শেরপুরে ধান-চালের বাজার অস্থিতিশীল

শেরপুর (বগুড়া) থেকে আল ইমরান

হঠাৎ করেই ধান-চালের দাম কমতে শুরু করেছে বাজার অস্থিতিশীল। এ অবস্থায় চাতাল উঠলেই চালে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কিন্তু এভাবে লোকসান দিয়ে কতদিন ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে- এনিয়ে শঙ্কিত তাঁরা। এদিকে ধানের দাম অব্যাহতভাবে পড়ে যাওয়ায় কৃষকরাও বুক চাপড়ে মরছেন। তবুও বোরোর উৎপাদন খরচ মেটাতে কম দামে ধান বিক্রি করতে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন। সবমিলে ধান-চালের বাজার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ছেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

সাধুবাড়ী যুমনা সেমি অটো রাইচ মিলের সত্ত্বাধিকারী আইয়ুব আলী জানান, শেরপুর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের বাজারে বর্তমানে প্রতিমণ স্বর্ণা-৫জাতের ধান ৫৮০-৫৯০টাকা, রনজিত ৬৫০-৬৬০টাকা ও বিআর-৪৯জাতের ধান ৬৬০-৬৭০টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। তিনি জানান, প্রতিমণ ধান উক্ত পরিমান টাকা দরে ক্রয় করে ঘরে আনতে আরও ২০-২৫টাকা খরচ পড়ে। এরমধ্যে রয়েছে পরিবহন ও শ্রমিক ব্যয়। এই ধান সিদ্ধ ও শুকানো বাবদ প্রতিমণে ব্যয় হয় ১৫-১৮টাকা। আর ভাঙাতে আর ৮টাকা খরচ পড়ে। অপরদিকে ওই ওই পরিমান (এক মণ) ধান থেকে বড়জোর ২৭-২৮সের চাল পাওয়া সম্ভব। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ি এই পরিমান চালের বাজারে বিক্রি করলে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ি একেকজন ব্যবসায়ীর প্রতিবস্তায় ৮০-১০টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এসব কেবল তার একার কথা নয়, এ পেশার সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যবসায়ীর কথা।

সরেজমিনে গিয়ে একাধিক ধান-চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ উপজেলায় ২শ’ থেকে ৩শ’ মণ ধান ধরে এরকম ২৫০-৩০০টি এবং ৫০-৬০ মণহারে ধান শুকানো যায় এরকম ১২৫০-১৩০০টি চাতাল রয়েছে। এছাড়া এখানে রয়েছে শতাধিক সেমি অটো রাইচ মিল। ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম চয়ন, আব্দুস সালাম, জামাল মিয়া, গোলাম রব্বানী জানান, প্রতিটি বড় চাতালের বিপরীতে ১৪জন ও ছোট চাতলে ৪জন করে শ্রমিক কাজ করেন। তাঁরা জানান, সমপ্রতি চাল ও ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে পড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাপারিরাও চাল কিনতে তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আর স্থানীয়ভাবেও তেমন একটা ধান পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধান আমদানি করতে হয়। তাছাড়া একটি চাতাল নিয়মিত চালু রাখতে ৫-৬ চাতাল ধান মজুদের প্রয়োজনও রয়েছে। কিন্তু মোকামে চাহিদামত ধান মিললেও চালের বাজার কমতির দিকে থাকায় লোকসানের সবর্োচ্চ ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ব্যয়ও আগের তুলনায় বেশ বেড়ে গেছে। ফলে তাদের ব্যবসা বন্ধের পাশাপাশি পথে বসার উপক্রম হতে পারে তাঁরা জানান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর থানা চাউলকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ জানান, বাজার ব্যবস্থা অস্থিতিশীলতার কারণে অব্যাহত লোকসানের মুখে ব্যবসায়ী অনেক চাতাল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বিশেষ করে এক্ষেত্রে ছোট ব্যবসায়ীরা বেশি মার খেয়েছেন। এমনকি এ ধরনের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে গিয়ে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলেও এই ব্যবসায়ী নেতা জানান।

সোজন্যে জনতা

Post a Comment

Previous Post Next Post