স্কুল না করে বেশীরভাগ শিক্ষক নেতাদের দেখা মেলে অফিস চত্বরের চায়ের দোকানে গাংনীতে প্রাথমিক শিক্ষার গুনগত মান নিয়ে নানা প্রশ্ন !

 

আমিরুল ইসলাম অল্ডাম/  স্টাফরিপোটার  ঃ সঠিক মনিটরিং না করা, সঠিক সময়ে শিক্ষকদের আগমন ও প্রস্থান না করায় গাংনীতে প্রাথমিক শিক্ষায় দেখা দিয়েছে বেহাল অবস্থা। শিক্ষার গুনগত মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া একেবারেই হচ্ছে না ভেবে অনেক শিক্ষকই তাদের সন্তানকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে বিভিন্ন এনজিও বা প্রাইভেট ভাবে পরিচালিত কেজি স্কুলে ভর্তি করছেন। সেই সাথে শিক্ষকদের নিয়মানুযায়ি বদলী না হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবী করেছেন উপজেলা শিক্ষা অফিস।

জানা গেছে, এ উপজেলায় ১৬২ টি সরকারী ও ২টি বেসরকারী  (রেজিস্টার্ড) প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৬টি ক্লাস্টার অফিস রয়েছে। বর্তমানে এসব বিদ্যালয় মনিটরিংয়ের জন্য রয়েছে মাত্র ৩ জন সহকারী শিক্ষা অফিসার। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তাদেরকে  বিভিন্ন বিদ্যালয় মনিটরিং করতে হয়।

 বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে পাওয়া গেছে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয় খোলা থাকা সরকারী নিয়ম থাকলেও সিংহভাগ শিক্ষকই তা করে না। সঠিকভাবে মনিটরিং ছাড়াও শিক্ষকদের অনেকেই সমিতির সভাপতি সম্পাদকের আস্থাভাজন এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত থাকায় তারা সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে গমনাগমন করেন না ও পাঠদান করান না। আবার আসলেও পদ্ধতি অনুসরণ করে পাঠদান করান না।

এলাকার সচেতন মহলের অভিযোগ,কাথুলী ইউনিয়নের টেংরামারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০টার সময় প্রায়শ প্রধান শিক্ষক উপস্থিত থাকেন না। নানা কারন দেখিয়ে স্কুলের বাইরে থাকেন। বাকি ৪ শিক্ষক বিদ্যালয়ে খেয়াল খুশি মত যাতায়াত করে থাকেন। কোন ছুটিও নেয়া হয়নি। বাথানপাড়া নব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত কোন শিক্ষক আসেনা। সকাল পৌনে ১০টার দিকে খাসমহল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কোন শিক্ষককে পাওয়া যায়না। এভাবে সিংহভাগ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নানা অজুহাতে বিদ্যালয়ে যান না আবার ছুটির আগেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। নিয়মানুযায়ি কোন শিক্ষক অফিসিয়াল কাজে বিদ্যালয় ত্যাগ করলে মুভমেন্ট রেজিস্টারে স্বাক্ষর করে আসতে হয়। কিন্তু শিক্ষকরা তা করেন না।

বিদ্যালয়ে গমনাগমনের ব্যাপারে শিক্ষকদের অনেকেই জানান, অনেক বিদ্যালয়ে মহিলা শিক্ষক রয়েছে যাদেরকে ১৫-২০ কিলোমিটার দুর থেকে যেতে হয়। দুর্গম অঞ্চলে যানবাহন স্বল্পতার কারণেও বিদ্যালয়ে যেতে যেমন দেরী হয় আবার ছুটির আগেই ফিরে আসতে হয়। নিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষক বদলী হলে এ সমস্যা অনেকাংশে কমে যেত। রাজনৈতিক ও পেশী শক্তির বলে নিয়মতান্ত্রিক বদলী হয় না। অনেক শিক্ষক আছেন যারা শিক্ষক সমিতির নেতার আস্থাভাজন কিংবা রাজনৈতিক দলে জড়িত তাদের অনেকেই শিক্ষা অফিসের পাশে চায়ের দোকানে গল্প গুজবে মত্ত থাকতে দেখা যায়। সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ তা দেখেও দেখেন না।এছাড়াও উপজেলা শহরের  কয়েকটি স্কুলে শিক্ষার্থীও তুলনায় শিক্ষক অনেক বেশী। অথচ গ্রামের অনেক স্কুলে অসংখ্য ছাত্র থাকলেও শিক্ষক কম। 

অভিভাবকদের অনেকেই জানান, প্রাথমিক শিক্ষায় ধ্বসের কারণে শিক্ষকরা নিজেদের ছেলে মেয়েকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে বিভিন্ন কেজি স্কুলে পাঠাচ্ছেন। আর এ সুযোগে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে গড়ে উঠেছে কেজি স্কুল ও শিশু শিক্ষালয়। বর্তমানে এ উপজেলায় ৮৬টি কেজি স্কুল রয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তানেরাও কেজি স্কুলে পড়তে যায়।

সিএফএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দীন জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যেসব শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি হয়েছেন তারা নিজের নাম ও সাধারণ যোগ বিয়োগ জানে না। নতুন করে তাদের শিখিয়ে নিতে হচ্ছে। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির একাংশের নেতা বকুল জানান, বর্তমানে আগের মত শিক্ষকদের অফিসের সামনে দেখা যায় না। বিশেষ কাজে তারা অফিসে আসে। সমিতির অন্তর্ভূক্ত শিক্ষকদের কল্যাণে কাজ করতে হয় তাই সঠিকভাবে বিদ্যালয়ে থাকা সম্ভব হয়না। একই কথা জানালেন সমিতির অপরাংশের সেক্রেটারী হাসানুজ্জামান।

গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসার বশিরউদ্দীন জানান, লোকবল সংকটের কারণে বিদ্যালয় মনিটরিং করা একটু কষ্ট সাধ্য। মাত্র ৩ জন সহকারী শিক্ষা অফিসার রয়েছেন যাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যেতে হয়। ইতোমধ্যে বেশ ক’জন শিক্ষককে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে সতর্ক করা হয়েছে। পৌর সভার মধ্যে শিক্ষক বন্টনে বৈষম্য  রয়েছে আমি বিষয়টি দেখবো। সম্প্রতি কিছু নতুন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আশা করি এরকম অনিয়ম থাকবে না। আমিও চাই গাংনীতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসুক এবং শিক্ষার গুনগত মনোন্নয়ন হউক।  তাছাড়া কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।





Post a Comment

Previous Post Next Post