ইউরোপের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে

পৃথিবীজুড়ে টিকা কার্যক্রম চললেও সংক্রমণ ও মৃত্যু থামছেই নার মৃত্যু হয়েছে

Kbdnew ডেস্ক: ইউরোপের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। যথেষ্ট পদক্ষেপ না নিলে এ শীতে মারা যাবে আরো ৫ লাখ মানুষ। বর্তমানে ইউরোপের করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে মহাদেশটির কয়েকটি দেশ পুনরায় বিধিনিষেধ পুনর্বহাল করেছে, আবার অনেকগুলো দেশ নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপের দিন তারিখ নির্ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং টিকা কার্যক্রম অব্যাহতভাবে শক্তিশালী করার জন্য আহ্বান জানায় দেশগুলোকে।

এদিকে গত শুক্রবার ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (ইসিডিসি) জানায়, ইউরোপজুড়ে করোনা সংক্রমণের বর্তমান হার, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বর্তমান সময়ে অনেক বেশি। ইউরোপজুড়ে অক্টোবর মাস থেকে করোনা সংক্রামণ বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। চলতি বছর নভেম্বর মাসের ২ থেকে ৮ তারিখে মোট সাত দিনে সমগ্র ইউরোপে রেকর্ড ২১ লাখ ২৫ হাজার ৭৭৫ জন মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু গত ২০২০ সালের একই সময়ে ইউরোপে মোট আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৫০৭ জন মানুষ। একই সময়ে চলতি বছর এক সপ্তাহে গত বছরের তুলনায় ১ রাখ ৩৭ হাজার ২৬৮ জন মানুষ ইউরোপজুড়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (ইসিডিসি) যৌথ সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছে।
পৃথিবীজুড়ে টিকা কার্যক্রম চললেও সংক্রমণ ও মৃত্যু থামছেই নার মৃত্যু হয়েছেসর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ইউরোপের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা ব্রিটেন, জার্মানি, রাশিয়া, তুরস্ক ও ইউক্রেনের করোনা পরিস্থিতি ৫০ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে গত কয়েক সপ্তাহে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের মধ্যে বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, এস্তোনিয়া, গ্রিস, হাঙ্গেরি ও সস্নোভেনিয়াকে সর্বোচ্চ উদ্বেগজনক তালিকায় রেখেছে ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (ইসিডিসি)। সেই সঙ্গে ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন, অস্ট্রিয়া ও নরওয়ে দেশগুলো আরো কঠিন পদক্ষেপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চলতি নভেম্বরের মাসের গত সপ্তাহে করোনা ভাইরাসে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে ইউরোপজুড়ে। গতবছর একই সময়ে ইউরোপে করোনায় প্রতিদিন গড় মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম ৩ হাজার ৭৮৫ জন। এসব চলমান পরিসংখ্যান চিত্র দেখে চিন্তিত ইউরোপের স্বাস্থ্য ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো।

এদিকে ইউরোপের ক্রমবর্ধিত করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের সরকার কঠোর পদক্ষেপের পক্ষে এগিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার রাশিয়ার সরকার জানিয়েছে, তারা সংসদে দুটি বিল জমা করেছেন, যা রেস্তোরাঁ এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে গ্রিনপাস বাধ্যতামূলক হবে সবার জন্য। অস্ট্রিয়ার সরকার জানিয়েছে, দেশটিতে যারা করোনা টিকা গ্রহণ করেনি বা যাদের গ্রিনপাস নেই, শুধু তাদের জন্য আলাদাভাবে লকডাউনের পদক্ষেপ নেবে সরকার। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মাত্র ৬৫ শতাংশ মানুষ সম্পূর্ণ টিকার আওতায় এসেছে।

যাকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী চ্যান্সেলর আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গ লজ্জাজনক বলেছেন। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে তার দেশের করোনায় বেশি আক্রান্ত শহরগুলোতে সবকিছু বন্ধ করে লকডাউন দিয়েছেন ৩ সপ্তাহের জন্য। সেই সঙ্গে ডেনমার্ক সরকার গুরুত্বপূর্ণ সব ক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য গ্রিনপাস বাধ্যতামূলক নীতি ফিরিয়ে এনেছেন শুক্রবার থেকে। নরওয়ের নতুন প্রধানমন্ত্রী জোনাস গহর স্টোর দেশটির বেশি আক্রান্ত পৌরসভাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে গ্রিনপাস বাধ্যতামূলক নীতি গ্রহণ করেছেন, যা আজ মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হচ্ছে।
ইউরোপের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে
এদিকে ইতালি ১ ডিসেম্বর থেকে ৪০ ঊর্ধ্ব বয়স্কদের জন্য বুস্টার ডোজ চালু করছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ড. ইমানুয়েল মাঁখো বলেন, ১৫ ডিসেম্বর থেকে বুস্টার ডোজ গ্রহণ করলেই কেবল ৬৫ বছরের অধিক বয়স্কদের গ্রিনপাস বৈধ থাকবে, নয়তো তা বাতিল বলে গণ্য হবে। জার্মানিতে নতুন সরকার গঠনের জটিলতায় কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে দেশটির করোনা পরিস্থিতি জটিল রূপ ধারণ করেছে। ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল ও ফ্রান্স ভালোকরে টিকা কর্মসূচি হাতে নেয়ার পরও স্বস্তিতে নেই দেশগুলোর সরকার। দেশগুলোর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল ( ইসিডিসি) চলতি শীত মৌসুমে ইউরোপের দেশগুলোকে কঠোরভাবে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও টিকা কর্মসূচি জোরদারের কথা বলেছে। অন্যথায় ইউরোপে ৫ লক্ষাধিক মানুষে নতুন করে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কার কথা বলে সতর্কতা জারি করেছেন।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post