কাঁকড়া রফতানিতে বাধাগ্রস্ত বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা চরম হতাশা

বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: পথে পথে হয়রানী, ভোগানি- আর প্রশাসনের বিরূপ মনোভার ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার কারনে চরমভাবে বাধাগ্রস- হচ্ছে কাঁকড়া রফতানি। এসব কারনে খুলনার ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ রফতানি বন্ধ রেখেছে। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট মিলে বৃহত্তর খুলনায় শত কোটি টাকা মূল্যের রফতানিযোগ্য কাঁকড়া মাটিতেই পড়ে আছে। এভাবে ক্ষতিগ্রস- হলে বাজার হারানোর আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা এর জন্য পণ্য রফতানি নীতিমালা ও আইনের অপপ্রয়োগকে দায়ী করেছেন।

খুলনা ও বাগেরহাটের কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের সূত্র জানিয়েছেন, গত ৩ বছর ধরে কাঁকড়া রফতানি দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শুধুমাত্র কাঁকড়া রফতানি করে এখন প্রতিবছর গড়ে আয় হচ্ছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা। রফতানি তালিকায় অপ্রচলিত এই পণ্যই বদলে দিচ্ছে লাখো মানুষের ভাগ্য। যে হারে চাহিদা বাড়ছে তাতে ‘সাদাসোনা’ হিসেবে পরিচিত গলদা চিংড়িকে অদূর ভবিষ্যতে হার মানাতে পারে এই জলজ সম্পদ। দেশের পাঁচ উপকূলীয় এলাকায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে কাঁকড়ার। মোটাতাজাকরণ ও পোনা পালন প্রকল্পে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় অন-ত শতাধিক কোটি টাকা মূল্যের রফতানিযোগ্য কাঁকড়া মাটিতেই পড়ে আছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রথম ১৯৭৭ সালে মাত্র ২ হাজার ডলারের কাঁকড়া রফতানি হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে বেড়ে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এসে দাঁড়ায় ২ হাজার ৯৭৩ টনে। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪১৬ টনে। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সেই রফতানি হয়েছে ৮ হাজার ৫২০ টন। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১০ হাজার এবং ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে তা ১০ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন ছাড়িয়েছে। কাঁকড়া রফতানির বড় অংশ যায় চীনে, তারপর রয়েছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, জাপান, সিংগাপুর, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মিয়ানমার এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ মিলিয়ে মোট ১৮টি দেশে এই কাঁকড়া রফতানি হচ্ছে। এ বিপুল পরিমাণ কাঁকড়া রফতানিতে স’ানীয় ব্যবসায়ীরা চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তাদের দাবি প্রজনন মৌসুমে নদ নদী থেকে কাঁকড়ার পেনা আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় প্রশাসনের সদস্যরা নাজেহাল করে।
দিগরাজ কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ হাবিবুর রহমান শেখ বলেন, প্রজনন মৌসুমে কোন কাঁকড়া নদী থেকে সংগ্রহ করা হয় না। এ মৌসুমে ঘেরের সংরক্ষিত কাঁকড়া বাজারজাত করা হয়। বিষয়টি পুলিশসহ প্রশাসনের অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা না জেনেই পথিমধ্যে পরিবহন আটকে দেয়। এ সময় হয়রানীর শিকার হতে হয় ব্যবসায়ীদের।
চালনা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুর রহিম গাজী বলেন, ‘কোষ্ট গার্ড অনেক সময় না জেনে বুঝেই কাঁকড়া নষ্ট করে দেয়। পোনা কাঁকড়া কখনও এক দুই সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয় না। এজন্য এখন নদী থেকে আহরন করে সেই পোনা বিক্রি করা সম্ভব নয়। এগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানা না থাকায় তারা আচমকা অভিযান চালিয়ে সেগুলো বিনষ্ট করে দেয়। দাকোপ-বটিয়াঘাটা এলাকা এ অঞ্চলের সব থেকে বড় মোকাম’। আর এখানেই এ ধরনের ঘটনা বেশী ঘটে বলে তিনি দাবি করেন।
পাইকগাছা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অদিবাস কুমার বলেন, কাঁকড়া পানি থেকে ডাঙায় ওঠানোর পর ৪/৫ দিনের বেশী সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। এর মধ্যে সেটা ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে হয়। না হলে মারা যায়। তবে স’ানীয় পর্যায় এবং হাইওয়েতে কোন ভাবে যদি গাড়ি আটকে রাখা হয় তবে এগুলো মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তিনি এ ধরনের হয়রানী বন্ধের দাবি জানান।
খুলনা বিভাগীয় মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকার জানান, বর্তমানে খুলনা অঞ্চল থেকে কত টাকার এবং কি পরিমাণ কাঁকড়া রফতানি হয় তার হিসাব নেই তাদের কাছে। মৎস্য অধিদপ্তর ঢাকায় পূর্ণাঙ্গ হিসাব আছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post