সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া শিকার

 

বি.এম.রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: পশ্চিম সুন্দরবন উপকূলীয় প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকারের উৎসব চলছে। ধ্বংস হতে চলেছে কাঁকড়ার প্রজনন। প্রতিনিয়ত মা কাঁকড়া আহরণ করছে বন এলাকা থেকে। এভাবেই প্রজননকালীন কাঁকড়া শিকার চলতে থাকলে চিংড়ির চেয়েও উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় মৎস্যসম্পদ অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম মৎস্যসম্পদ কাঁকড়ার প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র হলো সুন্দরবন এলাকা। এখান থেকে আহরিত কাঁকড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়ার প্রজনন বৃদ্ধির জন্য সরকারিভাবে প্রতি বছরের জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি দু’মাসব্যপী সুন্দরবনসহ সংলগ্ন সকল নদীতে কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন’ সুন্দরবনের ভেতর মাছ ধরার পাস নিয়ে জেলেরা অবাধে ডিমওয়ালা কাঁকড়া ধরছে।
জানা যায়, দেশের অন্যতম রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়া প্রজনন বৃদ্ধির জন্য সরকারিভাবে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুমাস কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন’ পশ্চিম সুন্দরবনে সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালীনি, কদমতলা, কবাদক ও কৈখালী স্টেশনের কিছু বন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে জেলেরা মাছ ধরার পাস নিয়ে ডিমলে কাঁকড়া ধরছে।
স’ানীয় জেলে আইয়ুব আলী জানান, প্রতিদিন বুড়িগোয়ালিনী খেয়াঘাট নওয়াবেঁকী বাজার, মুন্সিগঞ্জ বাজার, ভেটখালি ও হরিনগর বাজারে কাঁকড়া ডিপোতে প্রকাশ্যে ডিমলে কাঁকড়া বিক্রয় করছে জেলেরা ও ফড়িয়ারা।
গত এক সপ্তাহে সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৪টি স্টেশন অফিস থেকে প্রায় আড়াই শতাধিক জেলেকে সাদা মাছ ধরার পাস দেওয়া হয়েছে। তন্মধ্যে কবাদক স্টেশন হতে ৩০, কদমতলা ১০০, কৈখালী ৮০ ও বুড়িগোয়ালীনী স্টেশন অফিস হতে ৭৭টি মাছ ধরা নৌকার পাস দেওয়া হয় তথ্য সংশ্লিষ্ট বন অফিসের। কিন’ মাছের পাসধারী জেলেরা অধিকাংশই কৌশলে বনের ভেতরে অভয়ারণ্য এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঁকড়া ধরার জন্য উপকরণ দোন, জালতি, আটল, কুচেমাছ সাথে নিয়ে বনে ঢুকেছে। হরিনগর স্লুইস গেটের মুখ থেকে ২১টি, গাবুরার ৯নং সোরা এলাকা থেকে ১৮টি, কালিঞ্চি এলাকা থেকে ১৩টি নৌকা মাছ ধরার নামে কাঁকড়া ধরার সরঞ্জাম নিয়ে সুন্দরবনে যাচ্ছিল।
বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা ও কৈখালী স্টেশন কর্মকর্তা বেলাল হোসেন, শ্যামা প্রসাদ রায় ও নজরুল ইসলাম জানান, জেলেরা মাছের পাস নিয়ে ভেতরে যেয়ে মাছ ধরছে না কাঁকড়া ধরছে আমরা জানি না।
সাতক্ষীরা সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা এসিএফ মাকছুদ আলম বলেন, জেলেরা বন বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাছ ধরার পাশাপাশি বনের ভেতরে কাঁকড়া ধরছে। তিনি আরও জানান, বিশাল এলাকা জুড়ে সুষ্ঠুভাবে পাহারা দেওয়া দুরুহ। তবে প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া আহরণ বন্ধে টহল জোরদার করা হয়েছে। প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া ধরা যদি বন্ধ না হয় তাহলে আগামী মৌসুমে কাঁকড়া আহরণকারীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস- হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post