বাজার অবৈধ ভারতীয় লবণের দখলে

বি এম রাকিব হাসান, খুলনা:খুলনায় লবণের বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। বৈরী আবহাওয়া ও কাঁচামাল সংকটে উৎপাদনে গতি হারিয়ে দক্ষিণের লবণ মিলগুলো অচল হতে বসেছে। আবার বাজারের চাহিদানুযায়ী সরবরাহ করতে না পারায় স্থানীয় বাজারে লবণের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। এ সুযোগে চোরাইপথে আসা ভারতের লবণ সীমান্তের জেলাসহ স্থানীয় বাজার দখল করে নিয়েছে। সংকট সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন মিল মালিকরা।

 

 

এ বছরের প্রথম চার মাসে লবনের মূল্য দু’দফা বেড়েছে। প্রথম দফায় চার টাকা এবং দ্বিতীয় দফায় কেজি প্রতি তিন টাকা করে বেড়েছে। স্থানীয় বাজারে সর্ব নিম্ন ২১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা দরে বিকিকিনি হচ্ছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ দাম। সংকট কাটাতে মিল মালিকরা লবন আমদানীর দাবী করেছে মন্ত্রণালয়ের কাছে। পাশাপাশি যশোর ও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় লবন আসছে প্রতিদিন।

খুচরা ব্যবসায়ীদের সূত্র জানান, এ বছরের প্রথম দিকে লবন প্রকারভেদে সর্বনিম্ন ১৪- সর্বোচ্চ ২৬ টাকা দরে বিক্রি হয়। ফেব্রুয়ারীর প্রথম দিকে ১৮ টাকা দরে এবং সর্বোচ্চ ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এপ্রিলের শেষ দিকে কেজি প্রতি মূল্য বেড়ে সর্ব নিম্ন ২১ টাকা ও সর্বোচ্চ ৩৫টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নতুন বাজার, বড় বাজার ও বটিয়াঘাটা এলাকার কৈয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, পদ্মা সল্ট কেজি প্রতি ২১ টাকা, মধুমতি ২২টাকা, মোল্লা ৩৩ টাকা, ফ্রেশ ও এ সি আই কেজি প্রতি ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ের বাজারগুলোতে তিতাস সল্ট কেজি প্রতি ১৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খুলনার মিল মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজার, চশরিয়া ও বাঁশখালী থেকে কাঁচা লবণের আমদানি কম থাকায় উৎপাদনে গতি নেই। ফলে মিলগুলো ঠিকমত চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বেকার হয়ে পড়ছে মিল শ্রমিকরা। প্রত্যেক্ষ-পরোক্ষভাবে মিল প্রতি গড়ে ১শ’ শ্রমিক এবং ক্ষেত্র বিশেষ ৫শ’ শ্রমিক কর্মরত আছে। যাদের দিন প্রতি মজুরী ৭শ’ টাকা। মূলত মিলে ৪/৫ দিনের অপরিশোধিত লবণ মজুদ না থাকার কারণেই লবণের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছর ২১৫/২২০ টাকা মণ দরে ক্রয় করা লবণ বর্তমানে ৪৮০/৪৯০ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে। তাও চাহিদা মোতাবেক পাওয়া যাচ্ছে না। আরও জানা যায়, অপরিশোধিত ১ মণ লবণ উৎপাদনে শতকরা ৩০ ভাগ ঘাটতি দেখা দেয়। অর্থাৎ এক মণ লবণ পরিশোধন করলে ২৮ কেজি পাওয়া যায়। ফলে খুচরা বাজারে সাধারণ আয়ের মানুষেরা আয়োডিনযুক্ত খোলা লবণ পূর্বের ৯/১০ টাকার বদলে বর্তমানে ২০/২২ টাকায় ক্রয় করছেন। এর ওপর বর্তমান লবণ উৎপাদন মৌসুমে আবার বৃষ্টি হলে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। সঙ্গত কারণে মিল মালিক ও লবণ ব্যবসায়ীদের পক্ষ হতে সরকারের প্রতি জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

স্থানীয় পূরবী সল্টের স্বত্ত্বাধিকারী অনিল পোর্দ্দার জানান, কয়েক দিন নৌ ধর্মঘটের কারণে কক্সবাজার থেকে কাঁচামাল আসেনি। এছাড়া সেখানকার অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার আসায় মজুদ করে রেখেছে। পাশাপাশি এ বছরের চৈত্র মাস থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত ধারাবাহিক বৃষ্টি হওয়ায় কক্সবাজারে কাংখিত কাঁচামাল উৎপাদন হয়নি। ২০১৫ সালে ৩ লাখ মেট্রিক টন আমদানীর কথা থাকলেও ১ লাখ মেট্রিক টন আমদানী হয়। সেক্ষেত্রেও ঘাটতি ছিল। তার দেয়া তথ্য মতে, ৭৬ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা লবনের কাঁচামালের (ক্রুড লবন) মূল্য ছিল সাড়ে ৪শ- ৫শ’ টাকা। এ বছর প্রতি বস্তায় ১ হাজার ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কক্সবাজার থেকে সরবরাহ না হওয়ায় স্থানীয় বাজারে লবনের মূল্য বাড়ার সুযোগ নিয়ে ভারতীয় নিম্ন মানের লবন চোরাই পথে আসছে। পদ্মা সল্টের কর্মকর্তা মোল্লা আব্দুর রহিম জানান, জেলার ৭টি মিলে প্রতি মাসে আনুমানিক সাড়ে ৯ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড লবনের চাহিদা রয়েছে। সেক্ষেত্রে মাসে ৬শ’ মেট্রিক টন করে ক্রুড লবন আসছে। বড় ধরনের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। সে কারণেই মিল মালিকরা পাশ্ববর্তী দেশ থেকে লবন আমদানীর দাবি তুলেছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post