মেহেরপুরে সৌরবিদ্যুত চালিত সেচপাম্পে সবুজ বিপ্লবের সম্ভাবনা।

 



 মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি :মেহেরপুরে স্বল্প খরচে কৃষকরা তাদের কৃষি জমিতে সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্পের সেচ সুবিধা ভোগ করায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এ প্রযুক্তির চাহিদা।মাঠে মাঠে এখন নতুন করে সম্প্রসারিত হচ্ছে ব্যাটারিবিহীন সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প।ফলে এ উপজেলায় এখন দেখা দিয়েছে সবুজ কৃষি বিপ্লবের অপার সম্ভাবনা।


বরগুনার বেসরকারি সংস্থা রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আরডিএফ) এবং ইনফ্রাসট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল)  আর্থিক সহায়তায় জেলার বিভিন্ন স্থানে সৌরবিদ্যুৎ চালিত সোলার সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে।এখন চাষিদের বিদ্যুতের অপেক্ষায় থাকতে হয় না।কিংবা ছুটতে হয়না ডিজেল চালিত পাম্প মালিকদের কাছে। স্বল্প খরচে সব ধরণের ফসলে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন চাষিরা। 


গাংনী উপজেলায় ২০ হর্স পাওয়ারের ২৪টি ও সাড়ে ৭ হর্স পাওয়ারের ১১টি সেচ পাম্প চালু রয়েছে।প্রতিটি প্রকল্পের অনুকূলে ৮০ থেকে ১০০ একর জমি চাষের আওতায় নেওয়া আছে। ২০ হর্স পাওয়ার সোলার সেচ পাম্প নির্মাণে ৫৬ লাখ টাকা ও সাড়ে ৭ হর্স পাওয়ারে খরচ হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা।


প্রতিটি সোলার সিস্টেমে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পাম্পগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে।এতে করে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার ইউনিট বিদ্যুতের সাশ্রয় হচ্ছে।এগুলো ঝামেলা ছাড়াই ২০ বছর টানা সার্ভিস দেবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। 


এ উপজেলার নওয়াপাড়া, কালি গাংনী চৌগাছা, ধলা  মাঠের কৃষক জাহিরুল ইসলামসহ অনেক চাষী জানান, প্রতিবার সেচ দিতে বিঘা প্রতি ৪ থেকে ৫ লিটার ডিজেল কিনতে হতো। ৫লিটার ডিজেলের বাজার মূল্য সাড়ে ৪শ টাকা।কিন্তু এখন সোলার ইরিগেশন পাম্পের কারণে মাত্র ৩শ’ টাকায় এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে পারছেন তিনি।


ধলা  গ্রামের কৃষক গাফারুল ইসলাম  জানান, সেচের জন্য এখন আর বিদ্যুৎ ও ডিজেলের আশায় বসে থাকতে হয় না।শুধু রোদেলা দিন হলেই মাঠ ভেজাতে পারি।মাত্র ২০ মিনিটেই এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে পারছি।তিনি আরো বলেন,মেশিন দিয়ে সেচ দিলে  বিঘা প্রতি ৪ শত টাকার তেল লাগতো,মেশিন ভাড়া দিতে হতো ৩শত টাকা মোট ৭শ টাকা লাগতো।এখন মাত্র ৩শত টাকায় সেচ দিতে পারছেন।    



অধিকাংশ চাষীই এখন সোলার ইরিগেশন পাম্পের ওপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। তবে খুচরা ডিজেল বিক্রেতারা পড়ে গেছেন বিপাকে।কারণ,আগের মতো কৃষি কাজের জন্য ডিজেল বিক্রি হয় না। 


ধলার মাঠ সংলগ্ন খুচরা ডিজেল বিক্রেতা হাফিজুল ইসলাম জানান,‘বোরো মৌসুমে প্রতিদিন ৫শ’ থেকে ৭শ’ লিটার ডিজেল বিক্রি হতো ,কিন্তু সোলার এসে প্রতিদিন দুইশ লিটার তেলও বিক্রি হয় না। একই কথা জানালেন চাদপুর গ্রামের ডিজেল বিক্রেতা।


মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা স্বপন কুমার খাঁ জানান,কৃষি উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন তথ্য প্রযুক্তির সমন্বিত ব্যবহার করে কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে হবে।সেকেলে আর মান্ধাতার আমলের কৃষি উৎপাদন পদ্ধতির বদলে আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।সৌরবিদ্যুৎ চালিত সোলার সেচ পাম্প আমাদের কৃষি ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে।





Post a Comment

Previous Post Next Post