খুলনায় ওএমএসের চাল বিক্রি শুরু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে মানুষের নাভিশ্বাস

বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: খুলনায় গতকাল সোমবার থেকে ওএমএসের চাল বিক্রি শুরু হচ্ছে। নগরীর ২০টি স’ানে ২০জন ডিলারের মাধ্যমে ওএমএসের চাল বিক্রি হচ্ছে। একজন সাধারণ ক্রেতা ৫ কেজি করে চাল নিতে পারবেন। ওএমএসের চাল বিক্রি হবে ৩০ টাকা কেজি দরে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন ওএমএসের চাল বিক্রি শুরুহলে খোলা বাজারে চালের দাম কমে যাবে।

খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন বলেন, খুলনা জেলায় ৭২ জন ডিলার খোলা বাজারে চাল বিক্রি করবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে গতকাল সোমবার থেকে নগরীর ২০টি স’ানে ২০জন ডিলার চাল বিক্রি শুরম্ন হয়েছে। এক একজন ডিলার এক টন চাল বিক্রি করতে পারবেন।
নগরীর চাল বিক্রির পয়েন্টগুলো হচ্ছে, নতুন বাজার রূপসা বেড়িবাঁধ, ২ নম্বর পস্নাটিনাম রোড, জনতা হল ফুলবাড়িগেট বাজার, খোঁড়া বস্তি, মিনাড়্গী সিনেমা হলের পাশে, চানমারি বাজার, চিত্রালী বাজার, আফিল জুট মিল বাজার, বসুপাড়া বাজার, নতুন বাজার, মিস্ত্রী পাড়া, মুজগুন্নি স্ট্যান্ডের মোড়, রায়ের মহল আছরের মোড়, কালীবাড়ি বাজার, শরীফ মোলস্নার মোড়, বৈকালী বাজার, সঙ্গীতার মোড়, কুদির বটতলা, লবণচরা সস্নুইডগেট সংলগ্ন মোক্তার সড়ক এবং মানসী বিল্ডিং মোড়।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন জানান, সরকারিভাবে চালের বাজার সি’তিশীল রাখতে ওএমএসের চাল বিক্রির ব্যবস’া গ্রহণ করা হয়েছে।
নিম্ন আয়ের মানুষরা মনে করছেন, ওএমএস এর চাল বিক্রি শুরম্ন হলে অনেক মানুষ উপকার পাবেন। নগরীর শেখপাড়া মেইন রোডের বাসিন্দা রিকশা চালক বাবুল মিয়া বলেন, ওএমএসে চাল বিক্রি হলে গরীব মানুষের উপকার হবে।
এদিকে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও খুলনায় এলপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছেন খুলনা নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে বলা হয়, দেশব্যাপী চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। একদিকে উৎপাদনকারী কৃষকরা ধান-চালের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে লুটেরা মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে ক্রেতারা নিষ্পেষিত হচ্ছে। সব সময়েই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট তৈরি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে থাকে। এজন্য প্রয়োজন নিবিড় মনিটরিং ব্যবস’া ও কঠোর আইন প্রয়োগ। সরকারসহ সংশিস্নষ্ট কর্তৃপড়্গের এ বিষয়ে দায়িত্বহীনতা লড়্গ্য করা যাচ্ছে। অন্যদিকে খুলনায় একের পর এক এলপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। কি কারণে এ অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি খুলনাবাসীর তা বোধগম্য নয়। গত দু’মাসে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে ৪ বার। সরকারি গ্যাসের সরবরাহ আশঙ্কাজনকভাবে কম থাকা, সংশিস্নষ্ট কর্তৃকপড়্গের যথাযথ দায়িত্ব পালন ও আইন প্রয়োগ না করা এজন্য দায়ি।
বিবৃতিদাতারা চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও খুলনায় এলপি গ্যাসের মূল্য কমাতে সংশিস্নষ্ট কর্তৃপড়্গের যথাযথ পদড়্গেপ গ্রহণ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে এ বিষয়ে নৈতিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। বিবৃতিদাতার হলেন-খুলনা নাগরিক সমাজের পড়্গে সংগঠনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এ্যাড. আ ফ ম মহসীন এবং সদস্য সচিব এ্যাড. মোঃ বাবুল হাওলাদার।
সূত্রমতে, এক অসি’র অবস’া চলছে চালের বাজারে। কম-বেশি প্রায় প্রতিদিন বাড়ছে চালের দাম। আজ যে দামে চাল কেনা হলো, কাল সেই দামে তা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। কিছু না কিছু বাড়ছেই। এভাবে ক্রমাগত দাম বাড়ার সঠিক কারণ কেউ বলছেন না। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন পাইকাররা এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন, পাইকাররা বলছেন মিল মালিক ও মোকামের কথা। তবে ভারতের চাল রপ্তানি না করার খবর দাম বাড়ার একটি কারণ বলে জানান ব্যবসায়ীরা, যদিও সরকার বলছে সেটি গুজব। দাম বাড়ার পেছনে সরকার অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত দেখছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, বড় ব্যবসায়ীরা বসত্মায় ৫০০-৬০০ টাকা বাড়ানোর সাহস দেখাবে না। তাদের দৌড় বড়জোর ৫০-৬০ টাকা।
এদিকে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ানোর দায়ে দু’একদিনের মধ্যেই খুলনাঞ্চলে মিল মালিকদের বিরম্নদ্ধে অভিযান শুরম্ন হচ্ছে। এছাড়া আমদানিকারক, পাইকার এবং খুচরা ব্যবসায়ী পর্যায়ে চাল বেচাকেনার খোঁজখবর নিচ্ছে কর্তৃপড়্গ। আমদানি শুল্ক ২৮ থেকে নামিয়ে ২ শতাংশ করায় বেসরকারী পর্যায়ে ভারত থেকে চালের আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। এছাড়া সরকারী পর্যায়ে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে চাল কেনা হচ্ছে। তথাপি চালের বাজার লাগামহীন। আর চালের সাথে পালস্না দিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের মূল্য। বেগুন আলু করলা বিভিন্ন শাক লাউ পেঁপে চিচিংগা বরবটি ঝিঙা সহ প্রতিটি শাক সব্জির মূল্য একমাসের ব্যবধানে দ্বিগুন। গত বছরের তুলনায় পিয়াজের মূল্য এখন তিনগুন। বেড়েছে ডালের দাম। আর এলপি গ্যাসের মূল্য বাড়ছে দফায় দফায়। খুলনা বাগেরহাট ও সাতড়্গীরা জেলার উপকুলীয়াঞ্চলে শ্রমজীবী ও প্রনিত্মক চাষিরা চাল ডাল সহ নিত্যাপণ্যের অগ্নিমূল্যে দিশেহারা। গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিভিন্ন সমিতি ও এনজিও’র কাছে ঋনের বোঝা বেড়েই চলেছে। জীবন বাঁচাতে উপকুলীয়াঞ্চলের ছিন্নমুল মানুষগুলো এনজিও’র ঋনের জালে আটকে যাচ্ছে। শহর ও উপজেলা সদর গুলোতে কিম্বা ইউনিয়নের প্রাণ কেন্দ্রে ওএমএস চালু হলেও প্রত্যনত্ম অঞ্চলে তার কোন প্রভাব পড়ছে না। তারপরেও সফলভাবে এবং সঠিক মনিটরিং এর মাধ্যমে ওএমএস চালু থাকলে অনেক সাধারন মানুষ উপকার পাবেন।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post