(আবারও পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরি )"সরকারের কঠোর পদক্ষেপেও টনক নড়ছে না ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের

(আবারও পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরি )"সরকারের কঠোর পদক্ষেপেও টনক নড়ছে না ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের

বিশেষ প্রতিনিধি  : দেশে কয়েকমাস ধরে পেঁয়াজের সংকট অব্যাহত রয়েছে। এ সংকট কাটাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। গেল সপ্তাহে কিছুটা দাম কমলেও চলতি সপ্তাহে ফের বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। দামের এ উত্থান-পতনে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠে এসেছে। সরকারের কঠোর পদক্ষেপেও টনক নড়ছে না ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের। এদিকে কয়েক দফায় আমদানি করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলোনায় কম বলে দাবি করছে ব্যবসায়ীরা। তবে বাজারে প্রচুর সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও দাম কমছে না প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। সম্প্রতি কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে কার্গো উড়োজাহাজ যোগে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারে বৃহস্পতিবার কেজি প্রতি ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল রোববার এ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২শ থেকে ২শ ২০ টাকায়। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এক সপ্তাহ আগে পৌনে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল পেঁয়াজের দাম।

(আবারও পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরি )"সরকারের কঠোর পদক্ষেপেও টনক নড়ছে না ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের
গতকাল রোববার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২শ থেকে ২শ ২০ টাকা কেজি দরে। খুচরায় মায়ানমারের পেঁয়াজ ১শ ৮০ টাকা, মিসর ও চায়নার পেঁয়াজ ১শ ২০ থেকে ১শ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। তবে তা খুবই সামান্য।

এদিকে দামের অস্থিরতার কারণে কিছু দোকানি লোকসানের ভয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না। আবার অনেক দোকানি জরিমানার ভয়ে পেঁয়াজ তুলছেন না। কোনো কোনো খুচরা ব্যবসায়ীরা দোকানে রাখছেন স্বল্প পরিমাণ পেঁয়াজ।

অন্যদিকে রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে গতকাল রোববার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। মায়ানমারের পেঁয়াজ ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায়, মিসরের পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৪ টাকায়, চায়নার পেঁয়াজ ১০০ টাকায়, পাকিস্তান থেকে বিমানযোগে আসা পেঁয়াজ ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। রাজধানীর বাজারের মতো পেঁয়াজের দাম সারাদেশেই বেড়েছে বলে খবর পাওয়া যায়।
(আবারও পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরি )"সরকারের কঠোর পদক্ষেপেও টনক নড়ছে না ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের
তবে আমদানি করা পেঁয়াজ আরও বেশি পরিমাণে আসার পর দাম কমবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বাজারে নতুন গাছ পেঁয়াজের সরবরাহও দিন দিন বাড়ছে। তবে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার জন্য দাম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে পেঁয়াজের দাম কমে পুনরায় বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তবে আগামী ১০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করেন তিনি। গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন আশার কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে দেশি পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে আসতে শুরু করবে। তখন বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। এছাড়া ২৯ নভেম্বরের মধ্যে কম করে হলেও ১২ হাজার টন পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছবে।

দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ৪ দিন ধরে পরিবহণে সমস্যা হচ্ছে, ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না। দাম বাড়ার এটাও একটা কারণ। তবে কোথাও কম দামে বিক্রি হচ্ছে, আবার কোথাও কিছুটা বেশি।

বাজারে সরবরাহ ঘাটতি ও দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের উদ্যোগে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ’র (টিসিবি) ট্রাকে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতার ভিড় দিন দিন বেড়েই চলছে। রাজধানীতে গতকাল শনিবার হাজার হাজার কেজি পেঁয়াজ মাত্র কয়েক ঘণ্টায়ই বিক্রি শেষ হয়েছে বলে জানা যায়। এর ক্রেতারা জানান, চাহিদার তুলনায় সরবারহ কম থাকায় অল্প সময়ই বিক্রি হচ্ছে টিসিবি’র পেঁয়াজ।

আড়তে দেশি পেঁয়াজ নেই। উপরন্তু আমদানি করা পেঁয়াজও ফুরিয়ে আসছে বলে দাম বাড়ছে। এমনটি জানিয়েছেন শ্যামবাজার কৃষিপণ্য বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. মাজেদ। তিনি বলেন, বড় বড় ব্যবসায়িক গ্রুপ আমদানি করছে, এই খবরে নিয়মিত আমদানিকারকরা আমদানি বাড়াননি।

জানা যায়, গত ২০ নভেম্বর সন্ধ্যায় পাকিস্তানের করাচি থেকে কার্গো উড়োজাহাজে করে ৮২ টন পেঁয়াজের প্রথম চালান আসে। এর আমদানিকারক ঢাকার শাদ এন্টারপ্রাইজ।

পেঁয়াজের সংকট কাটাতে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রেখেছে দেশের বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এস. আলম গ্রুপ। এ প্রতিষ্ঠানটি মোট ৫৮ হাজার ৫শ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করছে বলে জানা যায়। এর মধ্যেই প্রায় ২শ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশে এসে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে ১০টি কার্গো উড়োজাহাজ বুকিং নিশ্চিত করা হয়েছে।
(আবারও পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরি )"সরকারের কঠোর পদক্ষেপেও টনক নড়ছে না ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের
সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সংকট কাটাতে কেনা দামের চেয়ে কম দামে টিসিবি’র মাধ্যমে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এস আলম গ্রুপের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক সালাহ উদ্দিন। সমুদ্র পথে প্রতিষ্ঠানটির আমদানিকৃত পেঁয়াজবাহী কন্টেইনার জাহাজ মিসর থেকে ছাড়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। সংকট কাটাতে এ আমদানি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান সালাহ উদ্দিন। একইসাথে মিসরে পেঁয়াজের স্বল্পতা থাকায় তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আনছে প্রতিষ্ঠানটি।

উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে পেঁয়াজ রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ভারত। দেশটিতে পেঁয়াজের অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজারে চাপ পড়ে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০ থেকে ৪০ টাকার পেঁয়াজ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়। সংকট কাটাতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও শেষ পর্যন্ত দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post