মেহেরপুরে ধানের ফসলের বিপর্যয়

মেহেরপুরে ধানের
কৌশিক আহমেদ শিমুল: : মেহেরপুরের মাঠের পরে মাঠ ধানের জমিতে দেখা দিয়েছে অজ্ঞাত রোগের সংক্রমন। পাকা ধান গোলায় উঠবে এমন স্বপ্নে কৃষক যখন বিভোর; ঠিক তখনই ছত্রাক জাতীয় এ ভয়াবহ রোগের আক্রমনে ধানের শীষ সাদা ও পাতা ধসুর বর্ণ ধারণ করছে। এ কারণে ধান চিটায় পরিণত হচ্ছে। শেষ সময়ে ধানে সংক্রমন দেখা দেওয়ায় মুখে হাসি নেই জেলার হাজার হাজার কৃষকের।
ধানের শীষ যখন সংক্রমিত হয় তখন ছত্রাকনাশক দিয়েও উপকার পায়নি কৃষক। কৃষকরা বলছেন এটি ব্লাস্ট রোগ; কিন’ মানতে নারাজ কৃষি বিভাগ। কৃষকরা বোরো উৎপাদনে ফলন বিপর্ষয়ের আশঙ্কা করছেন। চারা রোপনের পর বিদ্যুৎ, ডিজেল, সার ও কীটনাশক সরবরাহ ভালো থাকায় এবং ধান গাছের তেজ দেখে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটেছিল। সমপ্রতি ধানের শীষ বের হওয়ার আগ মুহূর্তে শিলা বৃষ্টি ও ঘুর্নিঝড়ে ধানের থোড় চরম ক্ষতির মুখে পড়ে। ওই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার আগেই আবার হঠাৎ অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে ধান গাছের ক্ষতিতে কৃষকদের মাঝে হাহাকার বিরাজ করছে। সরেজমিনে সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের মাঠে গিয়ে দূর থেকে দেখে মনে হয় ক্ষেতের সব ধান পাকা। কাছে গিয়ে দেখা যায় সব ধান চিটা। গাছগুলো তাজা কিন’ ধানের শীষের গোড়ায় পচন । কৃষকরা বলছেন, গম যে ভাবে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছিল এ রোগের ধরনটি একই রকম। কৃষক মাহপেজ জানান, তিনি সাড়ে ৭ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বোরো আবাদ করেছেন। তার মধ্যে ৩ বিঘা জমির ধানে চিটা ধরেছে। যাতে বিঘায় ১০-১২ মন করেও ধান পাওয়া সম্ভব হবে না। প্রতিবিঘা জমি চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। তা’হলে মহাজনকে কিভাবে বিঘায় ৫ মন ধান দেবেন সেটাই এখন তার দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ।
কৃষক নূরুল ইসলাম জানান, এ অঞ্চলে ৭০ ভাগ জমিতে ভিত্তি-২৮ ধান আবাদ হয়েছে। আর ভিত্তি-২৮ ধানেই চিটা মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। এছাড়া আইটিসি ধানে এ রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। ভিত্তি-২৮ ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। গাংনী উপজেলার কড়াইগাছি গ্রামের কামাল হোসেন জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। সব জমিতেই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে শীষ সাদা হয়ে ধান চিটায় পরিণত হওয়ায় ওই জমি থেকে ২০ মন ধানও সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। যেখানে গত বছর ৩ বিঘাতে ৬০ মন ধান তিনি সংগ্রহ করেছিলেন। একই কথা জানিয়েছেন বিভিন্ন গ্রামের আরো কয়েকজন কৃষক। তারা বললেন, ক্ষেতের পর ক্ষেত সাদা হয়ে গেছে। বর্গা চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। ধার দেনা করে বোরো আবাদ করে মহাজনদের দিয়ে তাদের ঘরে আর ধান উঠবে না। ধার-দেনা শোধ করবে কি করে সে চিন্তা তাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মহা.আকতারুজ্জামান জানান, ধানের শীষ বের হওয়ার সময় প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টিতে এলাকাবিশেষে ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে এটাকে ব্লাস্ট বলা যাবেনা। চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ২৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে অর্জিত হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ মেট্রিক টন। কৃষকের সংক্রামিত জমি থেকে ধানের ফলন কম হলেও প্রভাব পড়বে না উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায়। কারণ আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্জিত হয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post