বাগেরহাটে অস্তিত্বসংকটে ৫৬ নদী-খাল

 


বাগেরহাট প্রতিনিধি  : বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের গোবরদিয়া এলাকার বাতিআলী খালটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ বছর ধরে এলাকার  প্রভাবশালীরা দখল করে নানা স্থাপনা তৈরি করায় এক সময়ের প্রবহমান খালটি এখন অস্তিত্বসংকটেখোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন দখল করে বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা গড়ে তোলায় একসময়ের প্রবহমান গোবরদিয়া খালটি এখন মৃতপ্রায় প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটির বিভিন্ন স্থানে অন্তত আটটি বাঁধ দিয়ে কেউ বসতবাড়িতে প্রবেশের রাস্তা তৈরি করেছেন, আবার কেউ দোকানপাট গড়ে তুলেছেন গোবরদিয়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ আব্দুল রাজ্জাক সুজন জানান, ‘খালটির সঙ্গে পাশের পুঁটিমারী নদীর সংযোগ রয়েছে বর্ষা মৌসুমে খাল দিয়ে একসময় পানি নামত এছাড়া জোয়ারের সময় খালটির পানি দিয়ে স্থানীয় কৃষক কৃষিকাজ করতেন খালে নিয়মিত নৌকা চলাচল করত কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর যে যার মতো বাড়ির সামনে দিয়ে খাল দখল করে স্থাপনা তৈরি করে দখলে নিয়েছে বর্তমানে পরিস্থিতি এমন, কোনটা খাল আর কোনটা বসতবাড়ি সেটাই খুঁজে পাওয়া যায় না একই গ্রামের অন্য বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ খালটি দখলে থাকার কারণে জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা গোবরদিয়া মাঠসংলগ্ন প্রায় ২০০ পরিবারের ঘরবাড়ি সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়

শহরের খাদ্দার গ্রামের কৃতী ফুটবল খেলোয়াড় সরদার ওমর ফারুখ বলেন, ‘একসময় খালে সাঁতার কাটতে কাটতে হাঁফিয়ে উঠতাম। এখন এটা খাল না ডাঙ্গা বোঝা দায়। বৃষ্টি হলেই বাড়িঘর তলিয়ে যায়। স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গোবরদিয়া খালটি শহরের পাশে হওয়ায় এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খালটির এক পাশ দিয়ে একটি রাস্তা রয়েছে, যার নিচ দিয়ে কালভার্ট বা পানি সরার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমি নিজেও প্রশাসনের কাছে খালটি দখলমুক্ত করার জন্য একাধিকবার জানিয়েছি। এদিকে রামপাল উপজেলার জৌখালী নদীসংলগ্ন চুলকাঠি খালের অধিকাংশ এলাকা দীর্ঘদিন প্রভাবশালীদের দখলে স্থানীয় রবিউল ইসলাম বলেন, নাব্য হারানো খালে কেউ কেউ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন কোথাও আবার স্থায়ী স্থাপনা গড়ে উঠেছে ফলে এখন খালের সীমানা নির্ধারণ করাই কঠিন খাল পুনরায় খনন করা হলে এলাকায় পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে কৃষকের চাষাবাদে আমূল পরিবর্তন আসবে কচুয়া উপজেলা পষিদের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদী এখন অস্তিত্বসংকটে এই নদী দুটি দিয়ে ৯০ দশকে লঞ্চ চলাচল করত বর্তমানে নদী ভরাটের জমিতে এখন একাধিক সরকারি বেসরকারি স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে অন্যদিকে ফকিরহাট উপজেলার সাড়ে কিলোমিটার দীর্ঘ কুমারখালী খালটিরও একই দশা

এলাকাবাসী জানায়, খালটি শুষ্ক মৌসুমে পুরোপুরি পানিশূন্য। চাষাবাদের জন্য কোনো কাজে আসে না খালটি। আবার বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতে আশপাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে নানা রকম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। খালটি খনন করলে এলাকার মানুষের খুবই উপকার হবে।  বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, একশ্রেণির প্রভাবশালী সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষ করত। চলতি বছর অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে বেশকিছু খাল দখলমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের কাছে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তপূর্বক খাল দখলমুক্ত করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।   

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘ঘষিয়াখালী-মোংলা নৌরুট সচল রাখার জন্য এরই মধ্যে ৭৮টি খাল খনন করা হয়েছে। যার সুফল পাচ্ছে মোংলা বন্দর। এখনো বাগেরহাট সদর, কচুয়া, ফকিরহাট রামপালে ৫৬টি খাল নদী খনন প্রয়োজন। খালগুলো খনন হলে নৌযান চলাচলসহ কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি হবে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়া গেলে খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তা।

Post a Comment

Previous Post Next Post