মেহেরপুরে আগাম কপি চাষ করে স্বাবলম্বি চাষী

Meherpur_Cabeg_Picture_-1[1] Cabbege-Picture-2[1]
স্টাফরিপোটার: মেহেরপুরে আগাম কপি চাষ করে অনেক চাষী সাবলম্বি হয়েছে। আগাম কপি চাষ করে শত শত বেকার যুবক তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে আগাম কপি চাষ। কিন্তু চলতি মৌসূমে কপির লিফ বাইট বা পাতা ঝলসানো রোগ দেখা দেওয়ায় কিছু কিছু চাষি ক্ষতির শিকার হচ্ছে বলে কৃষকরা জানান।
মেহেরপুর জেলার কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় আগাম কপি চাষ করছে। বিশেষ করে জেলার সাহার বাটি গ্রামে ব্যাপক হারে এ কপি চাষ দেখা যাচ্ছে। এক সময় সাহারবাটির বালুময় জমিতে ধান-পাট ছাড়া অন্য ফসলের চাষ তেমন একটা হতো না। বিশ বছর আগে এ গ্রামে কপি চাষ শুরু হয়। লাভজনক আবাদ হিসেবে কপি চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠে এলাকার কৃষকেরা। এরপর ৫/৬ বছর আগে থেকে এ এলাকার চাষিরা আগাম কপি চাষের দিকে ঝুকেছে। নিজের অভিজ্ঞতায় চাষিরা এ চাষ শুরু করে। আগাম কপি চাষ সাহার বাটি গ্রাম পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে জেলার বিভিন্ন গ্রামে। এ চাষের মাধ্যমে কৃষকেরা বেশ লাভবানও হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত কপি জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানি ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র মতে এ বছর জেলায় আগাম বাঁধা কপি ও ফুল কপির চাষ হয়েছে প্রায় ১৭শ হেক্টর জমিতে । আগাম কপি চাষী সোহেল জানান, তিনি এবার ২০ বিঘা জমিতে আগাম কপির চাষ করেছেন। এ চাষে তার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। বিঘা প্রতি জমিতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে।

একই এলাকার কপি চাষি তুহিন আলী বলেন, এখানকার কৃষকেরা নিজস্ব চিন্তা ধারায় আগাম কপি চাষ করছে। কৃষি বিভাগের লোকেরা এ কপি চাষের কোন খোঁজ খবর রাখে না। কৃষি বিভাগের পরামর্শ পেলে এ চাষে আরও উন্নতি ঘটানো যেত। জেলার আগাম কপি ঢাকা, চট্টগ্রাম,বরিশাল ও সিলেটসহ দেশের বড় বড় জেলায় সরবরাহ করা হয়। বাজারে আগাম কপির চাহিদাও ভাল। আগাম কপি তোলার পর সে জমিতে আলুসহ অন্যন্য ফসলের চাষ করা যায়। সদর উপজেলার আগাম কপি চাষি রহিদুল জানান, চলতি মৌসূমে কপির জমিতে পাতা কুকড়ে পচে যাচ্ছ। কীটনাশক প্রয়াগ করে প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে । দিন মজুর ইব্রাহিম বলেন, আগাম কপি চাষের কারণে তাদের বাড়তি আয়ের একটা সুযোগ হচ্ছে। এ সময় সাধারণত কাজ থাকে কম। আগাম কপি চাষ করার ফলে তারা এখন ঐ সব কপির ক্ষেতে দু’বেলা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে।

মেহেরপুরে আগাম কপি চাষ করে স্বাবলম্বি চাষী

মেহেরপুর সদর উপজেলা জেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসরিন বলেন, এবার মেহেরপুর সদর উপজেলার চাষিরা অধিক আগ্রহী হয়ে প্রায় ৩শ হেক্টর জমিতে কপি আবাদ করেছেন। অধিক লাভ পেয়ে খুশি হয়েছেন তারা । কপি সাধারনত একটি শীতকালিন সবজি। ঝুঁকি থাকা সত্বেও অনেকেই আগাম কপি চাষ করছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও খরা এ চাষের বড় অন্তরায়। চাষিরা ঝুঁকি নিয়ে আগাম কপি চাষ করে লাভবানও হচ্ছে। কপি, চাষ করে একই জমিতে আলুর চাষ করতে পারছে চাষীরা। এতে জমির ব্যবহার বাড়ছে, লাভবানও হচ্ছে। তিনি পাতা ঝলসানো রোগকে কোন রোগ মনে করেন না। অতিরিক্ত খরার কারনে কপির জমিতে লিফ বাইট বা পাতা ঝলসানো রোগ দেখা দিলে ছত্রাক নাশক ঔষধ প্রয়োগ করলে এ রোগ থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। আগাম কপিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ডক্টর স্বপন কুমার জানান, চাষীরা আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করছে। মেহেরপুরের কৃষকদের এমন আবাদ দেখে পার্শ্ববর্তী জেলার কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছ্ ে। কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে বলে তিনি মনে করেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post