রমজানের আগেই বাজার গরম বেড়েই চলেছে চাল ছোলা চিনির দাম

 

রোজা

চাহিদার তুলনায় বাজারে পণ্য সরবরাহ পর্যাপ্ত

কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ : পবিত্র রমজান আসতে সপ্তাহখানেক বাকি। আর এ রমজানকে পুঁজি করে বাড়তে শুরু করেছে রাজধানীর নিত্যপণ্যের দর। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ছোলা, বুট, মাংস, সবজি আর আদা রসুনের দাম। এছাড়াও আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য পণ্য। বাণিজ্যমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারিতেও থেমে নেই নিত্যপণ্যের দাম। ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজান মাসে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেই পণ্যের দাম বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে ছোলা, মসুর ডাল, বুট, বেগুন, পিঁয়াজের দাম বেশ ঊর্ধ্বমুখী।

চাহিদার তুলনায় বাজারে পণ্য সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকার পরও অগ্রিম মজুদ প্রবণতার কারণে দর বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ক্রেতাদের অভিযোগ, সরবরাহ বেশি থাকা সত্ত্বেও বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। মাছ, মাংস, সবজি, পিঁয়াজ সব ধরনের পণ্যই গত সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। এছাড়াও মাসখানেক আগে থেকেই একের পর এক পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে বলছেন ক্রেতারা। এভাবে বাড়তে থাকলে আগামীতে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে আশঙ্কা তাদের।

তবে রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারসাজির চেষ্টা করলে মঙ্গল হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে। কারণ বাজারে চাহিদার তুলনায় দেড়গুণ পণ্য বেশি মজুদ রয়েছে।

আর মন্ত্রীদের বাজার নিয়ন্ত্রণের কড়া সমালোচনা করে এ নাগরিক বলেন, তারা মিডিয়ার সামনে অনেক কথা বলেন, কিন্তু বাজারে আসেন না। বড় বড় হুঁশিয়ারি দেন ঠিক আছে কিন্তু বাজারের সব পণ্যের দাম বাড়ছে কোনো সময় খোঁজ নিচ্ছে কেউ। কথা না বলে বাজার সিন্ডিকেটদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেন।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মুগদা, হাতিরপুল, খিলগাঁও, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচাবাজারে মাছ, মাংস, পিঁয়াজ ও সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। তারপরও ক্রেতাদের আগের বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে বেশিরভাগ খাদ্যপণ্য।

সরেজমিন দেখা যায়, ছোলা প্রতিকেজি ৮৫-৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চিনি গত সপ্তাহে ৬৫-৬৮ টাকায় বিক্রি হলেও চলতি সপ্তাহে তা ৪ টাকা বাড়িয়ে ৭০-৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারেও চড়া ভাব লক্ষ্য করা গেছে। গত সপ্তাহে প্রতিকেজি রুই বিক্রি হয়েছে ২শ-৩শ টাকায়। এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ২শ ২০-৩শ ৩০ টাকা। প্রতিকেজি ইলিশ ৭শ- ১ হাজার ২শ টাকা।

মাংসের বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি করছে ৩শ ৮০-৪শ টাকা, খাসির মাংস বিক্রি করছে ৫শ ৮০-৬শ টাকায়। সপ্তাহে কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এ সপ্তাহে কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছে ১শ ৬০ টাকায় ও লেয়ার ১শ ৭০ টাকা, কক মুরগি ২শ ২০-২শ ৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৩শ ৩০-৩শ ৫০ টাকায় বিক্রি করছে। ডিম (ফার্ম) প্রতি হালি ২৬-২৮। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩০-৩২ টাকায়।

সাধারণ মানের প্রতিকেজি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১শ ২০-২শ ৫০ টাকা।

রাজধানীর খুচরা চালের বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৭ টাকা দরে। নতুন মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৫ টাকায় এবং পুরাতন চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়। প্রতিকেজি নতুন লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৩৮ টাকায় এবং পুরাতন লতা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। প্রতিকেজি মোটা চাল ৩২-৩৩ টাকা, বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২ টাকা কমে নতুন ৪০ টাকা ও পুরাতন ৪২ টাকা। নাজিরশাইল প্রতিকেজি ৫০-৫২ টাকা, সুগন্ধি চাল প্রতিকেজি ৭৫-৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৮ টাকার মধ্যে। সুগন্ধি চালের মধ্যে কাটারিভোগ ৭৫ টাকা, কালিজিরা প্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে প্রতিকেজি ১শ টাকা দরে।

সয়াবিন তেল (লুজ) প্রতিলিটার ৮২-৮৪ টাকা, সয়াবিন তেল (বোতল) ৫ লিটার ৪শ ৯০-৫শ ২০ টাকা, সয়াবিন তেল (বোতল) ১ লিটার ১শ-১শ ৬ টাকা, পাম অয়েল (লুজ) প্রতিলিটার ৭০-৭২ টাকা, পাম অয়েল (সুপার) প্রতিলিটার ৭৪-৭৫ টাকা। গত সপ্তাহেও তা একই দামে বিক্রি হয়েছে।

অপরদিকে মসুর ডাল প্রতিকেজি ১শ ২০ টাকা। ডাল (তুরস্ক/কানাডা-বড় দানা) গত সপ্তাহে প্রতিকেজি ৭৫-৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এ সপ্তাহে ৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮৫ টাকা। মাঝারি ধরনের ডাল (তুরস্ক/কানাডা) প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। ডাল (দেশি) প্রতিকেজি ১শ ১০-১শ ২০ টাকা। আলু প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা।

প্রতিকেজি পিঁয়াজ ২০-৩২, আমদানি করা পিঁয়াজ ২০-২৫ টাকা, দেশি পিঁয়াজ ২৫-৩২ টাকা, রসুন ১শ-২শ ৪০, শুকনা মরিচ ১শ ৫০-২শ, হলুদ ১শ ৬০-২শ টাকা, আদা (আমদানি) মানভেদে প্রতিকেজি ৭০-১শ ১০ টাকা, জিরা প্রতিকেজি ৩শ ৮০-৪শ ৫০ টাকা, দারুচিনি ৩শ ২০-৩শ ৬০ টাকা, এলাচ প্রতিকেজি ১ হাজার ২শ-১ হাজার ৬শ টাকা। ধনেপাতা ১শ ২০-১শ ৫০ ও তেজপাতা প্রতিকেজি ১শ ৩০ টাকা। তবে শাক-সবজিসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ঢেঁড়শ, শশা, করলা, লতি, ঝিঙা, পেঁপে, আলু, পটল প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post