মধ্যপ্রাচ্যের খেজুরের চাষ মেহেরপুরে

মধ্যপ্রাচ্যের খেজুরের চাষ মেহেরপুরে

Kbdnews : মেহেরপুরের মুজিবনগরে ১০টি জাত নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের খেজুরের চাষ। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে এ ফল উৎপাদন হতে যাচ্ছে। কয়েকটি জাত বাছাই করে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
পুষ্টিবিদরা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের খেজুরটি দেশে উৎপাদন সম্ভব হলে সহজে পূরণ হবে পুষ্টি চাহিদা। আর আমদানিও করতে হবে না। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, সব ধরনের মাটিতেই খেজুর চাষ করা যায়। তবে পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস’া থাকা দরকার। বেলে ও বেলে-দোআঁশ মাটিতে খেজুর ভাল জন্মে। মধ্যপ্রাচ্য শুষ্ক অঞ্চল। এ অঞ্চলের সঙ্গে কিছুটা মিল রয়েছে মেহেরপুরের মাটির। মাটির গুণগত মান ও আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে মুজিবনগরে সৌদি আরবের খেজুর চাষ শুরু হয়েছে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কুষ্টিয়া কেন্দ্র ‘মুজিবনগর সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স চত্বরে ২০১৪ সাল থেকে খেজুরের চাষ শুরু করে। মধ্যপ্রাচ্য দেশ কাতার, ওমান, দুবাই, ইরান, সৌদি আরব ও সুদান থেকে আজওয়া, আম্বার, লুলু, খালাছ, ডেগলেটনুর, কালমি, মাকতুম, ছুক্কারি,বাহারি ও মারইয়াম-এ ১০ জাতের বীজ নিয়ে আসা হয়।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বীজ বপন করা হয় কুষ্টিয়া সেচ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সেই বীজের দুই হাজার চারা রোপন করা হয় মুজিবনগর কমপ্লেক্সে। বপনের আড়াই বছরের মধ্যে চারটি গাছে ফলও আসে। এ বছরে ১০টি গাছে খেজুর ধরেছে। মধ্যপ্রাচ্যে যে মান ও স্বাদের খেজুর হয়, সেই মানের ফলই পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, খেজুর গাছের পরাগায়ন পোকা-মাকড়, মৌমাছি কিংবা বাতাসের মাধ্যমে খুব কম হয়। তাই হাত দিয়ে অথবা মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরাগায়ণ করতে হবে। বাগানে ১০০টি স্ত্রী গাছের সঙ্গে মাত্র একটি পুরুষ গাছ থাকলেই পরাগায়ণের জন্য যথেষ্ট। পরাগায়ণ করতে হলে স্ত্রী গাছের ফুল চুরমি ফেটে বাইরে আসার পর পুরুষ গাছের পরাগরেণু পাউডার নিয়ে স্ত্রী গাছের পুষ্পমঞ্জুরিতে লাগিয়ে দিয়ে চুরমির অগ্রভাগ রশি দিয়ে বেঁধে দিতে হয়। দুই-তিন দিন পর পর পরাগায়ণ করলে ভাল ফল হয়।
মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স চত্বরে খেজুর বাগানের তত্বাবধায়ক মহিবুল ইসলাম বলেন, খেজুরের চারা রোপণ করতে হলে তিন ফুট গভীর ও তিন ফুট লম্বা ও আড়াআড়ি তিন ফুট গর্ত বানাতে হবে। উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে দিতে হবে। গতের্র মাটি এক-দুই দিন রোদে শুকিয়ে নিলে ভালো হয়। পোকা-মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে মাটির সঙ্গে গুড়া বিষ মেশাতে হয়। প্রতিটি গাছের গোড়ায় ৮-১০ কেজি গোবর সার মেশাতে হবে। চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পরে মিশ্র সার গাছের কমপক্ষে দুই থেকে তিন ফুট দূরে মাটিতে দিতে হয়। পানি স্প্রে করতে হবে। চারা রোপণের পর চারার গোড়া যেন শুকিয়ে না যায় আবার অতিরিক্ত পানিতে যেন কাদা না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একটি গাছ থেকে আরেকটি গাছের দূরত্ব হবে ১৫-২০ ফুট। দিনে কমপক্ষে ৫-৮ ঘণ্টা যাতে রোদ থাকে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। তাতে গাছের বৃদ্ধি ও রোগ-বালাই কম হবে। একর প্রতি ১০০-১৫০টির বেশি গাছ রোপণ করা যাবে না। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শহীদুল্লাহ জানান, এই খেজুর চাষে কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বর্ষাকালে পুষ্পমুঞ্জরীকে ঢেকে দিতে পারলে মধ্যপ্রাচ্যের মতই ফল উৎপাদন করা সম্ভব। না হলে খেজুরচাষে সুফল পাওয়ার স্বপ্নপূরণ হবেনা।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, মেহেরপুরের মাটিতে সব ধরণের আবাদ সম্ভব। এখানকার আবহাওয়া-মাটি খেজুর চাষেরও উপযোগী। ডা. সজীব উদ্দিন স্বাধীন বলেন, খেজুর খুবই পুষ্টি মানসম্পন্ন।এক কেজি খেজুর ৩৪৭০ ক্যালরি শক্তি জোগান দেয়। খেজুরে গ্লুকোজ, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার, তামা, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসকরবিক এসিডসহ নানা উপাদান রয়েছে।
মোঃআবু লায়েছ লাবলু

Post a Comment

Previous Post Next Post