মেহেরপুরে হলুদ চাষেই কৃষকের ভাগ্য বদল

Meherpur-Agriculture-pic-[1]

কামরুজ্জামান খান: মেহেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে হলুদ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক চাষীরা। পলি দোঁয়াশ ও বেলে দোঁয়াশ প্রকৃতির উবর্র মাটি হওয়ায় সদর উপজেলার কুতুবপুর, কুলবাড়িয়া, উত্তরশালিকা, বাড়িবাকা, আমদহ, মুজিবনগর উপজেলার তারানগর, জয়পুর, দারিয়াপুর ও বাগোয়ারসহ, এলাকার কয়েকটি গ্রামের সমতল উচুঁ জমিতে মসলা জাতীয় ফসল হলুদ ভাল হয়। হলুদ চাষের উপযোগী জমি হিসাবে এসব জমিতে হলুদ চাষ করে লাভবান হচ্ছে চাষীরা।
গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, চলতি বছরে আবাদী জমির বেশীরভাগ জমিতেই হয়েছে হলুদের চাষ। রাসত্মার দু’পাশে ঢাল ঢাল পাতায় ঢাকা হলুদের ক্ষেত যেন কৃষকের মুখের হাসি। হলুদ চাষ করেনি এমন চাষী খুঁজে পাওয়া যাবে না এ গ্রামটিতে। ১০ কাঠা থেকে ৩/৪ বিঘা জমি পর্যনত্ম আবাদ করেছে ঘর ঘর চাষী।
হলুদ চাষ লাভজনক আবাদ হওয়ায় স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যনত্ম প্রায় ৪৫ বছর ধরে এ্‌ইসব গ্রামের চাষীরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি হলুদ চাষ করে আসছেন। এ গ্রামের চাষীরা প্রতিবছরই কমবেশী হলুদের চাষ করছেন। হলুদ চাষী জমিরউদ্দীন, মসলেম আলী, আমির আলী জানান, বিঘাপ্রতি ২০/২৫ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ হয়। বিঘা প্রতি ৯০ থেকে ১০০ মন হলুদ উৎপন্ন হয়। বাজার দর ভাল হলে ৮০/৯০ হাজার টাকায় বাজারজাত করা যায় এ ফসলটি। ফলে খরচ বাদ দিয়ে কমবেশী ৫০/৬০ হাজার টাকা লাভ হয় হলুদ চাষীদের।
সদর উপজেলার উত্তরশালিকা গ্রামের হলুদ চাষী রম্নহুল আমিন, আজিজুল রহমান ও লতিব আলি জানান, হলুদ চাষ খুব লাভজনক। বর্গা চাষীদের খরচ কিছুটা বেশী হলেও নিজের জমি হলে লাভ বেশী হয়। হলুদের মুখী বা আইঠি জমিতে মোটামুটি ৮/৯ ইঞ্চি দূরে দূরে সারিবদ্ধভাবে হলুদ লাগানো হয়। হলুদ এক বছরের মসলা জাতীয় ফসল। বছরের বৈশাখ মাসের দিকে হলুদ জমিতে রোপন করা হয়। বছর শেষে অর্থ্যাৎ মাঘ-ফাল্‌গুন মাসে জমি থেকে হলুদ তোলা হয়।
চাষীরা আরও জানায়, আমাদের এলাকায় পাবনায় ও দখিনা জাতের হলুদ লাগানো হয়। বিঘা প্রতি ৫ থেকে সাড়ে ৫মন বীজ রোপন করলে বছর শেষে ফলন ভাল হলে বিঘা প্রতি গড়ে ৭০/৮০ মন কাঁচা হলুদ উত্তোলন করা হয়। কাঁচা অবস’ায় ৭শ’ থেকে এক হাজার টাকা মন বিক্রি করা হয়ে থাকে। শুকনা হলুদ কোন বছর ৫/৬ হাজার টাকা পর্যনত্ম প্রতিমন বিক্রি হয়ে থাকে। হলুদ চাষে রাসায়নিক সার বেশী লাগে। পটাশ এবং ফসফেট সার প্রয়োগ পাশাপাশি সেচ বেশী দিলে ফলন ভাল হয়ে থাকে। হলুদ চাষে মাঝে মাঝে পটকা রোগ অর্থ্যাৎ পাতা শুকানো রোগ দেখা যায়। এই রোগ প্রতিরোধে চাষীরা বোরণ ব্যবহার করে থাকেন। জমিতে নোনা দেখা দিলে জিপসাম সার প্রয়োগ করা হয়।
চাষীরা বলেন, কৃষি অফিসের আরো পরামর্শ প্রয়োজন। এই এলাকার হলুদ চাষীরা এই চাষে ঝুকে পয়েছে। চাষীরা আরো জানায়,জমি থেকে হলুদ তোলা শেষ হলে এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও পাবনা থেকে আগত হলুদ ব্যবসায়ীরা চাষীদের নিকট থেকে হলুদ ক্রয় করে থাকে। হলুদ চাষে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান বা সরকারীভাবে সহযোগিতা করা হলে হলুদ চাষ আরও বৃদ্ধি হতো।
এব্যাপারে জেলা কৃষি অফিসার এসএম মোসত্মাফিজুর রহমান জানান, জেলার বিভিন্ন স’ানে পতিত জমি বা বাগানগুলোতে কম বেশী হলুদের চাষ হয়ে থাকে। জেলার তিনটি উপজেলায় এ বছর ২০০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়েছে। জেলায় সাধারণত ডিমলা ও সিন্দুরিয়া জাতের হলুদ বেশী চাষ হয়ে থাকে। তবে মেহেরপুরের এসব গ্রামের চাষীরা বাণিজ্যিকভাবে হলুদের চাষ করে থাকেন।
এলাকার জমিগুলো ও আবহাওয়া হলুদ চাষের উপযোগী হওয়ায় সব সময় লাভের মুখ দেখে থাকেন। তাই অন্যান্য ফসনের সাথে এলাকার কৃষকরা মসলা জাতীয় অর্থকারী হলুদ চাষ করেন। এলাকার হলুদ চাষীদের উদ্ধুব্ধ করতে মাঠ দিবস করা হয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post