ঋণ ছাড়া কোরবানির চামড়া কিনতে পারবে না অধিকাংশ ট্যানারি মালিক

t

স্টাফ রিপোর্টার  :  সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর ট্যানারিগুলোয় বর্তমানে ৪০০-৫০০ কোটি টাকার চামড়া জমা আছে। এ অবস্থায় ট্যানারি মালিকদের জন্য আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ঋণ সহায়তা নিশ্চিত করা ছাড়া অধিকাংশ ট্যানারি মালিকদের পক্ষে চামড়া ক্রয় সম্ভব হবে না। গতকাল চামড়া শিল্প উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় সভায় বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ হতে এমন কথা বলা হয়।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে গতকাল ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এ টাস্কর্ফোসের সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব কেএম আলী আজম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহেদ আলী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রমেশ বিশ্বাস, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহিন আহমেদ, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এঙ্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সভায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, চামড়া শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে আসন্ন ঈদুল আজহায় চামড়া ব্যবস্থাপনায় জড়িত ব্যবসায়ীদের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে চামড়া শিল্পে জড়িত ব্যবসায়ীদের লাভের কথা বিবেচনা করে কাঁচা চামড়া ও লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এতে ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত পরিমাণে চামড়া ক্রয় ও সংরক্ষণের সক্ষমতা অর্জন করবেন।

সভায় জানানো হয়, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মসজিদের ঈমাম, মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী, চামড়া ছাড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। সভায় তথ্য মন্ত্রণালয় ও লেদার বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের মাধ্যমে ঈদুল আজহার কয়েক দিন আগে থেকে টেলিভিশনে জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় সালমান ফজলুর রহমান ট্যানারি শিল্পের জন্য বাজেট সহায়তা নিশ্চিত করতে অর্থ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, হাজারীবাগে ট্যানারি মালিকদের জমি হতে রাজউকের ‘রেড জোন’ প্রত্যাহার করা হলে মালিকদের ঋণ পেতে সুবিধা হবে।

ট্যানারি মালিকদের জন্য ঋণসহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে আসন্ন ঈদুল আজহায় চামড়া পরিস্থিতির উন্নতি হবে না এমন আশঙ্কা জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, চামড়া শিল্পের ব্যবসায়ীদের সাভারে যাওয়ার জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া ছিল। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, তাদের সিইটিপি তৈরি করে দিতে হবে, যা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। আরেকটি ছিল ছোট ছোট ব্যবসায়ী, যারা অন্য পণ্য তৈরি করত তাদেরকে ওখানে ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু তার কোনোটাই করা হয়নি।

তিনি আরো বলেন, চামড়া শিল্পের তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে ব্যাংকাররা বলছেন প্রতি বছর ঈদ এলে তাদের ব্যাংক লোন দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু তারা আগের লোনগুলো পরিশোধ করে না। এখানেও সমস্যা হচ্ছে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত ব্যাংকিং লেনদেন ভালো ছিল। কিন্তু সাভার যাওয়ার পর থেকে অর্থাৎ আমরা যখন গায়ের জোরে তাদের সাভারে পাঠিয়ে দিলাম, এর পর থেকে তাদের ব্যাংক লোনগুলো আর নিয়মিত নেই। তারা প্রতিনিয়ত খেলাপি হয়েছেন। এছাড়া হাজারীবাগের জমিগুলো নিয়েও আছে নানা সমস্যা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া কাঁচা চামড়া ও লবণযুক্ত চামড়ার সঠিক মূল্য নির্ধারণ এবং ট্যানারি মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি এ লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এখন থেকেই পরিকল্পিতভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।

শিল্প সচিব কেএম আলী আজম বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে চামড়া ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হবে। এজন্য শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিসিকের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ বলেন, ঈদের পরের তিন মাস চামড়া প্রক্রিয়াজাতের পরিমাণ বাড়বে। এ সময় ট্যানারিগুলোয় আন্তর্জাতিক মানদ-ে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা হলে সিইটিপির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে। অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করলে ট্যানারিগুলো লেদারের ওয়ার্কিং গ্রুপের সার্টিফিকেট অর্জনে ব্যর্থ হবে।

দেশে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ রয়েছে এবং কোরবানির সময় লবণের কোথাও কোনো ঘাটতি হবে না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সাভারে অবস্থিত ঢাকা চামড়া শিল্পনগরীর সিটিপির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এছাড়া শিল্পনগরীতে অন্যান্য অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে এবং ফায়ার সার্ভিস নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর ট্যানারিগুলোয় বর্তমানে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার চামড়া জমা আছে। ট্যানারি মালিকদের জন্য আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ঋণসহায়তা নিশ্চিত করা ছাড়া অধিকাংশ ট্যানারি মালিকের পক্ষে চামড়া ক্রয় সম্ভব হবে না। তিনি বিষয়টি সুরাহার জন্য টাস্কফোর্স সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post