করোনায় সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কৃষকের সেবায় ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসেনি

kresok

স্টাফ রিপোর্টার :  করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও দেশের কৃষি খাত পুরোটাই সচল ছিল। আর সংকটের সময় কৃষি খাতকে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু করোনার কারণে উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রায় সব ব্যাংকের শাখা বন্ধ ছিল। ফলে সংকটের সময় কৃষকরা ঋণ পায়নি। এমনকি কৃষকরা নতুন ফসল আবাদে ঋণের জন্য আবেদনই করতে পারেননি। ফলে করোনার ধাক্কায় মাত্র তিন মাসে ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণ কমেছে ৫০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। তবে স্বল্প পরিসরে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক কিছু ঋণ বিতরণ করেছে। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

কৃষকের সেবায়
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ব্যাংকগুলো চলতি বছরের মার্চে কৃষি খাতে ৩ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা ঋণ দেয়, যা আগের বছরের মার্চের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। গত বছরের এই মাসে ৬ হাজার ২২২ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হলেও পরের মাস এপ্রিলে কৃষিঋণ বিতরণে ধস নামে। এপ্রিলে মাত্র ৪৯৬ কোটি টাকা

ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। আগের বছর একই সময় ঋণ দেয় ২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এপ্রিলে ঋণ বিতরণ কমে প্রায় ৭৯ শতাংশ। তবে এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে ঋণ বিতরণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। তবে তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৭ শতাংশ কম। আগের বছরের মে মাসে ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে ১ হাজার ৮১০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে। সব মিলিয়ে লকডাউনের তিন মাসে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলো ৫ হাজার ৮৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। আগের বছরের এই তিন মাসে ঋণ দেয় ১০ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ঋণ বিতরণ কমেছে ৫০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। মূলত করোনার কারণে দীর্ঘদিন ব্যাংকিং সেবা সীমিত ছিল। ফলে ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। তবে এখন ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে। পাশাপাশি লকডাউনের কারণে ব্যাংক শাখা বন্ধ থাকায় কৃষিঋণের আদায়ও অনেক কমে গেছে। এপ্রিলে আদায় হয়েছে মাত্র ৭৬৭ কোটি টাকা। অথচ আগের বছরে এই মাসে আদায় হয়েছিল ১ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। মে মাসে আদায় আরো কমে মাত্র ৫৬১ কোটি টাকায় নেমে আসে।
কৃষকের সেবায়
সূত্র জানায়, সদ্যসমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। কিন্তু ১১ মাসে (জুলাই-মে) বিতরণ করা করেছে ১৮ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এছাড়া আগের বছরের আলোচ্য ১১ মাসে ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে ঋণ দেয় ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। ওই হিসাবে ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ। কৃষি খাতে স্বল্পসুদে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির জন্য সরকার আগামী ১ বছর সুদ ভর্তুকি দেবে । কৃষকদের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়ার কথা ছিল। আর ৫ শতাংশ সুদ ভর্তুকি হিসেবে ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করবে সরকার। তাছাড়া কৃষি খাতে ঋণের অন্তত ৬০ শতাংশ শস্য খাতে দিতে হবে। কিন্তু সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কৃষকদের সেবা দিতে এগিয়ে আসেনি ব্যাংকগুলো। কারণ শুধু শহরাঞ্চলে সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা ছিল।

সূত্র আরো জানায়, আগের বছরের মে মাসে কৃষিঋণ আদায় হয় ১ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। আর বিগত এগারো মাসে আদায় ২০ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা থেকে কমে নেমেছে ১৮ হাজার ২৭১ কোটি টাকায়। সামগ্রিকভাবে আদায় কার্যক্রম কমেছে সাড়ে ১১ শতাংশ। আর এপ্রিল ও মে মাসে আদায় অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। যদিও ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রম স্বাভাবিক ধারায় ছিল। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি- এই ৯ মাসে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ হয় ১৫ হাজার ৯২ কোটি। আগের বছর ছিল ১৪ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। কৃষি ঋণ বৃদ্ধি পায় ৭ শতাংশ। অন্যদিকে আদায়ের পরিমাণ ১৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয় ১৫ হাজার ৫০৮ কোটি।
কৃষকের সেবায়
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী হোসেন প্রধানিয়া জানান, সীমিত ব্যাংকিংয়ের কারণে কৃষিঋণ বিতরণ কিছুটা ব্যাহত হতে পারে। করোনার কারণে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক কাঙ্ক্ষিত ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। তবে এ সময়েও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক তার নির্ধারিত লক্ষ্য ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে।

কৃষকের সেবায়

Post a Comment

Previous Post Next Post