বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ছয় আসনের উপনির্বাচনে ৩ কারণে ভোট পড়েছে কম

 


বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ছয় আসনের উপনির্বাচনে কম ভোট পড়ার তিন কারণ উদঘাটন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রথমত বিএনপির দখলে থাকা আসনগুলোর ভোটে নেই বিএনপি-ই। দ্বিতীয়ত উপনির্বাচনে ভোট একটু কম কাস্ট হয়। তৃতীয়ত এই ভোটে সংসদ সদস্যদের মেয়াদকাল কম হওয়ায় ভোটার আগ্রহ পায় নি বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা।গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।গত বুধবার ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচনের ভোট হয়। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোট চলে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশনের দাবি, শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু ভোট হয়েছে।এদিকে অনিয়মের কারণে দুই বার উপনির্বাচন হওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনে যে ভোট পড়েছে তার চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ কম ভোট পড়েছে গতকাল বুধবার ভোট হয়ে যাওয়া ছয় আসনে। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৩৮ শতাংশ। অন্যদিকে এই ছয় আসনে গড় ভোট পড়েছে ২৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। তবে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনের সময়কালে সংসদীয় আসনে ভোট করা ফরিদপুর-২ আসনে ভোট পড়েছে ২৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে এই কমিশনের করা কোনো সংসদীয় আসনে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে। মাত্র ১৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ৪৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। এছাড়া বগুড়া-৪ আসনে ভোট পড়েছে ২৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। বগুড়া-৬ আসনে ২২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে ভোট পড়েছে ৩৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

এর আগে করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে ২০২০ সালের মার্চে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএমে সবচেয়ে কম ভোট পড়ার রেকর্ড রয়েছে। ঐ দিন ভোট পড়ার হার ছিল ৫.২৮ শতাংশ।

ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার পেছনে ইসির কোনো পর্যবেক্ষণ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে ভোটার উপস্থিতি ভালো। চাঁপাইনবাবগঞ্জেও ভালো। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটু কম। বগুড়ায় কম।’

বগুড়ার প্রসঙ্গ টেনে এই কমিশনার বলেন, ‘বগুড়া বিএনপির দুর্গ। এটা সবাই জানেন আপনারা। ওখানে বেশির ভাগ ভোটার বিএনপির। বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে আসেনি। সঙ্গত কারণে কিন্তু ওখানে বিএনপির ভোটাররা আসেনি। এ কারণে ভোটার ওখানে কমে গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও একই ব্যাপার।’ উপ- নির্বাচনে ভোট কাস্টিং কম হয় জানিয়ে তিনি এর কারণ হিসেবে বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের মেয়াদকাল খুব কম—৮ থেকে ৯ মাস। এই অল্প সময়ের জন্য আসলে ভোটাররা আগ্রহ বোধ করেন না।’ ভোটারের এই উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট বলে মনে করেন এই কমিশনার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিখোঁজ হওয়া প্রার্থী সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিখোঁজ হওয়ার এই ঘটনাকে ইলেকশন মেকানিজম হিসেবে দেখছেন তিনি।’ জাতীয় নির্বাচনে যদি একই কৌশল হয় তখন ইসির ভূমিকা কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কৌশল দেখা ইলেকশন কমিশনের কাজ না। ৩৯টি দল কী মেকানিজম করছে কমিশন তা খুঁজে খুঁজে বের করবে—এটা কখনো সম্ভব না। এটা যার যার রাজনৈতিক কৌশল।’

সিসি ক্যামেরা না থাকায় ভোট পর্যবেক্ষণে সমস্যা হয়েছে কি না—জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, আমি মনে করি, সিসি ক্যামেরা থাকলে আরও বেশি স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে পারব। এটা বলতে কোনো দ্বিধা নেই।

হিরো আলমের ফল পালটানোর অভিযোগের ভিত্তি নেই—ইসি : বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ফল পালটানোর অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘হিরো আলম অসন্তুষ্ট হয়েছেন। কিন্তু ওনার অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। তার অভিযোগ আমলে নিয়ে সকাল থেকে আমরা ডিসি, জেলা নির্বাচন অফিসার—প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, এধরনের কোনো বিষয় নেই। তাদের রেজাল্ট শতভাগ ঠিক।’

হিরো আলমের এজেন্টের হাতে ফলাফল দেওয়া হয়নি কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি নন্দীগ্রামে খুব একটা এজেন্ট দেননি তিনি। ডিসি সাহেবও বলেছেন, তিনি আর এসপি অনেকগুলো কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। আমরা ওখানে গিয়ে ওনার (হিরো আলমের) এজেন্ট পাইনি।’

 

Post a Comment

Previous Post Next Post