বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: মহানগরী খুলনায় আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস’া গড়ে তুলতে ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা ওয়াসার নেয়া প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় খুব শিগগির অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই মূল প্রকল্পের ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রেপোজল (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। ফলে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে সংস’াটির অতি গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বাস্তবায়ন হলে খুলনা হবে দেশের পরিচ্ছন্ন, দূষণমুক্ত একটি আধুনিক শহর।
ওয়াসার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে শিল্প নগরী খুলনায় আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস’া গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেয় খুলনা ওয়াসা। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে এক হাজার তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘খুলনা পয়ঃনিষ্কাশন’ বিষয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সংস’াটি। ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আর্থিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়। বর্তমানে কনসালটেন্ট নিয়োগ শেষে সম্ভাব্যতা যাচাই ও ডিজাইন তৈরির কাজ চলছে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রেপোজল (ডিপিপি) তৈরি করে অনুমোদনের জন্য স’ানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স’ানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ করা হবে।
সূত্রটি জানিয়েছে, এ প্রকল্পে মাটির ৩ মিটার গভীরতায় ৩শ’ কিলোমিটার সুয়ারেজ লাইন স’াপন কাজ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। নগরীর লবণচরা, আড়ংঘাটা ও দৌলতপুর এলাকায় তিনটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও ১৩টি পাম্প স্টেশন নির্মাণ করা হবে। তিনটি শোধনাগারের (ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) মাধ্যমে পরিশোধিত পানি ফেলা হবে নদীতে আর বর্জ্য ব্যবহার হবে নিচু জমি ভরাট ও সার তৈরির কাজে। এসব স’াপনা নির্মাণের জন্য ৪৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, যার মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ৯৮ কোটি টাকা। খুব শিগগির জমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)সভায় অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্রটি আরও জানান, পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলেও নগরীর সরু ও অপ্রশস্ত রাস্তার কারণে অনেক মানুষ সুয়ারেজ লাইনের বাইরে থাকবেন। তবে এসব মানুষকে বিকল্পভাবে মেন্যুয়াল সিস্টেমে প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যাতে কোনভাবেই পরিবেশ দূষণ হতে না পারে। এ ক্ষেত্রে ভাকুটাক ট্রাকসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে প্রথম দিকে কর্পোরেশনের মাধ্যমে ওই সব এলাকার বর্জ্য অপসারণ করা হবে।
খুলনা ওয়াসার ব্যবস’াপনা পরিচালক (এমডি) মোঃ আব্দুল্লাহ্ পিইঞ্জ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কনসালটেন্ট নিয়োগ শেষ হয়েছে। খুব শিগগিরই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব একনেকে অনুমোদন মিলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। অপর দিকে সম্ভাব্যতা যাচাই ও ডিজাইন তৈরি করে আগামী মার্চ মাসের মধ্যে প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের জন্য ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে। একনেকে অনুমোদন মিললে পরবর্তী মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, খুলনায় পয়নিষ্কাশন ব্যবস’া নেই বললেই চলে। এখনকার মানব বর্জ্য সব গিয়ে নদী ও আশপাশের পানি ও পরিবেশ দূষণ করছে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস’ায় খুলনা মহানগরী হবে পরিচ্ছন্ন, দূষণমুক্ত একটি আধুনিক শহর।