স্টাফ রিপোর্টার : দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। আরো সুখের খবর, এখন বেশি ওজনের ইলিশ মিলছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তিন লাখ ৮৭ হাজার টন ইলিশ ধরা হয়েছিল; আর ২০১৮-১৯ সালে সেটা বেড়ে হয়েছে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার টন। ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে জাটকা ধরা বন্ধ করা এবং নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ ধরা বন্ধ করার কারণে ধারাবাহিকভাবে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে বলে মত মৎস্য কর্মকর্তাদের। মা ইলিশ রক্ষায় সরকার প্রজনন মৌসুম চিহ্নিত করে ২২ দিন ইলিশ শিকার, আহরণ, বাজারজাতকরণ, বিক্রি ও পরিবহণ নিষিদ্ধ করে। আট মাস জাটকা নিধন এবং ৬৫ দিন সাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকছে। এসবের ফলে এখন সুফল মিলবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১০ বছর আগে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত ইলিশের পরিমাণ ছিল ২.৯৮ লাখ টন।
এ বছর আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর ২২ দিন ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রে ইলিশসহ সব ধরনের মৎস্য আহরণ বন্ধ হচ্ছে। বহির্বিশ্বে রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় দেশে ইলিশের চাহিদা পূরণও হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। তাদের মতে, মা ইলিশ রক্ষা করার কারণে গত কয়েক বছরে উৎপাদন যেমন বেড়েছে, দামও কমে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এসেছে। এ ছাড়া সাগর ও নদ-নদীতে ধরা পড়া ইলিশের গড় ওজন গত তিন বছরে ৩৫০ গ্রাম বেড়েছে। মৎস্য অধিদফতরের ইলিশ ব্যবস্থাপনা শাখার সহকারী পরিচালক মাসুদ আরা মমি বলেন, আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর ২২ দিন দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহণ, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় এবং মজুদ নিষিদ্ধ থাকবে। তিনি বলেন, সরকারের দিক থেকে এ বিষয়ে জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য উদ্দীপনামূলক প্রচারাভিযান চালানো হবে।
মাসুদ আরা মমি বলেন, নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ ধরা ঠেকাতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি জেলেদেরও মানসিকভাবে এই কার্যক্রমে যুক্ত করে উপকূলীয় এলাকায় প্রচার কাজ চালানো হবে, যাতে জেলেরা নিজেরাই নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা থেকে স্বতস্ফূর্তভাবে বিরত থাকবেন।
তিনি জানান, বাজারে বিক্রি বন্ধ করতে ১০টি টিম কাজ শুরু করছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়া জেলের জন্য কী ব্যবস্থা নেয়া হবে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো সন্দেহ নেই যে, এই ২২ দিন ইলিশ ধরতে না পারায় জেলেদের যথেষ্ট কষ্ট সহ্য করতে হবে। এ জন্য ৩৬টি জেলার ১৫২টি উপজেলায় মা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৪২টি জেলে পরিবারের জন্য ২০ কেজি হারে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম শুরুর পূর্বেই এ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
এ মৌসুমে গত মৌসুমের তুলনায় অতিরিক্ত ১ লাখ ২০ হাজার ২৬৩টি জেলে পরিবারকে এ খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। মাসুদ আরা বলেন, দেশে ইলিশের চাহিদা মেটানোর জন্য ২০১২ সালের ২ জুলাই আমরা ইলিশ রফতানি বন্ধ রেখেছি। তবে দীর্ঘদিন পরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে ভারতে কিছু ইলিশ দেয়া হয়, সেটাও একেবারেই নগণ্য।
পানি ভেদে ইলিশ মাছের স্বাদে তারতম্যের বিষয়ে মাসুদ আরা বলেন, ইলিশের স্বাদ মূলত নির্ভর করে মাছটা পরিপক্ব হয়েছে কিনা। পরিপক্ব ইলিশ যেখানেই থাকুক স্বাদ বেশি হবেই। তবে পানি ভেদে স্বাদ কিছুটা বেশি হয়, কারণ লবণাক্ত পানি থেকে মিঠা পানিতে যখন ইলিশ আসে, তখন তার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হয়। মিঠা পানির খাবারে কিছুটা ফ্যাট থাকে, চর্বি থাকে যার কারণে স্বাদ বাড়ে। জুলাই থেকে অক্টোবরে ইলিশ মিঠা পানিতে আসে, সে সময় স্বাদ বেশি হয়।
মৎস্য বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, একসময় ১১ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল, পরে ১৫ দিন বন্ধ ছিল, এখন ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ। আসলে ইলিশ সারা বছরেই ডিম দেয়। তবে এই ২২ দিন ৬০-৭০ ভাগ ইলিশ ডিম দেয়। যার কারণে উপযুক্ত সময় হিসেবে এই ২২ দিনকে ধরা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে এই ২২ দিন ঠিক আছে। ইলিশের স্বাদের তারতম্যের বিষয়ে অধ্যাপক মনিরুল বলেন, স্বাদের তারতম্য নির্ভর করে পানির বৈশিষ্ট্যের ওপর। মিঠা পানি বা স্বাদু পানিতে উদ্ভিদ কণা বেশি থাকে, যার কারণে স্বাদের তারতম্য হয়। যে এলাকার পানি নোনা সেখানে উদ্ভিদ কণার উপস্থিতি একেবারেই কম, যার কারণে স্বাদের তারতম্য হয়।
পানি ভেদে ইলিশের স্বাদের তারতম্যের কারণ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, চাঁদপুর, বরিশাল, পদ্মা, নাফ নদী সারাদেশের ইলিশের স্বাদ এক এক জায়গার একেক রকম। এর কারণ হচ্ছে পানিতে প্রোটিনের পরিমাণ। এ ছাড়া একেক জায়গার পনির মাছ একেক রকম তৈলাক্ত হয়।