মেহেরপুরে জাল দলিল করে শরিকানা সম্পত্তি জবরদখলের অভিযোগ। মামলার রায় নিয়ে কাজীপুর ইউপির গ্রাম আদালতে সালিশ । শুনানী শেষে সায়েরা’র পক্ষে রায়

 

 মেহেরপুরে জাল দলিল করে শরিকানা সম্পত্তি  জবরদখলের অভিযোগ।  মামলার রায় নিয়ে কাজীপুর ইউপির গ্রাম আদালতে সালিশ । শুনানী শেষে সায়েরা’র পক্ষে রায়  

 আমিরুল ইসলাম অল্ডাম  ঃ মেহেরপুরে জাল দলিল করে শরিকানা সম্পত্তি জবরদখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলার রায় নিয়ে কাজীপুর ইউপির গ্রাম আদালতে সালিশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উভয় পক্ষের শুনানী শেষে অবশেষে সায়েরা খাতুনের পক্ষে রায় দিয়েছে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান মুহৎ আলম হুসাইন।আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে  উপজেলার কাজীপুর ইউপির গ্রাম আদালতে শুনানী শুরু হয়। 

 পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে সায়েরা খাতুন (৫৫)। চাচাতো ভাইদের জমি জালিয়াতির কারনে প্রায় ১০ বিঘা বৈধ পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছে অসহায় সায়েরা খাতুন। দেওয়ানী আদালত থেকে একাধিক রায় পাওয়ার পরেও জমির দখল মেলেনি আজও। এমন জমি জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে গাংনী উপজেলার কাজীপুর হাজিপাড়া গ্রামে। 

জমি জমার কাগজপত্রাদি অনুযায়ী জানা গেছে, কাজীপুর হাজিপাড়া গ্রামের মৃত শীতল বিশ্বাসের ৩ ছেলে। ঈমান আলী, আতর আলী ও রজব আলী। ৩ ভাই অনেকদিন আগে মারা গেছেন।বড় ভাই ঈমান আলী মেঝো ভাই আতর আলীর একাধিক সন্তান রয়েছে।  এদের মধ্যে ছোট ভাই রজব আলী তার এক কন্যা সন্তান সায়েরা খাতুনকে রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপরই মারা গেছেন। সায়েরা খাতুনের বিয়ে হয় উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের কাথুলী গ্রামে। মৃত তিন ভাইয়ের নামে পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমি যার  মৌজা কাজীপুর-৩৯ নং ও আর এস খতিয়ান নং ১১৭৬, ১১৭৭, ১১৭৮ ও ১১৭৯  ্মূলে  রেকর্ড হয়। দেখা গেছে, ১৯ টি দাগে ৩ ভাইয়ের ৯ একর ৬৮ শতক জমি রয়েছে।  রেকর্ডীয় সম্পত্তি রজব আলীর একমাত্র কন্যা সায়রা খাতুন শরিকানা পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে প্রায় ১০ বিঘা জমির মালিক। অথচ সায়েরার চাচাতো ভাইয়েরা মহাম্মদ আলী মাষ্টার, মোজাম্মেল হক, হাফিজুল ইসলাম, ফরহাদ আলী, সোহরাব হোসেন, ইছাহক আলী ভূয়া দলিল সম্পাদন (যার দলিল নং- ৪৭০৩, ১২৮৬/১৯৮১ ইং  তাং-১২-০৮-৮১ ইং তারিখে  দান শর্তে জাল দলিল করে।যাহা আদালতে ভূয়া প্রমাণিত হলেও জোরপূর্বক সায়েরার চাচাতো ভাইয়েরা জবর দখল করে  আছেন। জাল দলিলের বিপরীতে সায়েরা খাতুন দেওয়ানী  মামলা করে  পর পর দুইবার রায় পেয়েও জমি দখল  না পেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 

মুল মামলা ৯৫-০১  তাং-০৮-০৯-২০১৩ দেওয়ানী আপিল নং-৯১/২০১৩  বাদী সায়েরা খাতুনের পক্ষে রায় হয়।  রায়ের বিপক্ষে বিবাদী হাজুয়ারা দিং  আপিল করে।  আপিলে উক্ত জাল দলিল জাল প্রমাণিত হয় এবঙ ১৬-০১-২০২২ ইং সালে বাদীর পক্ষে পুণরায় রায় ঘোষিত হলেও  বিবাদীরা ভুল বুঝিয়ে তাদের পক্ষে রায় হয়েছে বলে জমি জবরদখল করে রয়েছে। এব্যাপারে জমির প্রকৃত মালিক সায়েরা খাতুন জানান, আমি আমার পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেতে অনেকদিন ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছি।  আমি একজন অসহায় মহিলা । কেউ আমার সমস্যা সমাধানে  এগিয়ে আসলো না। আমি সবার কাছে আরজ করছি আপনারা আমার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না। আমি বিচার চাই।

 জমি জবর দখলের বিষয়ে চেয়ারম্যান আলম হুসাইনের প্রশ্নের জবাবে দখলকারী বিবাদী মহাম্মদ আলী মাষ্টার জানান, সায়েরা খাতুন নামে আমাদের কোন বোন নেই। আমার ছোট চাচা নিঃসন্তান ছিলেন। সায়েরা খাতুন বাওট ছাতিয়ান গ্রামের খোদা বকসের মেয়ে। সায়েরাকে আমরা চিনি না। সে রজব আলীর মেয়ে পরিচয় দিয়ে আমার চাচার শরিক সেজে মামলা করেছে।  আমার চাচা আমাদের নামে জমি দান করে গেছেন। তবে এনিয়ে গ্রামের একাধিক প্রবীণ ব্যক্তিদের নিকট খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সায়েরা খাতুন রজন আলীর মেয়ে। এবং তার নামে এনআইডি কার্ড রয়েছে।যেখানে সায়েরা খাতুন পিতা মৃত রজব আলী উল্লেখ রয়েছে।

 এব্যাপারে কাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলম হুসাইন জানান, কাজীপুরের হাজিপাড়ার বিষয়টি আমি খোজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছি সায়েরা খাতুন রজব আলীর মেয়ে। জমি জমার কাগজপত্র দেখে যা বুঝেছি তাতে সায়েরা খাতুন পৈত্রিক সম্পত্তি  সূত্রে অনেক জমি পাবে। জাল দলিল করে উক্ত জমি জবরদখল করে রাখা অন্যায়। চেয়ারম্যান জানান, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তারা মাথা নিচু করে ছিলেন। এতেই প্রমান হয় যে, তারা মিথ্যা বলছেন। জাল দলিলের সনাক্তকারী এখনও জীবিত রয়েছেন। তার সাথে আলাপ করে জানা গেছে তিনি কোন জমির দলিলের সনাক্তকারী ছিলেন না।  ইতোমধ্যেই সায়েরা খাতুন তার পক্ষে  রায় পেয়েছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি সুরাহা করার জন্য আমরা পরিষদ উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে সালিশ করেছি।  সবশেষে তিনি বলেন, আদালতের রায়ের উপর আমাদের কোন মতামত দেয়ার কিছু থাকে না। ত্ইা সায়েরা খাতুনকে বলেছি , তিনি যেন তার পৈত্রিক সম্পত্তি খারিজ করে নেন। সালিশ চলাকালে পরিষদের কয়েকজন মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।                   

  

 আমিরুল ইসলাম অল্ডাম


Post a Comment

Previous Post Next Post