আলুবীজ সঙ্কটের আশঙ্কা

আলুবীজ সঙ্কটের আশঙ্কা

Kbdnews ডেস্ক  :  কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে আলু। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কেজিতে প্রায় ২৫ টাকা বেশি পাওয়ার কারণে কৃষক ও হিমাগার ব্যবসায়ীরা দ্রুত আলু বিক্রি করে দিচ্ছে। তাতে সংরক্ষণাগারে রাখা সাধারণ আলুর সঙ্গে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বীজআলুও। ফলে দ্রুত কমে আসছে দেশে আলুবীজের মজুদ। ইতিমধ্যে এ মজুদ বর্তমানে সম্ভাব্য চাহিদার চেয়েও এক লাখ টনের কমে নেমে এসেছে। এমন অবস্থায় সঙ্কটের শঙ্কায় কৃষকরাও এখন দ্বিগুণ দাম দিয়ে আলুবীজ সংগ্রহ করছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে আলুবীজ মজুদের পরিমাণ সাড়ে ৭ লাখ টনে নেমে এসেছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) অধীন হিমাগারগুলোয় বীজআলু মজুদ রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টন। যদিও গত অর্থবছরেও দেশে আলুবীজের চাহিদা ছিল প্রায় ৮ লাখ টন। চলতি বছর দাম বেশি থাকায় এ চাহিদা আরো ৫০ হাজার টন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই হিসেবে বর্তমানে দেশে আলুবীজের মজুদ আছে সম্ভাব্য চাহিদার চেয়েও এক লাখ টন কম। যেখানে গত মাসের মাঝামাঝিতেও দেশের হিমাগারগুলোয় আলুবীজ মজুদ ছিল প্রায় ৯ লাখ টন।

আলুবীজ সঙ্কটের আশঙ্কা
সূত্র জানায়, কয়েক বছর ধরেই দেশে সাড়ে ৪ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে আলু আবাদ হচ্ছে। আর ইতিমধ্যে দেশে আলুর উৎপাদন কোটি টনের মাইলফলক ছাড়িয়ে গিয়েছে। এবা পরিমাণ আলু উৎপাদনের জন্য প্রায় ৮ লাখ টন বীজের প্রয়োজন পড়ে। আর ওই চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশই দেশে উৎপাদন হয়। যদিও আগে এ আলুবীজের চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর ছিল। বর্তমানে দেশে আলুবীজের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় জোগান দিচ্ছে দেশের কৃষক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিএডিসি। তবে তার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বীজের সংস্থান এখনো খুব কম। গত বছরে বিএডিসি মাত্র ৩৫ হাজার টন বীজের সংস্থান দিয়েছিল। তাছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে জোগান দেয়া গেছে মাত্র ৮৫ হাজার টন। অর্থাৎ মোট প্রয়োজনীয় বীজে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থান মাত্র ১৫ শতাংশ। আর কৃষকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংরক্ষণের মাধ্যমে বাকি বীজের সংস্থান হচ্ছে। কিন্তু চলতি বছর ভালো দামের কারণে কৃষকরা ওই বীজআলুও বিক্রি শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে কার্যকরভাবে বীজআলু বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আবাদি আলুতে সংকট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।
আলুবীজ সঙ্কটের আশঙ্কা
সূত্র আরো জানায়, চলতি বছর আলুর ভালো দামের কারণে কৃষক পর্যায়ে পণ্যটির উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহ বাড়তে পারে। ফলে চলতি অর্থবছরে বীজআলুর চাহিদা বেড়ে গত অর্থবছরের চেয়েও প্রায় ৫০ হাজার টন বেশি দাঁড়াতে পারে। ইতিমধ্যেই বেশি দাম পাওয়ায় হিমাগার ব্যবসায়ী ও কৃষকরা তাদের মজুদকৃত সাধারণ আলুর সঙ্গে বীজআলুও বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে বীজআলুর মজুদে টান পড়তে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বীজআলুর মজুদ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। ওই লক্ষ্যে সংস্থাটি ইতিমধ্যে আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল ও হিমাগার সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে হিমাগার ব্যবসায়ীরা শুধু সরাসরি কৃষকদের কাছে বীজআলু বিক্রি করতে পারবে। সেজন্য কৃষকের প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় অনুমোদনপত্র দেবেন কৃষি কর্মকর্তারা। পাশাপাশি সব হিমাগারে সাধারণ আলু থেকে বীজআলুকে পৃথক করা হয়েছে। এ পৃথকীকৃত আলুবীজ বিক্রি করতে গেলে হিমাগার ব্যবসায়ীদের অবশ্যই জেলা প্রশাসক ও কৃষি কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে। আর এসব উদ্যোগের কারণেই আসন্ন উৎপাদন মৌসুমে দেশে আলুবীজের কোনো সংকট এড়ানো যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আলুবীজ সঙ্কটের আশঙ্কা
এদিকে আলুবীজ সঙ্কট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) পরিচালক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানা, একদিকে দেশে আলুর উৎপাদন কিছুটা কম হওয়া, অন্যদিকে ভোক্তা পর্যায়ে বাড়তি চাহিদার কারণে আলুর চাহিদা বেড়েছে। তাছাড়া সবজির দাম বেশি থাকার কারণে দেশে এখন আলুর ভোগপ্রবণতাও বেশি। এমন অবস্থায় হিমাগারে আলুর চাহিদা ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। হিমাগারে রাখা আলুর সিংহভাগই কৃষকদের। ফলে তারা চাওয়ামাত্র হিমাগার মালিকরা আলু ছেড়ে দিচ্ছে। তবে বীজআলুর বিষয়ে নির্দেশনা মেনে হিমাগারগুলো এখন বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
আলুবীজ সঙ্কটের আশঙ্কা
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, ভালো দাম পাওয়ার কারণে কৃষক পর্যায়ে বীজআলু বিক্রির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেজন্য অগ্রিম সতর্কতা হিসেবে আলুবীজের মজুদ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের সব হিমাগারে আলুবীজের পরিমাণ নির্ধারণ করে সেগুলোকে ইতিমধ্যে আলাদা করা হয়েছে। সে আলুবীজ যাতে আবাদ ছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে বিক্রি না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় কৃষি ও বিপণন কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক তদারক করছে। এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ আলুবীজ মজুদ রয়েছে, তা চাহিদার প্রায় সমান। তবে বাড়তি চাহিদা হলে আমদানির মাধ্যমে তা পূরণ করা সম্ভব হবে। প্রতি বছর বেশকিছু আলুবীজ আমদানি করা হয়। ফলে আলুবীজের কোনো সংকট তৈরি হবে না।

 

 

 

Post a Comment

Previous Post Next Post