স্টাফ রিপোর্টার ও ভোলা প্রতিনিধি : ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হযরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করার প্রতিবাদে আয়োজিত তৌহিদী জনতার সমাবেশ ঘিরে পুলিশ-জনতার সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন আরো অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। আহতদের মধ্যে পুলিশও রয়েছেন। গতকাল রোববার সকাল ১১টায় বোরহানউদ্দিন হাইস্কুল মাঠে এই ঘটনা ঘটে।
এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪ প্লাটন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ভোলার বোরহানউদ্দিনে পুলিশের সাথে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের পর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে ৪ প্লাটুন বিজিবি। সংঘর্ষে হতাহতের খবর পাওয়ার পর হেলিকপ্টারে করে এক প্লাটুন বিজিবি সদস্যদের ভোলায় পাঠানো হয়েছে বলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা দাবি করছেন, এই ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বোরহানউদ্দিন পৌর ৩নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিল মিরাজ পাটোয়ারির ছোট ভাই মাহফুজুর রহমান (৪৫) এবং মিজান (৪০) ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অপরজন মারা যান ভোলা সদর হাসপাতালে। এছাড়া দুপুর আড়াইটার দিকে আব্দুল গণি নামের আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল রোববার সকাল ১১টায় বোরহানউদ্দিন হাইস্কুল মাঠে পূর্ব ঘোষিত প্রত্যেক ইউনিয়ন থেকে কয়েক হাজার লোক নবী অবমাননা ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তিকারীর ফাঁসির দাবিতে সস্নোগান দিতে থাকে। কিন্তু পুলিশ ১১টার আগেই সমাবেশ শেষ করতে চাপ দেন। এতে করে দূরদূরান্ত থেকে আসা জনতা ক্ষেপে গিয়ে পুলিশের ওপর ইট পাটকেল ছুড়লে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে সাংবাদিক ও পুলিশসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের ভোলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্রে আবাসিক চিকিৎসক মো. শাহীন জানিয়েছেন, গুলিতে নিহত ২ জনের মৃতদেহ তার হাসপাতালে রয়েছে। আরও ২ জনকে মৃত অবস্থায় ভোলা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে জেলার সিভিল সার্জন রথীন্দ্রনাথ রায় জানিয়েছেন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ ও ভোলা সদর হাসপাতাল ছাড়াও কয়েকজনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বোরহানউদ্দিনের উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, ফেসবুকে ‘নবীর অবমাননার’ অভিযোগে স্থানীয় এক যুবকের বিচারের দাবিতে গতকাল রোববার সকালে উপজেলা সদরে একটি সমাবেশ হয় ‘মুসলিম তাওহিদী জনতা’র ব্যানারে। বেলা পৌনে ১১টায় সেখানে পৌঁছে তিনি দেখতে পান, সমাবেশে উপস্থিত এলাকাবাসী পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়ছে। সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল বেলা ১১টায়। কিন্তু আয়োজকরা সাড়ে ১০টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করে দিলে অংশ নিতে আসা জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আমি যখন পৌঁছেছি, তখনও বড় বড় মিছিল নিয়ে অনেকে সমাবেশে অংশ নিতে আসছিল। নিহতদের মধ্যে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র শাহীন এবং স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ছাত্র মাহবুব পাটোয়ারীর লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েরয়েছে। আর ভোলা সদর হাসপাতালে রয়েছে মিজান ও মাহফুজ নামে ২ জনের লাশ।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ওই তরুণের ফেসবুক আইডি থেকে শুক্রবার বিকালে একটি পোস্ট আসার পর তার ‘স্ক্রিনশট’ কয়েকটি আইডি থেকে ফেসবুকে ছড়ানো হয়। এরপর অনেকেই ফেসবুকে এর প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য ওই তরুণকে থানা হেফাজতে রেখে দেয়া হয়। পরে স্থানীয় আরও ২ জনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। ফেসবুকে ধর্ম অবমাননা করার গুজব ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার নজির রয়েছে।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কঙ্বাজার জেলার রামু উপজেলায় হামলা চালিয়ে লুটপাটসহ ১২টি বৌদ্ধ মন্দির ও ৩০টি বাড়িতে অগি্নসংযোগ করে একদল লোক। ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে রসরাজ নামে এক মৎস্যজীবীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে লোকজনকে ক্ষেপিয়ে তুলে ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেলে বিপ্লব চন্দ্র শুভর নিজের নাম ও ছবি সংবলিত ফেসবুক আইডি ইরঢ়ষড়ন ঈযধহফৎধ ঝযাঁড় থেকে আল্লাহতায়ালা ও নবী করীমকে (সা.) নিয়ে কুরুচিপূর্ণ গালাগাল করে তার কয়েকজন ফেসবুক বন্ধুর কাছে ম্যাসেজ করে। একপর্যায়ে কয়েকটি আইডি থেকে ম্যাসেজগুলোর স্ক্রিনশট নিয়ে ফেসবুকে কয়েকজন প্রতিবাদ জানালে বিষয়টি সকলের নজরে আসে এবং ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বিপ্লব চন্দ্র শুভ বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের চন্দ্র মোহন বৈদ্যের ছেলে। এ অবস্থায় সন্ধ্যার পর বিপ্লব চন্দ্র বোরহানউদ্দিন থানায় আইডি হ্যাক হয়েছে মর্মে জিডি করতে আসলে থানা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিপ্লব চন্দ্রকে তাদের হেফাজতে রাখেন।