পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন স্থগিত বিজেএমসি’র অবহেলা: সোনালী আঁশের ঐতিহ্য বিলুপ্তের পথে

0001

বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো:  একসময়কার সোনালী আঁশ বলে খ্যাত পাট সেক্টর অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং পাট মন্ত্রণালয় ও বিজেএমসি’র অবহেলার কারণে আজ ধ্বংসের পথে। আর রাষ্ট্রায়ত্ব খাতের পাটকল গুলোকে বেশ কয়েক বছর যাবত নানা সংকটের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। যার ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং শ্রমিক অসন্তোষ ক্রমাগত ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে তিনটি শর্তে পাটকল শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন এক সপ্তাহের জন্য স’গিত করা হয়। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নয়টি সরকারি পাটকলে শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়টি নিয়ে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে খুলনার জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) ও শ্রমিকদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর টানা ১৫ দিন ধরে চলা আন্দোলন স’গিত করা হয়।
বৈঠক শেষে পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা ও যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন এ ঘোষণা দেন।
চার ঘণ্টা আলোচনার পর শ্রমিকরা ঘোষণা দেন- চলতি সপ্তাহে দুটি বকেয়া এবং এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো বকেয়া দেওয়ার পাশাপাশি আজ বুধবার বন্ধ মিলগুলোতে জরুরিভাবে কর্মরত শ্রমিকদের হাতে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করে পে স্লিপ দেওয়ার শর্তে আন্দোলন স’গিত করা হয়।
বিজেএমসি এর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস’াপনার কারনে গত ১০ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলোর লোকসানের পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে যদিও দেশের বেসরকারি পাটকলগুলো লাভ করছে। এ পরিসি’তির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল শ্রমিকরা এবং শ্রমিক নেতারা কারখানা পরিচালনায় দক্ষ ব্যবস’াপনার অভাব এবং কাঁচা পাট কেনায় অব্যবস’াপনা ও দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন অব্যাহত ভাবে ভর্তুকি দিয়ে কারখানা চালান যে সম্ভব নয় তা শ্রমিকরাও অনুভব করছেন। তাঁদের মতে রাষ্ট্রায়ত্ব খাতের পাটকল গুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে হলে এগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস’া বিজেএমসিকে গতিশীল করার জন্য বর্তমান বিশ্বায়নের যুগের সাথে সমঞ্জস্য রেখে এর পুনর্গঠন করতে হবে এবং একই সাথে কারখানাগুলোকে আধুনিকায়ন করার পাশাপাশি এগুলোকে সৎ ও দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার ব্যবস’া করতে হবে।
তাঁরা বলেছেন পরিবেশ বিধ্বংসী প্লাস্টিক বন্ধে সমপ্রতি যে বৈশ্বিক ঐক্যমত সৃষ্টি হয়েছে সেই শূন্যস’ান প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন একমাত্র পাটই পুরন করতে পারে। পাটজাত পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে দক্ষতার সাথে এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ তাঁর বিশ্বব্যাপী হারান পাটের বাজার ফিরে পাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
অপরদিকে, বিজেএমসি বিগত ১৫ দিনে খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৫ মেট্রিকটন পাটজাত পণ্য। অর্থাৎ যার বিক্রয়মূল্য হিসাব করলে দাঁড়ায় ১৫ কোটি টাকা। খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে এ পর্যন্ত শুধুমাত্র শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া পড়েছে ৪২ কোটি আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত বকেয়া বেতনের পরিমাণ ১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৬০ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে শুধুমাত্র মজুরি ও বেতন। পক্ষান্তরে নয় মিলের উৎপাদিত পণ্য মজুদ রয়েছে ৩শ’ কোটি টাকারও বেশি।
গত ৫ মে বিকেল থেকে খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি পাটকলে কর্মবিরতি শুরু হয়ে ১৩ মে থেকে সারাদেশের ২৬টি পাটকলে এ কর্মবিরতি পালন করা হয়।
সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ খুলনার আহ্বায়ক এড. কুদরত-ই খুদা বলেন, ১০ হাজার শ্রমিক গত তিন মাস ধরে মুজরি না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের ৪০০ এর অধিক এসএসসি পাস শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারছে না। ঈদের আগে বকেয়া মজুরি পরিশোধ করে শ্রমিকদের সকল দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
বক্তারা আরো বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটগুলোকে প্রাইভেট সেক্টরে দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র চলছে তা কঠিন আন্দোলনের মাধ্যমে রুখে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলোকে আধুনিকায়ন করে সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, বর্তমানে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে ১৪ হাজার ৫২৫জন স’ায়ী, ১৮ হাজার অস’ায়ী এবং ৫২২জন বদলি শ্রমিকসহ ৩৩ হাজার ৪৭জন শ্রমিক এবং ১ হাজার ১৮৭জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন।

খুলনায় ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিল

 বিজেএমসি’র অবহেলা

খুলনা ব্যুরো:    বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদিত হওয়ায় খুলনা মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দলীয় কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা শেষে এ আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজনের সভাপতিত্বে ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেনের পরিচালনায় আনন্দ মিছিল ও আলোচনা সভায় উপসি’ত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ হাওলাদার, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেল।
এসময় অন্যানের মধ্যে উপসি’ত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা মারুফ হোসেন, আসাদুজ্জামান বাবু, মাসুদ হোসেন সোহান, রণবীর বাড়ই সজল, হাসান চৌধুরী, নাসির হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান রুবলে প্রমুখ।
সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের নেতারা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অনুমোদন দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও নতুন কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ কেন্দ্রীয় সব নেতাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
বি এম রাকিব হাসান
খুলনা ব্যুরো:
২১-০৫-১৯

Post a Comment

Previous Post Next Post