উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পাটকল সেক্টর

001

বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো:  বকেয়া পাওনার দাবিতে আবারও উত্তপ্ত হচ্ছে খুলনার পাট সেক্টর। বঞ্চনা ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতির শিকার হয়ে ক্ষোভে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে খুলনার পাটকল শ্রমিকরা। শিল্প ও বন্দর নগরী খুলনার পাটকল শ্রমিক সেক্টরে শ্রমিক অসন্তোষ ফের দানা বাঁধছে। উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পাটকল সেক্টর। এ অবস’া চলতে থাকলে যে কোনো ঘটতে পারে মুহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা।
গত দু’দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা। মিল বন্ধ রেখে পাটকলের ভেতরে দফায় দফায় মিছিল-সমাবেশ চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে গিয়ে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শ্রমিকদের উত্তেজনা ছিল চোখে পড়ার মত। গতকাল পহেলা রমজানে শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা ভোর রাতে কোনমতে খেয়ে সেহরী করেছে।
প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, কাজে যোগ দেওয়ার পরে শুধু শবেবরাতে এক সপ্তাহের মজুরি দিয়েছে। আগের মজুরি তো দেয়ইনি, বরং চলতি সপ্তাহেরও মজুরি দেয়নি। সবকিছু সহ্য করা যায়, পেটের ক্ষুধা কীভাবে সহ্য করি। কেউ কেউ শুধু পানি পান করে রোজা রাখছে।
তার সঙ্গে থাকা শ্রমিক আবদুর রহমান বলেন, রমজনা মাস চলছে ঘরে একটা চালও নেই। ইফতারীর কোন ব্যবস’া নেই। রাতে কিছু খেয়ে রোজা রাখবো সেই উপায়ও নেই। কাজ করি, আমাদের পাওনা টাকা দেবে না কেন?
শ্রমিকরা জানান, বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে গত ২ এপ্রিল থেকে ৭২ ঘণ্টা পাটকলে ধর্মঘট করেন তারা। এরপর ১৫ এপ্রিল থেকে তারা ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু করেন। ১৫ এপ্রিল রাতে ঢাকায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও বিজেএমসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকের পর তাদের আশ্বাসে শ্রমিক নেতারা কর্মসূচি স’গিত করেন। ওই বৈঠকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বকেয়া সব মজুরি পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন’ এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন বলেন, ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাধ্য হয়েই শ্রমিকরা রাজপথে নেমে এসেছে। তারা তো ভিক্ষা চাইছে না, নায্যা পাওনা চাইছে।
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমীন বলেন, বিজেএমসির সঙ্গে বৈঠকের পর গত তিন সপ্তাহে মাত্র একটি মজুরি দিয়েছে। আগের বকেয়া মজুরি তো দেয়ইনি, বরং চলতি দুই সপ্তাহের মজুরিও দেয়নি। টাকার অভাবে শ্রমিক পরিবারগুলো অনাহারে-অর্ধাহারে রয়েছে। রোজা চলছে, একটি পরিবারেও সেহরি বা ইফতারের খাবার নেই। ক্ষুধার কষ্টে শ্রমিকরা নিজেরাই উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।
স্টার জুট মিলের প্রকল্প প্রধান শাওন মাহমুদ বলেন, শ্রমিকদের ধর্মঘটের বিষয়টি বিজেএমসিকে জানিয়েছি। সেখান থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
এ ব্যাপারে বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী সাজ্জাদ হোসেন জানান, সার্বিক অবস’া তিনি বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছেন। সেখান থেকে তাকে জানানো হয়েছে এখনও অর্থ সংস’ান হয়নি। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার আগে বিষয়টি সুরাহা হওয়ার সম্ভাবনা কম।
বি এম রাকিব হাসান
খুলনা ব্যুরো:
০৭-০৫-১৯

Post a Comment

Previous Post Next Post