ছবি :বি এম রাকিব হাসান, খুলনা
বি এম রাকিব হাসান, খুলনা: খুলনায় জেল ও জরিমানা দিলেও কোন কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না সাদা সোনাখ্যাত চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ। পুশ বন্ধে নগরী ও জেলায় জেলা প্রশাসন, র্যাব, কোস্টগার্ড, মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়েও নির্মূল করতে পারছে না পুশ প্রথা।
এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাগদা ও গলদা চিংড়িতে ওজন বাড়ানোর জন্য পুশ করে জেলিসহ বিভিন্ন অপদ্রব্য। করোনাকালেও থামছে না চিংড়িতে পুশ। এরপর রফতানি করা এসব চিংড়ি মাঝে মধ্যেই বিদেশ থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে দেশে। দিনে দিনে চাহিদাও কমছে।
একদিকে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে চিংড়িতে মড়ক লাগায় উৎপাদন হ্রাস হচ্ছে। অন্যদিকে নিত্যনতুন পুশ উপকরণে চিংড়িতে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যবহারে আবারো দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাত চিংড়ি শিল্পে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন খুলনা অঞ্চলের রপ্তানিকারকসহ শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংশিস্নষ্টরা।
জানা গেছে, খুলনার নতুন বাজার ও রূপসায় প্রায় সাত শতাধিক ডিপো রয়েছে। কিছু সংখ্যক ডিপোতে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করা হয়। প্রতি রাতেই খুলনার বিভিন্ন স’ানে চলে গলদা আর বাগদা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশের কাজ। সন্ধ্যা থেকে শুরম্ন করে ভোর অবধি সিরিঞ্জ দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় ফিটকিরির পানি, ভাতের মাড়, সাগু, এরারম্নট, লোহা বা সীসার গুলি, মার্বেল, ম্যাজিক বল, জেলিসহ বিভিন্ন পদার্থ।
খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ০৫ অক্টোবর পর্যনত্ম অভিযান চালিয়ে মোট ১০৫টি বার পুশ করা চিংড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে এক হাজার ৬২০ কেজি চিংড়ি। জরিমানা করা হয়েছে ৯ লাখ দুই হাজার টাকা। কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে তিন জনকে। সর্বশেষ সোমবার (০৫ অক্টোবর) রূপসা উপজেলার বাগমারা এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালতের পরিচালিত হয়। এ সময় চিংড়িতে জেলি পুশ করায় তিন জনকে আটক করা হয় এবং লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
রূপসা চিংড়ি বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু আহাদ হাফিজ বলেন, যারা চিংড়িতে পুশ করে তারা অধিকাংশই মৌসুমী ব্যবসায়ী। তারা নিয়মিত পুলিশ, কোস্টগার্ড, মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ এবং প্রশাসনের অভিযানে ধরাও খাচ্ছে। তাদের জেল-জরিমানাও হচ্ছে।
খুলনা কার্যালয়ের মৎস্য পরিদর্শক ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপটন সরদার বলেন, পুশ বিরোধী আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। আগামীতে কেউ পুশ করা চিংড়িসহ ধরা পড়লে তাকে জরিমানার পাশাপাশি কারাদন্ডও দেওয়া হবে।
মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি শেখ মো: আব্দুল বাকি বলেন, আমাদের পড়্গ থেকে ২২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা আছে। তারা চার ভাগে বিভক্ত হয়ে মৎস্য কারখানাগুলোতে পুশ করা চিংড়ি কিনছে কি-না তা তদনত্ম করে। যখন কোথাও এ ধরনের কর্মকান্ড দেখা যায় আমরা সাথে সাথে মৎস্য মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের খবর দিই। তবে সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তারা তাদের ধরার পরে বেশির ভাগ সময় শুধু জরিমানা করে ছেড়ে দেন। পরেরদিন অসাধু ব্যবসায়ীরা আবারও সেই একই কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। তাদের যদি ধরা মাত্রই জরিমানার পাশাপাশি কারাদন্ডও দিত, তাহলে এই চক্রটি চিংড়িতে পুশ করতে সাহস পেত না।