণের ছাদে রাত বসত জলসা ঘর। চলত সুন্দরী মেয়েদের অশস্নীল নৃত্য ও নেশার কাজ। মহামারি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের সরকারি নির্দেশনা অমাণ্য করে নামিদামি বহিরাগত শিল্পী এনে জমকাল অনুষ্ঠান করে প্রায় দুইমাসের মধ্যে সকল কর্মকান্ড অসমাপ্ত রেখে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় নামধারী কানাডিয়ান সংস’া সিসিআইসি’র কর্মকর্তারা।
ঘটনাটি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নে ঘটেছে। প্রায় দুই মাস ধরে প্রতারক চক্র নানান কর্মকান্ড পরিচালনা করলেও বিষয়টি জানেনা প্রশাসন। ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হলেন বাবুল আক্তার। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। প্রতারক চক্রের মূলহোতা রম্নবেল হোসেন ওরফে হেলিকপ্টার রম্নবেল। তিনি নামধারী সিসিআইসি সংস্কার সিও বলে দাবি করতেন। তার বাড়ি শরিয়তপুর জেলায়। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। সরেজমিন গিয়ে এলাকা ঘুরেঘুরে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের এক আত্মীয়র মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে লোভ দেখিয়ে হঠাৎ একদিন বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আসে হেলিকপ্টার। পরে চাদট ইয়াকুব আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় জমকাল আয়োজনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে পুলিশ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপসি’ত ছিলেন।
জমকাল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকাবাসী জানতে পারে যে গ্রামকে শহর করার লক্ষ্যে দুস’দের জন্য পাকা ঘর নির্মাণ, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নির্মাণ, আধুনিক পার্ক নির্মাণ, নদী ভাঙন রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ, সাবমার্সিবল পাম্প বসানো, জলবায়ু প্রজেক্টসহ প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে এসেছে সিসিআইসি নামের কানাডিয়ান সংস’ার প্রতারক চক্র। প্রথমে দুস’দের তালিকা প্রস’ত ও স্কুলের জায়গা নির্ধারণ করে। এরপর শুরম্ন হয় দুস’দের জন্য প্রায় ৯০ টি ঘর নির্মাণের কাজ। কয়েকটি সাব মার্সিবল পাম্পের কাজও শেষ হয়েছিল। চলমান কাজ দেখিয়ে আড়াই পার্সেন্ট ভ্যাটের শর্তে সিসিআইসি’র এক একটি প্রজেক্ট এক একজনকে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে ভাগ করে দেওয়া হয়। সেই ভ্যাটের টাকা হিসেবে প্রতারক চক্র প্রায় কয়েক কোটি টাকা নিয়ে চলতি মাসের তিন তারিখে হেলিকপ্টার করে উধাও হয়ে যায়।
এবিষয়ে বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এম এস ব্রিকসের মালিক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘ চেয়ারম্যান সাহেব একদিন পরিষদে ডাকল। সেখানে সিসিআইসি’র সিইও রম্নবেল ছিল। বলল বিদেশী সংস’ার উদ্যোগে এলাকায় দুস’দের জন্য চারশো ঘর নির্মাণ করা হবে ৩২ লাখ ইট লাগবে ও সিমেন্ট লাগবে। এছাড়াও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, বাঁধ নির্মাণ, জলবায়ু প্রজেক্ট সহ অনেক কাজ হবে। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে দুই লাখ ইট ও ছয়শো বসত্মা সিমেন্ট বাকীতে নিয়ে ঘরের কাজ শুরম্ন করেছিল, কিন’ চিটারী করে পালিয়েছে। বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বলেন,’ প্রায় দুইমাস পরিষদের তিনটি রম্নমে তারা ছিলেন। দিনে দুইজন ও রাতে দুইজন গ্রাম পুলিশ সার্বক্ষণিক পাহাড়ায় থাকতেন। দিনে এলাকায় ঘুরতেন। তিনি আরো বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব একজন বুদ্ধিমান ও ক্ষমতাসীন ব্যক্তি, তাই কিছু যাচাই বাছাই করিনি। উপজেলা প্রশাসনকেও জানানো হয়নি। আমার ভুল হয়েছে’।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কারম্নজ্জামান তালুকদার প্রথমে এবিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। পরে আন অফিসিয়ালি বলেন, ‘ আমরা কিছু জানিনা, আমার কোন পুলিশ একাজে জড়িত নয়। তাছাড়া যেখানে বাবুল আক্তার রয়েছে, সেখানে যাচাই বাছাইয়ের প্রয়োজনবোধ করিনি। ‘ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেজবাহ উদ্দিনও সিসিআইসি’র প্রতারণা নিয়ে প্রথমে ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি হননি। পরে শর্ত স্বাপক্ষে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘বিদেশী কোন প্রকল্পের কাজ হলে প্রথমে সরকারের সাথে চুক্তি হয়। পরে সরকার আমাদের কোন নির্দেশনা দিলে আমরা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করি। কিন’ এখানকার সিসিআইসি’র বিষয়ে কেউ আমাকে জানায়নি। আমি কিছু জানিও না।ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভাল বলতে পারবেন।’
এবিষয়ে খোকসা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আকতার বলেন, উন্নয়নে স্বার্থে প্রজেক্টটি বাসত্মবায়ন করতে চেয়েছিলাম, কিন’ প্রতারণার বিষয় বুঝতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, উপজেলা প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল।
শরিফ মাহমুদ
কুষ্টিয়া
০১৭১২-০৭৬০৯৯
২৩-০১-২০২১

Post a Comment

Previous Post Next Post