ধারদেনা করে দুই একর জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন কিশোরগঞ্জের হাওর জনপদ মিঠামইন সদরের কামালপুর গ্রামের মো. আবদুল হামিদ। এবারের সবই সর্বনাশা পানিতে তলিয়ে গেছে। পরিবারের পাঁচ সদস্যসহ তিনটি গরু নিয়ে চরম সংকটের মধ্য দিন যাচ্ছে হামিদের। বললেন, ‘জন্মের পরে কখনো এমন অভাব বোধ করি নাই। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।’
বেসরকারি সংগঠন ব্র্যাকের দেওয়া ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকার জন্য প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে সকাল থেকে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবদুল হামিদ।
এই সারির আরেকজন মিঠামইন ঘাগড়া এলাকার কৃষক রেণু মিয়া পাঁচ একর জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। পানি আসার মুহূর্তে এক একর কাটতে পারলেও টানা ১০-১৫ দিন বৃষ্টি থাকায় সে ধানে চারা গজায়। এখন রোদ থাকাতে সে ধান নাড়তে পারলেও খাওয়ার উপযুক্ত নয়। ধান থেকে চাল করার পর উৎকট গন্ধ বেরোচ্ছে। বললেন, জীবনের প্রথম ত্রাণ নিতে সারিতে দাঁড়ালাম। নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে।
রেণু মিয়া বললেন, ত্রাণের এই ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা এখন তাঁর কাছে খুবই মূল্যবান। কৃষি ব্যাংকের ৯৬ হাজার টাকা ঋণ আর পরিবারের নয় সদস্যসহ একমাত্র সম্বল তিনটি গরু নিয়ে বড় কষ্টে আছেন তিনি। এর আগে এক একর ধান কাটতে গিয়ে শ্রমিক খরচ মেটাতে এক লাখ টাকা দমের দুটি গরু ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।
মিঠামইন সদর বাজারে ত্রাণের জন্য ছিল এসব মানুষের ভিড়। এখানে শত শত মানুষকে ত্রাণের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তাঁরা জানান, তাঁদের ঘরে ভাত রান্নার কোনো চাল নেই। সে জন্য ত্রাণের চাল নিতে দাঁড়িয়ে আছেন।
উপজেলার ঢাকি ইউনিয়নের দুর্গাহাটি গ্রামের মো. শাহজাহান মিয়া দাবি করেন, তাঁর ছয় একর জমির ধান পুরোটাই পানিতে তলিয়ে যায়। জমিতে কাস্তেই লাগানো যায়নি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আজকের হিসাব অনুযায়ী কিশোরগঞ্জে মোট ৬০ হাজার ৮১৭ হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে ক্ষতি হয়েছে ৮৫৮ কোটি ৭৩ লাখ ৬০ হাজার ৪০০ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬১ জন।