মরক্কো এখন ফুটবল গৌরবের

ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে ২২টি দেশ, আরবি ভাষায় কথা বলে।  কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কো ১-০ গোলে পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে মুসলিম জাহান কাঁপিয়ে দিয়েছে। শুধুই কি মুসলিম জাহান? না পুরো ফুটবল দুনিয়াটাই নাড়িয়ে দিয়েছে তারা। রোনালদোদের বিদায় করার ম্যাচের পরই রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল করেছে। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে খেলবে। সেখানে হারবে কি জিতবে তা নিয়ে ভাবিত নয় মরক্কানরা। তাদের চোখে বিশ্ব ফুটবল জয় করেছে মরক্কো।

আব্দুল আজিজ ম্যাচ নিয়ে বললেন, ‘মরক্কো প্রথমার্ধে খেলেছে এক গোলের জন্য। সেটা পেয়েছে। আর দ্বিতীয়ার্ধ খেলেছে ট্যাকটিক্যাল গেম। সেখানেই পর্তুগাল হেরেছে।’

 

জয়ের পর দোহায় রাতভর উল্লাস করেছে মরক্কোর সমর্থকরা। পথে ট্রেনে বাস, সবখানেই মরক্কোর সমর্থকদের মুখে আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। ট্রেনে কাউকে কোরআন তেলওয়াত করতেও দেখা যায়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে আফ্রিকান কোনো দেশ সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি। যা করে দেখিয়েছে মরক্কো। ৩৬ বছর আগে মরক্কো শেষ ষোলোর ঘরে খেলেছিল। সেই প্রজন্মের এখন অনেকেই নেই। এর মধ্যে নতুন প্রজন্মও এসেছে।

 

মরক্কো ফুটবল ফেডারেশন তাদের পুরোনো কোচকে বরখাস্ত করে দিয়ে নতুন কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুইকে কাতার বিশ্বকাপের মাত্র তিন মাস আগে জাতীয় দলের দায়িত্ব দিয়েছিল। ইউরোপের দলগুলোকে টপাটপ হারিয়ে দিয়েছে মরক্কো। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোল শূন্য ড্র করে কানাডা (২-১) এবং বেলজিয়ামকে (২-০) গোলে হারিয়েছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া মরক্কো ২০১০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে প্রথম নকআউট পর্বে বিদায় করেছে টাইব্রেকিংয়ে। কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে বিদায় করেছে ১-০ গোলে হারিয়ে।

 

বিশ্বকাপ ফুটবলে ঝড় তোলা মরক্কো এখন সব টেবিলের আলোচনায়। শুধু আফ্রিকান দেশই নয় আরব দেশের জন্যও মরক্কো এখন বিশ্বকাপ ফুটবলের গৌরবের তরবারি। আল থুমামা স্টেডিয়ামে খেলা দেখেছেন কাতারের আমীর তামিন বিন হামাদ আল থানি। ভিভিভিআইপি গ্যালারিতে মরক্কোর ফুটবল খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানিয়েছেন কাতারের আমীর তামিম। তিনি তার সন্তানদের নিয়ে খেলা দেখেছেন। তাদের হাতে হাতে ছিল মরক্কোর পতাকা গায়ে ছিল মরক্কোর জার্সি।

 

কাতার বলছে, মরক্কোকে আবার স্যালুট। মাহমুদ আবদেল ওয়াহেদ জানালেন তাদের ইরাকে সারা রাত উত্সব হয়েছে। মানুষ নাচগান করেছে। বাদ্য বাজিয়েছে। বাহারাইনের হুসেন বললেন, ‘এটা এখন মরক্কোর বিষয় নয়। ওরা এক দেশ আমরা আরেক দেশ। এটা কেন বলছেন আপনি। এখানে বিজয়টা বড় করে দেখছি আমরা।’ আল সাঈদের কথা ভিন্ন, ‘এটা সব আরব জাতির জয় হয়েছে। মহান বিজয় হয়েছে।’ দোহায় আরেক সমর্থক বললেন, ‘এতো মানসম্পন্ন ফুটবল আর কোন দেশ খেলেছে দেখান।’   

 

বিশ্বকাপের শুরুতেই মরক্কোর সংবাদকর্মীরা ধরে নিয়েছিলেন দ্রুতই কাতার ছাড়তে হবে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে দোহায় এসেছিলেন। কিন্তু এখন তারাও ফাইনাল পর্যন্ত দোহায় থাকবেন। দর্শকও এসেছিলেন গ্রুপ পর্ব পর্যন্ত তারাও এখন বিপাকে পড়েছেন। তারপরও কোনো হিসাব করতে চান না। টাকা আনছেন দেশ থেকে। তারা কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের এই মন্ত্রমুগ্ধকর ভ্রমণের শেষ দেখা দেখে যেতে চান।

 

জার্মান ফুটবলার মেসিত্ ওজিল সাবাশ, সাবাশ বলেছেন মরক্কোকে। ফ্রান্স থেকে শুরু করে জেরুজালেম, আরব আমিরাত, জর্ডান, কাতারসহ মুসলিম দেশের প্রায় সব রাষ্ট্রপ্রধানরা এবং  আফ্রিকান সব দেশ মরক্কোর রাজাকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট সেক্রেটারি এন্টনি বিনকেন অভিনন্দন জানিয়েছেন টুইটের মাধ্যমে। সময় এখন আফ্রিকার। ২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবলের থিম সং ছিল ‘দিস টাইম ফর আফ্রিকা।’ কলম্বিয়ান সুপারস্টার গায়িকা শাকিরা গেয়েছিল এটি। সেই শাকিরা এবার মরক্কোর সেই গানটি টুইট করে বলেছেন, ‘দিস টাইম ফর আফ্রিকা।’ সত্যি শাকিরার সেই গানই এখন কাতার বিশ্বকাপে আফ্রিকানদের গান দিস টাইম ফর আফ্রিকা।


Post a Comment

Previous Post Next Post