মৃত্যুর ১১ বছর পর

 


মৃত্যুর ১১ বছর পর

জয়পুরহাট সংবাদাতা

                                        

ষংগ্রহ

মৃত্যুর ১১ বছর পর সোনালী ব্যাংক ক্ষেতলাল শাখা হতেঋণ গ্রহণ করলেনপরেশ চন্দ্র নামে এক ব্যক্তি সেই ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যাংক থেকে দেওয়া হয়েছে চিঠি নিয়ে জয়পুরহাটের ব্যাংক পাড়ায় তোলপাড় চলছে

 ১৯৯৪ সালে পরেশ চন্দ্রের মৃত্যু হলেও সোনালী ব্যাংক ক্ষেতলাল শাখার নথিতে দেখা যায় ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর তিনি ঋণ গ্রহণ করেছেন ১০ হাজার টাকা মুনাফা ছাড়া ঋণের আসল টাকা পরিশোধ করার জন্য ব্যাংক থেকে রেজিস্ট্রি করে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে পরেশ চন্দ্রের ছেলে নরেশ চন্দ্রের নামে চিঠি পাওয়ার পর বিপাকে পড়েছে পরিবারটি এমন অদ্ভুত চিঠি পেয়ে ব্যাংকে ছুটে যান মারা যাওয়া পরেশ চন্দ্রের ছেলে নরেশ চন্দ্র ব্যাংকের কর্মকর্তরা নথিপত্র যাচাই করে দেখে বলেন, ঋণ গ্রহণের তারিখ পরিমাণ সঠিক রয়েছে ব্যাংকের কাগজপত্রে পরেশ চন্দ্রের স্বাক্ষরসহ জমির কাগজপত্রও জমা রাখা দেখানো হয়েছে নরেশ চন্দ্র বলেন, বাবা মারা গেছেন ২৮ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন মারা যান পরেশ চন্দ্রক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের পাচইল গ্রামের বাসিন্দা পরেশ চন্দ্র ইউনিয়নের জন্ম মৃত্যু রেজিস্টার খুঁজে দেখা যায়, বুকে ব্যথাজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে এবং মৃত্যুর তারিখ ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন সঠিক আছে ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার নাদিম জানান, মৃত্যু রেজিস্টারের ৩৮ নম্বর পাতার ৪৩ নম্বর সিরিয়ালে পাচইল গ্রামের পরেশ চন্দ্রের মৃত্যু ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন লেখা রয়েছে এবং সেই মর্মে মৃত্যু সনদপত্রও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি সোনালী ব্যাংক ক্ষেতলাল শাখার নথি মোতাবেক দেখা যায়, মৃত্যুর ১১ বছর পর পরেশ চন্দ্র আবার জীবিত হয়েছিলেন তিনি জীবিত হয়ে নিজের বাড়িতে গেলেন না শুধু সোনালী ব্যাংক ক্ষেতলাল শাখায় গিয়ে ঋণ গ্রহণের কাজগপত্রে স্বাক্ষর করে ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করার ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে 

দীর্ঘদিন পরে এমন চিঠি পেয়ে হতভম্ব নরেশ চন্দ্র বলেন, চিঠি পাওয়ার পর ঋণ গ্রহণের তারিখ ভুল হয়েছে মর্মে ব্যাংকে যাই খোঁজ নিতে। কিন্তু দেখা যায়, ব্যাংকের কাগজেও ঋণ গ্রহণের তারিখ ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর লেখা রয়েছে। ২৮ বছর আগে যে পরেশ চন্দ্রের মৃত্যু হয়েছে। সেই মৃত লোক কীভাবে ঋণ নিলেন। এরপরেও ব্যাংক কর্মকর্তারা টাকা আদায় করার দাবিতে অনড় থাকেন। ঋণের নথিতে নাগরিক সনদপত্র, ছবি, জমির কাগজপত্র স্বাক্ষর সবই আছে। নরেশ চন্দ্র বলেন, ১০ হাজার টাকার ঋণ বড় কথা নয়, আমার বাবার মৃত্যুর ১১ বছর পর কীভাবে ব্যাংকে গিয়ে ঋণ গ্রহণ করলেন। এতে পরিবারের সদস্যরা হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। মৃত্যু ব্যক্তি জীবিত হয়ে ব্যাংকে এসে ঋণ গ্রহণ করল ব্যাংক ছাড়া আর কেউ তাকে দেখতে পেল না। ২৮ বছর আগে বাবা মারা যান। আগে কখনো বাবার নামে ঋণ পরিশোধের কোন চিঠি পাইনি 

 আলমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার নাদিম বলেন, মৃত্যুর ১১ বছর পর পরেশ চন্দ্রের নামে ঋণ বিতরণ বিষয়টা ভাবার বিষয় এরকম কত যে পুকুর চুরির ঘটনা রয়েছে ব্যাংকে মর্মে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সোনালী ব্যাংক ক্ষেতলাল শাখায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একসময় কৃষি এমসিডি ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন আনোয়ারুজ্জামান নাদিম 

সোনালী ব্যাংক ক্ষেতলাল শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আহসান হাবিব বলেন, ব্যাংকের ঋণ নথিতে দেখা যায় ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর পরেশ চন্দ্র নিজে স্বাক্ষর দিয়ে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন যা এখন মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ঋণটির আসল পরিশোধ না করায় রেজিস্ট্রি ডাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নামে কীভাবে ঋণ বিতরণ করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখন আমি ছিলাম না। এটা আমার জানার কথা নয়। তবে একসময় এখানে কৃষি ঋণ বিতরণে অনেক অনিয়মের কথা শুনেছি। 

সোনালী ব্যাংক ক্ষেতলাল শাখার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় কোটি টাকা কৃষি এমসিডি ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল যার শতকরা ৮০ ভাগই অনিয়মের মাধ্যমে দেওয়া হয় মর্মে অভিযোগ ছিল। সময় ব্যাংকের কয়েক জন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়। মৃত ব্যক্তির নামে কীভাবে ঋণ গেল তা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য জোর দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা

 


Post a Comment

Previous Post Next Post