মেহেরপুরে ইছাহক আলীর কাগজী লেবু চাষে ব্যাপক সফলতা

Meherpur_Lemon_Pic-3[1]Meherpur_Lemon_Pic-[1]

Kbdnews : মেহেরপুরের সবজি ব্যবসায়ী নামে খ্যাত ইছাহক আলী এখন সফল লেবু চাষী। তার আবাদ করা বাগানের কাগজী লেবু বিক্রি করে প্রতি বছর ১০ লাখ টাকা তার ঘরে আসছে। লেবু চাষে তার সাফল্যে এলাকার অনেক চাষী লেবু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের ইছাহক আলী এক সময় ঘোড়ার গাড়িতে করে সবজি ব্যবসা করতেন। পরবর্তীতে তিনি মেহেরপুর থেকে ট্রাক ভর্তি করে ঢাকার বাজারে সবজি নিতেন। সেখানে তিনি ভাল দামে কাগজী লেবু বিক্রি হতে দেখে লেবু চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। বাড়ি ফিরে সিদ্ধানত্ম নেন কাগজী লেবু চাষ করার।

কাগজী লেবু

ইছাহক আলী জানান, সিদ্ধানত্ম অনুযায়ী তিন বছর আগে পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর সদর উপজেলার রঘুনাথপুর মাঠে নিজের ৩ বিঘা জমিতে কাগজী লেবু চাষ করেন। তিনি সদর উপজেলার কোলা গ্রামের রজব নার্সারি থেকে চারা কিনেছিলেন। গত বছর তিনি এক লাখ পঁচিশ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেন। লেবু চাষের শুরম্ন থেকে গত বছর পর্যনত্ম তার ওই ৩ বিঘা জমিতে খরচ হয়েছিল মাত্র ৫০ হাজার টাকা। ভাল লাভ পাওয়ায় গত বছরই তিনি জমি লিজ নিয়ে আরো সাড়ে ৯ বিঘা জমিতে লেবু চাষ করেছেন। তিনি কাগজী লেবুর পাশাপাশি হাইব্রীড জাতের এলাচি লেবুর চাষ করেছেন। এ লেবুর চারা সংগ্রহ করেছেন সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গল থেকে। জমিতে সেচ, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যা বাবদ ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তার। চলতি বছরে তার গাছে প্রচুর লেবু এসেছে। এক বছরের গাছ আকারে ছোট হলেও এবছর ৬ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো বললেন একবার চাষ করলে ১০ থেকে ১২ বছর লেবু পাওয়া যাবে। খরচ বাদ দিয়ে প্রতিবছরে ওই বাগান থেকে ১০ লাখ টাকা লাভ করবেন বলে তিনি আশাবাদী।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে ৫শ’ টাকা শ’ হিসেবে ব্যবসায়ীরা তার বাগান থেকে লেবু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তার বাগানের উৎপন্ন লেবু রাজধানী ঢাকা ও ফরিদপুর যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে মাদারীপুর, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে।
কৃষক ইছাহক আলীর ছেলে লাবলু হোসেন জানান, বাবার কাছে তিনি সহযোগিতা করেন। দিনের অধিকাংশ সময় তিনি লেবু বাগানে থাকেন ও বাগান পরিচর্যা করেন। প্রতিটি গাছে পর্যাপ্ত লেবু এসেছে। লেবু বিক্রি শুরম্ন হয়েছে। বিক্রি চলবে আশ্বিন মাস পর্যনত্ম। লেবু চাষ করে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। ইতিমধ্যে মোটর সাইকেল কিনেছেন। পাকা বাড়ি তৈরি করেছেন। তাদের বাগানের লেবু মেহেরপুরের বাজারে চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানী হচ্ছে।
প্রতিবেশি যুবক পাতারম্নল ইসলাম জানালেন, ইছাহক আলীর লেবু চাষে সাফল্যে এলাকার অনেকে লেবু চাষের প্রতি অগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তিনি সামনের বছরে ৩ বিঘা জমিতে কাগজী লেবুর চাষ করবেন। ইতিমধ্যে পিরোজপুর গ্রামের সামছুল হক ২বিঘা, ইমাদুল হক এক বিঘা ও রবিউল ইসলাম ৩ বিঘা জমিতে লেবু চাষ করেছেন।
তবে এলাকার অনেক চাষী বললেন- লেবু, কলা, পেয়ারা, পেঁপেসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল ও সবজি চাষে সফলতা পেলে চাঁদাবাজদের টার্গেটে পড়তে হয়। চাষীকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য হতে হয় অন্যথায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুজ্জামান জানান, ইছাহক আলীর লেবু চাষের সাফল্য দেখে এলাকার অনেকে লেবুর চাষ করতে শুরু করেছেন। তিনি মাঝেমাঝে ইছাহক আলীর লেবুর বাগান পরিদর্শনে যান এবং পরিচর্যা ও ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ দমনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post