খুলনাঞ্চলে নতুন কৌশলে চলছে রমরমা মাদকের ব্যবসা

Capture

বি এম রাকিব হাসান, খুলনা:   নিত্য নতুন কৌশলে খুলনা মহানগরীসহ জেলায় চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। অবস’া এমন হয়েছে, খুলনার এমন কোন স’ান নেই যে সেখানে মাদক ব্যবসা চলছে না। পুলিশ, র‌্যাব, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর এমনকি এপিবিএন প্রতিনিয়ত মাদকের বিরম্নদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলেও থামছে না মাদক ব্যবসায়ীরা।
এখন আর নির্ধারিত কোন স্পট নয়, যে যেভাবে পারছে সেখান থেকেই মাদকের ব্যবসা শুরম্ন করেছে। মাদকের ব্যবসা বর্তমানে প্রচন্ড লাভজনক হওয়ায় করোনা ভাইরাস সংক্রমের এই ঝুকির মধ্যে ব্যবসায়ীরা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মাদক ব্যবসা। এক সময় নগরীতে নির্ধারিত কিছু স্পট থাকলেও এখন কোন স্পট বলে কিছু নেই।
সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের কারণে পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মাদক বিরোধী অভিযানও কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে খুলনায় দিন দিন বেড়ে চলেছে মাদক বিক্রেতা ও সেবীর সংখ্যা।
বিক্রেতারা মাদক দ্রব্য ক্রেতার কাছে পৌছে দিতে নানা ছদ্দবেশও ধারণ করছে বলে জানা গেছে। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি সেজে, মটরসাইকেলে প্রেস স্টিকার লাগিয়ে, স্কুল কলেজের ইউনিফরম পরে, পাগল ও ভিখারির বেশে এবং ভ্রাম্যমাণ হকারও সাজছে তারা। একই কায়দায় এই সব ব্যবসায়ীরা নগরীতে নিয়ে আসছে ইয়াবা, গাঁজা, মদ, হেরোইন, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক সামগ্রী। প্রায় প্রতিদিনই এই ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ছে উঠতি বয়সীরা। নগরীর প্রায় সব এলাকাতেই প্রতিদিন মাদক বিক্রি করছে তারা। মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচন্ড একতা থাকায় তাদের বিরম্নদ্ধে সাধারণ মানুষ কোন কথা বলতে সাহস পায় না।
বর্তমানে খুলনা মহানগরীর বার্মাশীল রোড এলাকা, রয়েলের মোড়, সাত রাসত্মার মোড়, তালতলা, ষ্টেশন রোড, ৪ ও ৫ নং ঘাট, হেলাতলা, নতুন বাজার, ২নং কাস্টম ঘাট, টিবি ক্রস রোড, শিল্প ব্যাংক ভবনের পিছনের বসিত্ম, পিটিআই মোড়, টুটপাড়া, শেখপাড়া, গবরচাকা মেইন রোড, সোনাডাঙ্গা ট্রাক স্ট্যান্ড, সোনাডাঙ্গা বাইপাস রোড, নবপলস্নী, গলস্নামারী, বয়রা ইসলামিয়া কলেজ মোড় সংলগ্ন (শেরের মোড়), খালিশপুর, দৌলতপুর বাজার, পাবলা, রেলিগেট, ফুলবাড়িগেট, ফুলতলা, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, গোবরচাকা মধ্যপাড়া, পশ্চিম বানিয়াখামার, সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড, শিববাড়ি, নিউমার্কেট, হাউজিং বাজার, হাউজিং নিউ কলোনি, আলমনগর, বিআইডিসি রোডের বন্ধ গেট, নিরালা কাঁচাবাজার, চিত্রালী বাজার, সদর হাসপাতাল এলাকা, মর্ডাণ ফার্নিচার মোড়, খানজাহান আলী রোড এলাকায় অবাধে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল বিক্রি হচ্ছে।
তবে পুলিশের খাতায় ৭০টির বেশী মাদক বিকিকিনির স্পট রয়েছে। খুলনা মহানগরীর স্টেশন রোডস’ বার্মাশীল এলাকায় রেলওয়ের জমি ভাড়া নিয়ে কমপড়্গে ৩০টি ঘরে মাদক ব্যবসা চলছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস’ার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যসত্মতায় এই সব এলাকায় মাদক ব্যবসা প্রসার লাভ করেছে।
সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, খুলনা মহানগরীর স্বল্প মূল্যের আবাসিক হোটেলগুলোতে ইয়াবার ব্যবহার বেশি। যুব সমাজও বেশ আসক্ত হয়ে পড়েছে এর প্রতি। দীর্ঘদিন ধরে এখানকার মাদকসেবীরা নেশা হিসেবে হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল, মদ, তাড়ি, ডিটি জেসিক ইনজেকশন ও ডিএস সিপরিট সেবন করে আসছে।
মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলো থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, নেশাগ্রসেত্মর তালিকায় এমনকি পুলিশ সদস্য, প্রভাবশালী রাজনীতিক, চিকিৎসক, আইনজীবী, সংবাদকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশাজীবী মানুষের নামও রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস’ার কতিপয় সদস্যদের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের রয়েছে সখ্যতা। ফলে মাদক ব্যবসায়ীরা বেপরোয়াভাবে তাদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। ধরা পড়লেও বেশী দিন তাদের জেলে আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
খুলনা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাকিব উজ্জামান বলেন, মাদক দমনে খুলনায় নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। শুধু অভিযান নয়, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমেও মাদক বিক্রেতাদের সাজা দেয়া হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক সময় যৌথ অভিযান চালানো হয়। কিন’ সব সময় তা হয়ে ওঠে না। তবুও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর সীমিত লোকবল নিয়ে খুলনাকে মাদক মুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী মাদক কারবারীদের সাথে জড়িত নয় বলে দাবি করেন তিনি।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post